সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

ফেসবুকে ঘটকালি

ইকবাল খন্দকার

ফেসবুকে ঘটকালি

► আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ভাবি বললেন- কী একটা অবস্থা বলেন তো! আমার ছোট বোন এতদিন ধরে ফেসবুক চালায়, অথচ তার বিয়ে হলো না। এদিকে বিয়ে হয়ে গেল এমন একজনের, যার কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্টই নেই। আমি বললাম- আসলেই খুব বাজে অবস্থা। আজকাল যেখানে পাত্রী দেখা হয় ফেসবুকে, পছন্দ-অপছন্দ করা হয় ফেসবুকে, সেখানে আপনার ছোট বোনের বিয়ে তো আটকে থাকার কোনো সুযোগই দেখি না। অথচ আটকে আছে। এটা কোনো কথা? আচ্ছা, ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট না থাকা সত্ত্বেও যে একজনের বিয়ে হয়ে গেছে, তার নাম-পরিচয়টা একটু বলা যাবে? তার সঙ্গে একটু কথা বলা দরকার। ভাবি বললেন- কথা বলে আর কী হবে। সবই কপাল। নইলে সে কেন তার ছবি ব্যবহার করতে যাবে?

আমি জানতে চাইলাম- কে কার ছবি ব্যবহার করলো? ভাবি বললেন- না মানে হয়েছে কী, আমার বোনটা একটু বেশি চালাক তো! সে অতি চালাকি করতে গিয়ে ফেসবুক প্রোফাইলে নিজের ছবি রাখেনি। রেখেছিল তার এক বান্ধবীর ছবি। তারপর সেই ছবির সূত্র ধরে বরপক্ষ পাত্রী পছন্দ করেছে। অর্থাৎ ছবি যার, বিবাহ তার। আমার এক ছোট ভাই বললো- আমার বাবা-মা সব সময় আমাকে ফেসবুক থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে। অথচ ফেসবুক আছে বলেই তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে। আজ ফেসবুক না থাকলে ডায়াবেটিসের যন্ত্রণায় তাদের হাসপাতালে থাকতে হতো। আমি বললাম- তোর কথার আগামাথা কিছু বুঝতে পারলাম না। ফেসবুকের সঙ্গে ডায়াবেটিসের কী সম্পর্ক? ছোটভাই বললো- সম্পর্ক তো একটা আছেই ভাই। আমার বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে। তাই আমার বাবা-মা উঠেপড়ে লেগেছে আমাকে বিয়ে করানোর জন্য। তো তারা কদিন এই এলাকায়, সেই এলাকায়, অমুকের বাড়িতে, তমুকের বাড়িতে পাত্রী দেখেছিল। আর পাত্রী দেখতে গেলেই যেহেতু মিষ্টি খেতে হতো, তাই তাদের ডায়াবেটিস চলে গিয়েছিল আশঙ্কাজনক পর্যায়ে। ঠিক তখন থেকেই শুরু করলাম ফেসবুকে পাত্রী দেখা।

প্রথমে আমি দেখি, তারপর দেখে বাবা-মা। ফেসবুকে পাত্রী দেখার মধ্যে মিষ্টি খাওয়া-খাওয়ির কোনো কারবার নেই। অতএব ডায়াবেটিস নিয়েও কোনো টেনশন নেই। আমার এক প্রতিবেশী বললেন- এলাকায় ঝগড়াঝাটি তো দেখা যাচ্ছে বেড়েই চলেছে। একটু আগে দেখলাম এলাকার ঘটক তার দলবল নিয়ে এসে আমার বাসার নিচের অফিসের লোকটাকে শাসিয়ে গেল। যা বুঝলাম, এটা নিয়ে পরবর্তীতে আবার ঝগড়াঝাটি হতে পারে। আমি বললাম- ঝগড়াঝাটি খুব খারাপ জিনিস। তা আপনার বাসার নিচে কীসের অফিস? প্রতিবেশী বললেন- ইন্টারনেটের। মানে ব্রডব্যান্ডের। এবার আমি জানতে চাইলাম- ইন্টারনেটের অফিসের লোকজনের সঙ্গে ঘটকের কী ঝামেলা থাকতে পারে?

প্রতিবেশী বললেন- ভাইরে, বিরাট ঝামেলা। সবাই ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছে বলে নাকি সবাই ফেসবুকে পাত্রী দেখছে আর ঘটকের ব্যবসার বারোটা বাজছে। এ জন্য সে ইন্টারনেট অফিসে এসে এই মর্মে শাসিয়ে গেছে, মাঝেমধ্যে ইন্টারনেটের স্পিড কমিয়ে দিতে হবে। যাতে পাত্রীর ছবিতে ক্লিক করলেও দেখা না যায়। শুধু ‘লোডিং’ ‘লোডিং’ লেখা ওঠে। ঘটক এটাও বলে গেছে, যদি ইন্টারনেটের স্পিড কমানো না হয়, তাহলে নাকি সে নিজে সব ক্যাবল কেটে দেবে। কী একটা মুসিবত বলেন তো দেখি! আমার এক ছোটভাই বললো- ফেসবুকে পাত্রী দেখে আসলে শান্তি নেই। কারণ প্রায়ই বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। কোনটা যে পাত্রী আর কোনটা যে পাত্রীর আত্মীয়স্বজন, বোঝা দুষ্কর হয়ে যায়। আমি জানতে চাইলাম সে এই ধরনের বিভ্রান্তিতে পড়েছিল কিনা। ছোটভাই বললো- পড়েছি মানে! অনেকবার পড়েছি। এই তো গতকালও পাত্রী মনে করে পাত্রীর খালার ছবিতে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে ফেললাম! বলেন, কাজটা কী ঠিক হলো?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর