সোমবার, ৭ আগস্ট, ২০২৩ ০০:০০ টা

ভাইরাল সিজন

ইকবাল খন্দকার

ভাইরাল সিজন

> আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ > কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক প্রতিবেশীকে বিল্ডিংয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলাম, এখানে কী করেন? প্রতিবেশী আমতা আমতা করে বললেন, না, তেমন কিছু না। আমি তার কথার ধরন দেখে ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না। আরেকটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম, ভাই সাহেব, এখন ডেঙ্গুর সময়। দেখবেন মশা কামড়িয়ে নগদে ডেঙ্গু বাধিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে এখন আমি ডেঙ্গুর চিন্তা করছি না। কারণ আমার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছে। যদি চিন্তাটা বাস্তবায়ন করতে পারি, তাহলে রাতারাতি স্টার হয়ে যাবো। আমি অবাক হয়ে বললাম, আপনি আপনার কোন চিন্তাটা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন, যদি একটু বলতেন। প্রতিবেশী বললেন, না, মানে বিল্ডিংয়ের সবাই তো লিফট দিয়ে ওঠানামা করে। কেউ কেউ ব্যবহার করে সিঁড়ি। তো লিফট বলেন আর সিঁড়িই বলেন, এইগুলো হচ্ছে কমন জিনিস। এইগুলো ব্যবহার করে ভাইরাল হওয়া যায় না। যে কারণে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি ওঠানামা করব পাইপ বেয়ে। দুই-চার দিন যদি পাইপ বেয়ে ওঠানামা করতে পারি, আর সেই দৃশ্য যদি ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দিতে পারি, তাহলে ভাইরাল হওয়া ঠেকায় কে? এখন আপনি একটু বলেন তো, কোন পাইপ বেয়ে ওঠানামা করলে ভালো হয়? বাথরুমের পাইপ নাকি পানির পাইপ? আমি বললাম, এই প্রশ্নটা আমাকে না করে আপনি বরং ফেসবুকে কুইজের আয়োজন করেন। মানে ভোটাভুটি আরকি। যদি বাথরুমের পাইপের পক্ষে বেশি ভোট পড়ে, তাহলে বাথরুমের পাইপ বেয়ে ওঠানামা করবেন। নয়তো পানির পাইপ।

আমার এক ছোটভাই বললো, মানুষ মাত্রই ভুল। সে কখনো জেনে ভুল করে, কখনো না জেনে। ছোটবেলায় আমি যে ভুলটা করেছিলাম, সেটা কিন্তু না জেনে। যদি সেই ভুল শোধরানোর সুযোগ থাকতো, তাহলে অবশ্যই শুধরে নিতাম। আমি বললাম, সব ঠিক আছে। কিন্তু তুই ভুলটা কী করেছিলি, সেটাই তো জানতে পারলাম না। একটু বল তো শুনি! ছোট ভাই বললো, ভুলটা করেছিলাম ক্লাস থ্রিতে থাকতে। ক্লাসরুমে স্যার জিজ্ঞেস করলেন তোমরা বড় হয়ে কী হতে চাও? সবার দেখাদেখি আমিও বলে দিলাম বড় হয়ে আমি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা পাইলট হতে চাই। আমি বললাম, ঠিকই তো আছে। এখানে ভুলের কী দেখলি? ছোটভাই বললো, এখানে পুরাটাই ভুল ভাই। কেন আমি বললাম না বড় হয়ে ভাইরাল হতে চাই?

আমার এক ভাবি বললেন, আপনার ভাইকে নিয়ে আর পারি না। সে প্রতিদিন সন্ধ্যায় বের হয় ব্যায়াম করার জন্য। আমি বললাম, এটা তো খুবই ভালো অভ্যাস। ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে আপনি জানেন না? ভাবি বললেন, তা তো জানিই। কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না, সামাজিক ইমেজ বলেও একটা বিষয় আছে। আপনার ভাইয়ের জন্য আমাদের ইমেজ বলে কিছু থাকছে না। আমি বললাম, এটা আপনি কী বলছেন? ব্যায়াম করলে ইমেজ কেন নষ্ট হবে? ভাবি বললেন, কেন নষ্ট হবে না বলেন! ব্যায়াম করার জন্য তো আলাদা পোশাক আছে, আছে না? অথচ সে কী পরে জানেন? চানাচুরওয়ালারা যেই ধরনের রংচঙা পোশাক পরে, সেই ধরনের পোশাক। এই জন্য অনেকে আপনার ভাইকে চানাচুরওয়ালা বলে ভুল করে। এতে আমরা ইমেজ সংকটে পড়ে যাচ্ছি। আমি এবার ভাইকে ফোন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম, ব্যায়ামের নরমাল পোশাক না পরে কেন তিনি চানাচুরওয়ালার পোশাক পরেন। ভাই বললেন, দেখ, পাড়ার অনেকেই ব্যায়াম করতে বের হয়। সবার সেই একই পোশাক, ট্রাউজার আর টি-শার্ট। আমি চিন্তা করে দেখলাম, এই কমন পোশাক পরলে মানুষের চোখে পড়া যাবে না। আর চোখে না পড়লে কেউ ভিডিও করবে না, ভাইরাল হওয়াও যাবে না। তাই একটু আনকমন পোশাক পরছি আরকি। আশা করছি খুব শিগগিরই ভাইরাল হয়ে যাব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর