আমার এক বড় ভাই বললেন, সংসারে ভালোই টানাটানি চলছে রে। টানাটানির চোটে হাতের রগ ছিঁড়ে যাওয়ার দশা। শরীরের বিভিন্ন স্থানের হাড্ডির জোড়া খুলে যাওয়ার অবস্থা। কী যে করি! আমি বললাম, সবার সংসারেই কম বেশি টানাটানি চলছে। যেহেতু জিনিসপত্রের দাম প্রচুর। কিন্তু এই টানাটানির জন্য তো কারও শরীরের হাড্ডির জোড়া খুলে যাওয়ার দশা হওয়ার কথা নয়! অথবা হাতের রগ ছিঁড়ে যাওয়ার দশা হওয়ার কথা নয়! আরে, এই টানাটানি তো অদৃশ্য টানাটানি। যা চোখে দেখা যায় না। শুধু অনুধাবন করা যায়। বড় ভাই বললেন, তুই আসল ব্যাপারটা ধরতে পারিসনি। জিনিসপত্রের অধিক দামের প্রভাবে সবার সংসারে যে টানাটানিটা চলছে, আমার সংসারের টানাটানি ওইসব টানাটানি থেকে একেবারেই আলাদা। আমি জানতে চাইলাম, কী রকম আলাদা? বড় ভাই বললেন, তোর ভাবি ইলিশ আনতে বললে আমি নিয়ে চলে আসি পুঁটি মাছ। গরুর মাংস আনতে বললে নিয়ে চলে আসি ফার্মের মুরগি। এতে সে ভীষণ ক্ষিপ্ত। আর ক্ষিপ্ত হয়েই যখন তখন বাপের বাড়ি চলে যেতে চায়। ঠিক তখনই শুরু করতে হয় টানাটানি। আমি তার হাত ধরে টানি ঘরের দিকে, আর সে টানে বাইরের দিকে। এহেন টানাটানিতে সত্যিই আমার হাতের গুঁড়া রগ অলরেডি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।
আমার এক বন্ধু বলল, এখন আয়-রোজগার এত কমেছে আর জিনিসপত্রের দাম এত বেড়েছে যে, যারাই বাজারে ঢুকছে, তারা স্থির থাকতে পারছে না। বাজারে ঢুকলেই টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে, তাই দ্রুত বের হয়ে যাচ্ছে। এই অস্থিরতা বেচাবিক্রির জন্য ক্ষতিকর বিধায় আমার পরিচিত এক দোকানদার টানাটানির ব্যবস্থা রেখেছে। কী ধরনের টানাটানি জানিস? দোকানে কাস্টমার ঢুকলে যাতে দাম শুনেই বের হওয়ার জন্য দৌড় মারতে না পারে বা অন্য দোকানে চলে যাওয়ার জন্য অপচেষ্টা চালাতে না পারে, তাই পালোয়ান টাইপের একটা লোক নিয়োগ দিয়েছে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বিষয়টাকে টানাটানি বলব না সংকট বলব, ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে যা-ই বলি না কেন, এটাই সত্য যে, আমি ভালো নেই। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতেই হবে। নইলে দমবন্ধ হয়ে মারা যেতে হবে। আরে বাপুরে একটা বাসার ভিতরে এত লোক, এভাবে থাকা যায় নাকি! আমি বললাম, কী হয়েছে একটু খুলে বলেন। খুলে না বললে তো বুঝতে পারছি না। প্রতিবেশী বললেন, আমার শ্বশুরের নাকি হঠাৎ মনে হয়েছে আত্মীয়তার সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত হওয়া উচিত। আত্মীয়দের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকা উচিত না। এ জন্য সে করছে কী, ছেলে, ছেলের বউ, নাতি-পুতি সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। আর আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যাচ্ছে। থাকছে, খাচ্ছেদাচ্ছে, ঘুমাচ্ছে। আমি বললাম, আরে এটা কোনো ব্যাপার না। দুয়েকদিন হয়তো থাকবে, তারপর অন্য কোনো আত্মীয়র বাড়িতে চলে যাবে। প্রতিবেশী বললেন, নারে ভাই, ঘটনা এমন নয়। দলেবলে আমার বাড়িতে এসেছে এক সপ্তাহ প্রায় হয়ে গেছে। আরও কয় সপ্তাহ থাকে, কোনো ঠিক নেই। আমি বললাম, আপনার বাড়িতে এতদিন থাকার কারণ কী? আত্মীয়-স্বজন তো আরও আছে। তাদের বাড়িতেও যাক। প্রতিবেশী বললেন, উনি নাকি দেখেছেন আমার মধ্যে একটা অস্থিরতা আছে। এ জন্য আমার বাড়িতে বেশি সময় দিতে চাচ্ছেন। যাতে অস্থিরতা কেটে যায়, আত্মীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় হয়। আমি বললাম, আপনার মধ্যে অস্থিরতাটা কীসের? কেন? প্রতিবেশী বললেন, ভাইরে, এক একটা ডিমের দাম কত খোঁজ নিয়েছেন? আমি খোঁজ নিয়েছি। তাহলে আমার মধ্যে অস্থিরতা থাকবে না তো বিল গেটসের মধ্যে অস্থিরতা থাকবে?