শিরোনাম
সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

পেনাল্টিময় জীবন

ইকবাল খন্দকার

পেনাল্টিময় জীবন

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আমার একটা সমস্যা আছে। সেটা হচ্ছে, চায়ের সঙ্গে ম্যালা চিনি খাই। আর এই অপরাধে খাই ঝাড়ি। প্রথম প্রথম বউয়ের ঝাড়ি খেতাম। এখন এই ঝাড়ির সঙ্গে যোগ হয়েছে ডাক্তারের ঝাড়ি। আর ডাক্তারের ঝাড়ি কিন্তু বউয়ের ঝাড়ির মতো হালকা ঝাড়ি না। বেশ শক্ত এবং কঠিন ঝাড়ি। এই ঝাড়িতে আমি রীতিমতো আতঙ্কিত। যে কারণে চা খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছি। বুঝতেই পারছেন, চা খেলে যেহেতু বেশি চিনি ছাড়া খেতে পারি না, অতএব চা খাওয়া ছেড়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। মানে মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলে দেওয়ার মতো ব্যাপার আর কি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ফুটবল খেলা দেখতে বসলেই আমার চায়ের কথা মনে পড়ে। যত ভুলে থাকার চেষ্টা করি না কেন, মনে পড়ে। কারণ, এই খেলায় এমন একটা শব্দ বারবার উচ্চারিত হয়, যে শব্দে ‘চা’ আছে। পেনাল-টি। গ্রিন টি, তেঁতুল টি। আপনিই বলেন, বারবার চায়ের কথা শুনলে খাওয়ার ইচ্ছা না হয়ে পারে? আমি ঢোক গিলে বললাম, কথা আপনি ঠিক বলেছেন। এই দেখেন, আপনার মুখে ‘টি’ এর কথা শুনে আমারও চা খেতে ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য, পেনাল্টি জিনিসটাকে যতই টি তথা চায়ের মতো লাগুক না কেন, সেটা আপনি চুমুক দিয়ে খেয়ে ফেলতে পারবেন না। কারণ, এটা খাওয়ার জিনিস না। দেখার জিনিস। যে কারণে আমরা সেটা টিভির সামনে বসে দেখি। তবে যতই টিভির সামনে বসে দেখি না কেন, বাস্তব জীবনেও কিন্তু এর প্রভাব আছে। যেমন ধরেন ফুটবল মাঠের নির্দিষ্ট দাগের ভিতরে কেউ যদি হাত দিয়ে বল ধরে বা কারও হাতে যদি বল লাগে, তাহলে পেনাল্টি দিয়ে দেওয়া হয়। এদিকে সংসার জীবনেও এমন একটা বিধান চালু আছে। যেমন ধরেন, আপনার ভাবির আলমারিতে আমার হাত দেওয়া নিষেধ। ওই আলমারিতে বেশ টাকা-পয়সা থাকে তো! এদিকে আমার আলমারিতে সবসময়ই খরা লেগে থাকে। যে কারণে আপনার ভাবির আলমারিতে হাত দেওয়া নিষেধ হলেও আমি মাঝেমধ্যে মনের অজান্তেই হাত দিয়ে ফেলি। আর তখন আমার ভাগ্যে পেনাল্টি জোটে। কীভাবে জোটে জানেন? লজ্জার কথা, কী আর বলবো। তবু বলি। সে হাতের কাছে যা পায়, তা দিয়েই আমার হাতে বাড়ি মারে। ফুটবলের পেনাল্টি তাও তো ফুটবলে লাথি মারার মধ্য দিয়ে সমাধা হয়, বাস্তব জীবনের পেনাল্টি সমাধা হয় হাতে বাড়ি মারার মধ্য দিয়ে। কী একটা অবস্থা!

প্রতিবেশী বললেন, আসলে পেনাল্টি জিনিসটা সুবিধার জিনিস না। কারণ এই ধরনের নিয়মকানুন চালু থাকার কারণে প্রতিপক্ষ অনেক ক্ষেত্রেই সুযোগ নেয়। যেমন আমার নিচতলায় যে ভদ্রলোক থাকে, যে কিছু একটা হলেই অদ্ভুত একটা আচরণ করে। যে আচরণের সঙ্গে রেফারির আচরণ মিলে যায়। তাও মাথাগরম রেফারি। আমি জানতে চাইলাম, কী করে বলেন তো! প্রতিবেশী বললেন, মনে করেন আমার বউ রেগে গিয়ে কিছু একটা ছুড়ে মারলো। মারতেই পারে। এটা বড় কোনো ঘটনা না। তো কিছু একটা ছুড়ে মারলে হালকা আওয়াজ হবে না? এই আওয়াজটাও সহ্য করতে পারে না নিচতলার ভদ্রলোক। যে কোত্থেকে জানি একটা বাঁশি পেয়েছে, হতে পারে তার ফ্যামিলিতে কেউ নাইটগার্ডের চাকরি করতো; ব্যস, বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাঁশিতে ফুঁ মারে। এর অর্থ হচ্ছে, আমার বউ ফাউল করেছে। আর বাঁশিটা হচ্ছে পেনাল্টির বাঁশি। বলেন তো, কোনো মানে হয়? আমি বললাম, তাহলে তো বাস্তবজীবনে পেনাল্টি জিনিসটা ভালোই প্রভাব ফেলছে। আচ্ছা, এটা কি ফুটবল খেলা থেকে তুলে দেওয়া যায় না? প্রতিবেশী বললেন, ফুটবল খেলা থেকে তুলে দিলেও বাস্তবজীবনে হয়তো থেকেই যাবে। নইলে আমার বাসার নিচের মুদি দোকানদার কেন বলবে এক মাসের বকেয়া আরেক মাসে দিলে নাকি শ’ প্রতি ১০ টাকা পেনাল্টি। ফুটবল খেলা না হয় বাদ দিলাম, মুদি দোকান বাদ দেই ক্যামনে?

সর্বশেষ খবর