শিরোনাম
সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

লঙ্কাকাণ্ড

ছয় মাস পর যোগাযোগ করলে এই ছয় মাসে যে কাঁচা মরিচের কেজি কয়েক হাজার টাকা হয়ে যাবে, সেটা কি বিবেচনায় আছে?

ইকবাল খন্দকার

লঙ্কাকাণ্ড

কার্টুন : কাওছার মাহমুদ ► ডায়ালগ : তানভীর

আমার এক বড় ভাই বললেন, আমির খান, সালমান খানরা যা পারেনি, কাঁচা মরিচ কিন্তু তা করে দেখাচ্ছে। বিষয়টা আশ্চর্যজনক। আমি বললাম, কাঁচা মরিচের সঙ্গে আমির খান, সালমান খানের নাম আসছে কেন? তারা কাঁচা মরিচের ব্যবসা করে নাকি? বড় ভাই বললেন, বোকার মতো কথা বলিস না তো! কী বলছি, বোঝার চেষ্টা কর। আমি বোঝার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থও হলাম। তাই বড় ভাইকেই অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। তিনি বললেন, আমির খানের কিন্তু বাজার শেষ। পরপর কয়েকটা সিনেমা ফ্লপ হওয়ার পর সে মোটামুটি সিনেমা করা ছেড়েই দিয়েছে। সালমান খানেরও তেমন কোনো আওয়াজ নেই। তার মানে তাদের যে বিশাল তারকাখ্যাতি ছিল, সেই খ্যাতিতে ধস নেমেছে। অথচ কাঁচা মরিচের ব্যাপারটা খেয়াল কর। বছরের পর বছর এই কাঁচা মরিচ তারকাখ্যাতি ধরে রেখেছে। মাঝে মাঝে তো অবস্থা এমন হয়, তারকা থেকে মহাতারকা বনে যায়। আমি বললাম, আপনার হয়তো জানা আছে, শাহরুখ খানের তিনটা সিনেমা পরপর হিট হয়েছে। তাহলে কি কাঁচা মরিচকে শাহরুখ খানের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? বড় ভাই মাথা নাড়লেন। তবে এই মাথা নাড়ার অর্থ ‘ইয়েস’ নাকি ‘নো’, সেটা ঠিক বোঝা যায়নি। আমি আমার কাজে চলে গেলাম। এর ঘণ্টাখানেক পর ঘটনাচক্রে আবার দেখা বড় ভাইয়ের সঙ্গে। আর তিনি ঘুরেফিরে সেই কাঁচা মরিচের কথাই উত্থাপন করলেন। বললেন, আমি মনে করি গুজবের এই যুগে একটা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া ছাড়া কাঁচা মরিচের দাম কমানোর আর কোনো উপায় নেই। গুজবটা ছড়াতেই হবে। দরকার হলে ফেসবুকে গুজবের একটা গ্রুপ খুলতে হবে। আমি বললাম, এমন কী গুজব আছে, যেটা ছড়ালে কাঁচা মরিচের দাম কমতে পারে? বড় ভাই বললেন, শুধু বলতে হবে, বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী অমুক রবার্ট তমুকের এক গবেষণায় বের হয়ে এসেছে, কাঁচা মরিচ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মঙ্গল। যদি বাসায় বা বাসার ফ্রিজে কাঁচা মরিচ থাকে তাহলে দুশ্চিন্তা, দামি জিনিস এভাবে ঘরে রাখা কতটা নিরাপদ? এমনকি বাজারের ব্যাগে কাঁচামরিচ থাকলেও একই সমস্যা হতে পারে। একই সমস্যা হতে পারে বাজারে গিয়ে কাঁচা মরিচের দোকানের সামনে দিয়ে হাঁটাচলা করলেও। আমি বললাম, এত এত গুজব ছড়ানো কি সম্ভব? বড় ভাই বললেন, যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কী আর করবি? যা, বাজারে গিয়ে হাজার টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনে নিয়ে আয়। আমি বুঝলাম, বড় ভাই অভিমান করেছেন। তাই আর কিছু বলার সাহস পেলাম না। তারপর অল্পক্ষণের একটা বিরতি দিয়ে বললাম, গুজব ছড়ানো ছাড়া কাঁচা মরিচের দাম কমানোর কি আর কোনো উপায় নেই? বড় ভাই বললেন, কেন থাকবে না? অবশ্যই উপায় আছে। যদি খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দিস। আমি বললাম, এটা কি একটা উপায় হলো? খাওয়াদাওয়া বন্ধ করলে মানুষ বাঁচে? এই রকম আজগুবি উপায় না বলে স্বাভাবিক কোনো উপায় বলেন। বড় ভাই বললেন, ঠিক আছে, আমি চিন্তা করে দেখি। তুই ছয় মাস পর আমার সঙ্গে যোগাযোগ করিস। আমি বললাম, ছয় মাস পর যোগাযোগ করলে এই ছয় মাসে যে কাঁচা মরিচের কেজি কয়েক হাজার টাকা হয়ে যাবে, সেটা কি বিবেচনায় আছে? বড় ভাই বললেন, অত বিবেচনা করে পারব না। শুধু এইটা জেনে রাখ, আমার বাসার ফ্রিজে যে পরিমাণ কাঁচা মরিচ আছে, তাতে আগামী ছয় মাস চলবে। অতএব ছয় মাসের মধ্যে কাঁচা মরিচের দাম কমার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।

সর্বশেষ খবর