শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
স্মরণ

বিবিধ মাত্রায় পল্লবিত সৈয়দ শামসুল হক

তুহিন ওয়াদুদ

বিবিধ মাত্রায় পল্লবিত সৈয়দ শামসুল হক

সৈয়দ শামসুল হক চেয়েছিলেন ১১৬ বছরের চেয়ে বেশি দিন বাঁচতে। লালন শাহ বেঁচেছিলেন ১১৬ বছর। তিনি কুড়িগ্রামে এক সম্মাননা অনুষ্ঠানে ১১৬ বছরের চেয়েও বেশি দিন বেঁচে থাকার স্বপ্ন পোষণ করেছিলেন। সৈয়দ শামসুল হক ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ কাব্যনাট্যে লিখেছেন ‘হামার মরণ হয়, মানুষের মরণ হয় না’। ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’ উপন্যাসে তিনি লিখেছেন— ‘মানুষের আশা এবং প্রতীক্ষা মরে না; ভাই প্রাণ ত্যাগ করে, জননী প্রাণ ত্যাগ করে, বোন প্রাণ ত্যাগ করে, সন্তান প্রাণ তাগ করে কিন্তু মানুষ প্রাণ ত্যাগ করে না।’

সামগ্রিক মানুষ বিবেচনায় তার এই মূলায়ন। আমরা যদি বিষয়টিকে ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে লেখকের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি তাহলে এ কথা তার নিজের জন্য অধিক সত্যতা নিয়ে উপস্থিত হয়। বস্তুত সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যে ঋদ্ধতা আনয়ন করেছেন। লেখকের শুধু বেঁচে থাকার প্রশ্নে লেখার মূল্যায়ন করলে বলতে হয়, যা তিনি লিখেছেন তার অনেক কম লিখলেও সাহিত্যে তার অমরত্বের আসনটি স্থায়ী রূপ লাভ করত।

টাইফয়েডে আক্রান্ত সৈয়দ শামসুল হক ১১-১২ বছর বয়সে কবিতার দুটি পদ রচনা করেছিলেন—‘আমার ঘরের জানালার পাশে গাছ রহিয়াছে/ তাহার উপরে একটি লাল টুকটুকে পাখি বসিয়া আছে।’ তারপর থেকে মৃত্যু অবধি তিনি নিরবধি লিখে গেছেন। তিনি যখন ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি তখনো তার সৃষ্টি থেমে থাকেনি। অসুস্থতার মাত্রা যখন তীব্র, যখন আর তার হাতে লিখবার সামর্থ্যও ছিল না, তখনো তিনি সৃষ্টির পথে ছিলেন অনড়। বয়স, অসুস্থতার ধরন, শরীরের ক্রম অবনতি সব কিছুই কবিকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিচ্ছে, তখনো মৃত্যুজনিত চিন্তায় পড়ে তার লেখা বন্ধ রাখেননি। বরং মৃত্যুকে সহজ করে নিয়ে জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত লেখার ভূমিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন।

সৈয়দ শামসুল হক সব্যসাচী লেখক। তার সামগ্রিক সৃষ্টি কিংবদন্তিতুল্য। প্রবাদপ্রতিম লেখকের ভুবন বিস্তৃত পরিসরের। সত্তরের দশকে তিনি লিখেছেন, ‘খেলারাম খেলে যা’। সৈয়দ শামসুল হকের সাহসিকতার নিদর্শন এ উপন্যাস। কেন্দ্রীয় চরিত্র বাবর আলীর মাধ্যমে তিনি মানুষের মনোজগতের এক অমোঘ সত্যকে তুলে নিয়ে এসেছেন। কেউ কেউ এ উপন্যাসকে অস্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত করার চেষ্টা করেন। প্রকৃত সত্য উপস্থাপনে সৈয়দ শামসুল হক নিরাভরণ থেকেছেন বলেই এই অভিযোগ করে থাকেন। কিন্তু বিষয়কে নির্জলা করার জন্য উপন্যাসের এ বিনির্মাণ ছিল জরুরি। ফলে দীর্ঘদিনের সমালোচনার মুখেও বেঁচে আছে ‘খেলারাম খেলে যা’ উপন্যাস।

তার ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ কাব্য নাটকটি মুক্তিযুদ্ধকে অবলম্বন করে এমন এক সৃষ্টি যে, সেটা বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে। এ কাব্য নাটকটি বিষয়গুণে নয়, বিনির্মাণ কৌশলেই শক্তিশালী। সৈয়দ শামসুল হক কত বড় লেখক এক ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ পঠনে তা বোঝার পক্ষে যথেষ্ট। ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ লেখকের আর এক গভীর মেধা-মননের স্বাক্ষর। ইতিহাস থেকে নূরলদীনের মতো বীর হারিয়ে গিয়েছিল। কুড়িগ্রামের সম্মাননা অনুষ্ঠানে সৈয়দ শামসুল হক বিনয় করে বলেছিলেন, তিনি সারা জীবন এমন কোনো কিছুই করতে পারেননি। শুধু ইতিহাসের পাতা থেকে হারিয়ে যাওয়া নূরলদীনকে আবিষ্কার করা ছাড়া। সেই বীরকে কাব্যনাট্যে বীরের মতোই উপস্থাপন করেছন। স্বতন্ত্র ভাষা কাঠামো এবং আঙ্গিক কৌশলে এ শিল্পকর্ম জনপ্রিয়তারও শীর্ষে উঠে গেছে। একনিষ্ঠ ভালোবাসায়, নিবিঢ় পর্যবেক্ষণে, সময়কে তিনি রূপ দিয়েছেন নাটকে। এ কাব্যনাটকে ব্যবহূত ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’ আহ্বানটি সারা দেশের মানুষের যেন জাতীয় স্লোগানে পরিণত হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক মানতেন যে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্ন বংশ পরম্পরায় বেঁচে থাকে। মানুষের আন্দোলন তদ্রূপ। ‘নূরলদীনের সারা জীবন’ নাটকে তিনি লিখেছেন—‘ধৈর্য সবে—ধৈর্য ধরি কর আন্দোলন/ লাগে না লাগুক বাহে এক-দুই-কিংবা কয়েক জীবন।’ নাটক যে শুধু বিনোদন মাত্র নয়, সমাজ পরিবর্তনের অস্ত্রও বটে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে এখানে।

কিন্তু সৈয়দ শামসুল হক একটি-দুটি অনন্য সৃষ্টির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। কীভাবে এতগুলো কালজয়ী গ্রন্থ তিনি লিখেছেন তার উত্তরে তিনি বলেছেন—‘এটা তো অসম্ভব ব্যাপার। আমি লিখে যাচ্ছি। লিখতে আমার ভালো লাগে। আমার আনন্দ হয় এবং আমি আমার কথাটিকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাঠকের কাছে বা শ্রোতার কাছে বিশেষ আঙ্গিক আমি অনুসরণ করে থাকি। যার ফলে হয়তো একটা বৈচিত্র্য পাওয়া যায়। আর আমি সব সময় চেষ্টা করি নিজের থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। মানে এটা আত্মউত্তরণ। আজ যা লিখেছি, কাল মনে হয় এটা ঠিক হয়নি। আমি চেষ্টা করি আরও কিছুটা নতুন করার জন্য। সারা জীবনে আমার পেছনের লেখা আমি খুব কম পড়েছি। আমি ভুলে যেতে চাই। হয়নি কিছুই। আবার শুরু করি। যখনই লিখতে শুরু করি মনে হয় এই প্রথম। হয়তো এ জন্যই এমনটি হচ্ছে, যেমনটি তুমি বললে। কিংবা তুমি ভালোবাসা বলে একটু বাড়িয়ে বলছ। আমারও অনেক পতন আছে, দুর্বলতা আছে কোনো লেখকই তার সেরা লেখা লিখে যেতে পারেন না।’ (কুড়িগ্রামে সৈয়দ শামসুল হকের শেষ সাক্ষাৎকার, কালের কণ্ঠ)

মুক্তিযুদ্ধ তার উপন্যাসে বার বার চিত্রিত হয়েছে। ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘নীল দংশন’, ‘দ্বিতীয় দিনের কাহিনী’, ‘একমুঠো জন্মভূমি’, ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’, ‘অন্তর্গত’ এ ধারার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। উপন্যাসগুলো হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধের একেকটি স্মারক। তার রচিত উপন্যাস থেকে পাঠকগণ মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে নিরপেক্ষ এক ধারণা লাভ করতে পারেন। শিল্পের আঁচড়ে পাঠকের মনে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গকে প্রযুক্ত করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করা যায়।

‘নিষিদ্ধ লোবান’ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাঙালিদের যে ভয়াবহতম সময় অতিক্রম করতে হয়েছে তারই আলেখ্য। পাকিস্তানিরা ছিল বিকৃত এবং বীভৎস চিন্তার জীব। সিরাজ (প্রকৃত নাম প্রদীপ, মুসলমানি নাম গ্রহণ করে হয় সিরাজ) এবং বিলকিস দুটি চরিত্র। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত-নিপীড়িত শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে। একই সঙ্গে হিন্দু শ্রেণিরও প্রতিনিধিত্ব করে প্রদীপ। পরিণতিতে তাদের মৃত্যুও যুদ্ধবাস্তবতার দলিল। ‘নীল দংশন’ উপন্যাসে নজরুলের প্রতি পাকিস্তানি আর্মিদের অত্যাচার ফুটে উঠেছে। ‘বৃষ্টি ও বিদ্রোহীগণ’ উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের বিচিত্র দিকের উন্মীলন। যোদ্ধাগণ অপেক্ষা করতে থাকেন বৃষ্টির জন্য। বৃষ্টি এলে শত্রুদের পরাজিত করা সহজ হবে। এক পর্যায়ে লেখক জলেশ্বরীর পাশে বয়ে যাওয়া আধকোশা নদীকেও একজন যোদ্ধা হিসেবেই উল্লেখ করেন। সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন—‘গেরিলার সবচেয়ে বড় অস্ত্র এই আকস্মিকতা। আধকোশা আকস্মিকভাবেই এক নদী হয়ে যায়। আধকোশা আমাদের সবচেয়ে বড় গেরিলা।’

সৈয়দ শামসুল হক কথাশিল্পের অপর শাখা ছোটগল্পেও ছিলেন পারঙ্গম। জীবনসায়াহ্নে তিনি কয়েকটি ছোটগল্প রচনা করেছেন। যদিও লেখক সেগুলোকে গল্পপট বলেছেন। এই গল্প কিংবা গল্পপটে তিনি শেষবারের মতো প্রমাণ করে গেছেন তার রক্তে-ধমনিতে, চিন্তায়-কল্পনায়, মেধায়-মননে সাহিত্য আর সাহিত্য। আর সেই সাহিত্যজুড়ে জলেশ্বরী-আধকোশা নদী। এ রচনাগুলোতেও তিনি স্বদেশচিন্তার আখ্যান গাথাই তুলে এনেছেন। তার কবিতার পথেও ছিলেন সুদূরপ্রসারী। কবির ভাবলোক কবিতার প্রাঙ্গণে ঝরে পড়ে শব্দ-চরণ-পঙিক্তমালায়। প্রণয়সংলাপ, দেশবোধ, মুক্তিযুদ্ধ, সমকালীনতা, ইতিহাস-ঐতিহ্য, বঙ্গবন্ধু তার কবিতার আরাধ্য হয়ে উঠেছে।

সৈয়দ শাসসুল হককে দৃঢ়চেতা কবিসত্তা হিসেবে পাই। প্রবন্ধ-নাটক-কথাশিল্প-গান-চলচ্চিত্র-কাব্যনাট্যসহ সাহিত্যের বিচিত্র ধারায় তিনি পল্লবিত হয়েছেন। কোনো আঙ্গিকে তিনি অগ্রগামী, তার একক শ্রেষ্ঠত্ব বিচার দুরূহ। তবুও বলা যায়, তার অপরাপর আঙ্গিকের চেয়ে কবিতাশিল্পে অগ্রগামী।

সৈয়দ শামসুল হকের সাহিত্যের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উত্তর জনপদের রূপায়ণ। বিশেষত, রংপুর কুড়িগ্রামের জীবন। তিনি জলেশ্বরী নাম দিয়েছেন কুড়িগ্রাম শহরের। কুড়িগ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ধরলা। এই ধরলাকে ছোটবেলায় তিনি দেখেছেন আধক্রোশ বিস্তৃত। আধ ক্রোশ অর্থাৎ এক কিলোমিটার। সেই বিবেচনায় তিনি এ নদীর নাম করেন আধকোশা। তার লেখার মধ্যে এই জলেশ্বরী আর আধকোশা নদী বারংবার উঠে এসেছে। এমনকি মৃত্যুর সময়ে লেখা রচনাগুলোর প্রায় সবগুলোতেই এই পটভূমি প্রাণ লাভ করেছে। জাদুমন্ত্র-দীপ্ত তার কলম। শিল্পের ভূমি কর্ষণ এবং উৎপাদনে সিদ্ধহস্ত বাংলার এ কালজয়ী কবি।

সৈয়দ শামসুল হকের একটি কবিতা ‘আমার পরিচয়’। এই একটি কবিতায় তিনি সহস্র বছরকে তুলে এনেছেন। ইতিহাস-ঐতিহ্য-মুক্তিযুদ্ধ-বঙ্গবন্ধু সব কিছুরই যূথবন্ধ প্রকাশ এ কবিতাটি। কবি লিখেছেন—‘এই ইতিহাস ভুলে যাব আজ, আমি কি তেমন সন্তান?/ যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;/ তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি—/ চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।’ ‘পরানের গহীন ভিতর’ সৈয়দ শামসুল হকের আর এক অনন্য কীর্তি। এ কবিতামালায় তিনি যুক্ত করেছেন বৈচিত্র্যময় আভা। ‘ফিরে এসো বাংলাদেশ’ এবং ‘তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ’ কবিতা দুটি কবির ব্যক্তিক দুশ্চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা দূরীভূত হওয়ার আখ্যান। দেশ যখন পথ হারায়, সেই পথ হারানো দেশমাতার প্রতি কবি যেন অস্থির হয়ে ওঠেন। দেশ ঠিক পথে ফিরে এলে কবির অভিব্যক্তি আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। ‘ফিরে এসো বাংলাদেশ’ কবিতায় তিনি লিখেছেন—‘ফিরে এসো বাংলাদেশ,/ ফিরে এসো লৌহিত্য নদের কিনারে,/ ফিরে এসো মানুষের মিছিলে আবার,/ ফিরে এসো যোদ্ধার পেশীতে তুমি,/ ফিরে এসো মুজিবের কণ্ঠস্বরে/ রবীন্দ্রনাথের গানে,/ নজরুলের আগুনে আবার,/ ফিরে এসো বাংলাদেশ।’

স্বৈরতন্ত্র যখন দেশের ওপর ছোবল হেনেছিল তখন সৈয়দ শামসুল হক সেই ছোবল থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আর সেই ছোবল থেকে যখন বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে তখন তিনি আবার লিখলেন, ‘তোমাকে অভিবাদন বাংলাদেশ’ কবিতাটি। সেখানে তিনি লিখেছেন—‘তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ,/ তুমি ফিরে এসেছো তোমারই কোমল পলিমাটিতে/ যেখানে আমরা চিনে নিতে পারছি আমাদেরই পায়ের ছাপ।’ হাসপাতালে শায়িত অবস্থাতেও তিনি কবিতা লিখেছেন। ‘শব্দই চিকিিসত করে’ কাব্যগ্রন্ধের কবিতাগুলো কবির অসুস্থতাকালীন লেখা। এমনকি যখন হাতে লিখতে পারেননি তখন অনুলিখনে কবিতা লেখা হয়েছে। কবি প্রয়াত হন ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬। এ কাব্যগ্রন্থের শেষে তিনটি কবিতা আছে যেগুলো লিখিত হয়েছে ২২ সেপ্টেম্বর। ২২ সেপ্টেম্বর লিখিত এ কাব্যগ্রন্থের ৬০ সংখ্যক কবিতায় সৈয়দ শামসুল হক কবিতার শুরুতে লিখেছেন— ‘ওষুধের তন্দ্রা নয়/ব্যাধি নয়, কষ্ট নয়।/’ এ কবিতার শেষে আবার লিখেছেন— ‘এই বর্ণ থেকে বর্ণমালা/ আর এই বর্ণমালা ক্রমাগত/গেঁথেই চলেছে/ অমরত্ব আমাদের/ আধকোশা নদীটির তীরে।’ সৈয়দ শামসুল হক প্রায় অস্তমিত জীবনেও বর্ণ-বর্ণমালা পঙিক্তবদ্ধ হয়ে আমাদের যে বাঁচিয়ে রাখে সেই বোধও ছিল স্পষ্ট।

সংগীত কিংবা চলচ্চিত্র কাহিনীরও নির্মাতা তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রে অসংখ্য জনপ্রিয় গান সৈয়দ শামসুল হকের লেখা। তার বাবা চেয়েছিলেন তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রে লেখাপড়া করুক। এই ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে তিনি ১৯৫১ সালে পালিয়ে গিয়েছিলেন বোম্বে। সেখানে চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন।

তার জীবনপ্রদীপ যখন নিভু নিভু কথাও জড়িয়ে এসেছিল তখনো তিনি মৃত্যুকে অবজ্ঞা করে শিল্প সৃষ্টির চেষ্টা করে গেছেন। বলা যায় সৈয়দ শামসুল হক বাংলা সাহিত্যকে যা দিয়ে গেছেন তা শুধু পাঠকের নিছক আনন্দ কিংবা মনোরঞ্জনের জন্য নয়। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে উৎসারিত তার সমগ্র রচনা। ২৭ সেপ্টেম্বর সৈয়দ শামসুল হকের প্রথম প্রয়াণবার্ষিকী। কবি স্মরণে বিনম্র প্রণতি।

সর্বশেষ খবর