শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০২৩ ০০:০০ টা

পঞ্চগড়ে পিয়ানো রহস্য

ফরিদুর রেজা সাগর

পঞ্চগড়ে পিয়ানো রহস্য
দলবলসহ ওসি আকরাম চলে গেলেন। মিরাজ কাদেরী আর ছোটকাকু মুখোমুখি সোফায় বসে দুজন দুজনকে দেখলেন কিছুক্ষণ। মিরাজ বললেন, আমি কিন্তু ধারণা করতে পারতেছি রাতে কারা তোমাকে আক্রমণ করেছিল। ভাগ্য ভালো আহসান হাবিব আমার মোবাইলে মেসেজ দিয়েছিল। সে কারণে আমি বন্দুক নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। ছোটকাকু আমি দুঃখিত। আমার এলাকায় এসে তোমাকে হামলার শিকার হতে হলো। আসলে ওরা তোমাকে হামলা করেনি। করেছে আমাকে।

সে জানে মানে! অবাক কণ্ঠ মিরাজ কাদেরীর।

ছোটকাকু বললেন, শওকত বলল তুমিই নাকি প্রথম তাকে গুপ্তধনের রহস্য খোঁজার জন্য বলেছিলে।

আমি! অবাক প্রশ্ন মিরাজ কাদেরীর।

ছোটকাকু বললেন, হ্যাঁ, সে তোমার কথাই তো বলল।

সে ডাহা মিথ্যা কথা বলেছে। ছোটকাকু শোনো, তুমি তার সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ রাখবে না। ফোন করলে ধরবে না। সে একটা মারাত্মক ক্ষতিকর মানুষ। তার চোখ নষ্ট হলো কীভাবে জানো?

কীভাবে?

বাড়িতে আসো, তোমাকে ডিটেইল বলব।

এই বলে প্রথমবার ফোন কেটে দিয়েছিলেন মিরাজ কাদেরী। পঞ্চগড়ে পৌঁছার আগে আগে মিরাজ কাদেরী আবার ফোন দিলেন- ছোটকাকু তোমরা নিশ্চয়ই পঞ্চগড়ে পৌঁছে গেছ?

হ্যাঁ। প্রায় কাছাকাছি।

সে কি তোমাকে ফোন দিয়েছিল?

কে?

আরে ওই যে শওকত জামিল।

না ফোন দেয়নি। সে আমাকে ফোন দেবে কীভাবে? আমি তো তাকে ফোন নম্বর দিইনি।

ভালো করেছ? পঞ্চগড় রেলস্টেশনের পাশে ঘোড়ারগাড়ি অপেক্ষা করছে। তোমার জন্য স্পেশাল আয়োজন। মজিদ বিএসসি পঞ্চগড় থেকে বিদায় নেবে। তবে তোমার সঙ্গে যুক্ত হবে হাবিব নামে এক তরুণ। সে-ই তোমাকে আমাদের বাড়ি নিয়ে আসবে। সবকিছু ক্লিয়ার?

হ্যাঁ সবকিছু ক্লিয়ার। তবে একটা কথা ছিল।

কথা! কী?

মজিদ বিএসসি তোমার বিশ্বস্ত মানুষ তো?

হ্যাঁ, খুবই বিশ্বস্ত। পঞ্চগড়ে আমাদের একটা স্কুল আছে। সেই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক। তাকে নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে?

না, কোনো সমস্যা হচ্ছে না। মজিদ বেশ ভালো মানুষ। তবে তার একজন ছাত্রী, নাম ফুলপরী, তার ব্যাপারে তুমি কি কিছু জানো?

মিরাজ কাদেরী এবার সঙ্গে সঙ্গে কোনো মন্তব্য করলেন না। বরং একটু সময় নিলেন। তারপর বললেন, ফুলপরী বেশ মেধাবী মেয়ে। আসো তার ব্যাপারে তোমাকে সামনা-সামনি বলব। এরপর ফোন কেটে দিয়েছিলেন মিরাজ কাদেরী।

সন্ধ্যার পর পঞ্চগড় পৌঁছালেন ছোটকাকু।

তিন.

পঞ্চগড় রেলস্টেশনের পাশেই একটি ঘোড়ারগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ছোটকাকু যে মাইক্রোবাসে এসেছেন সেই মাইক্রোবাসেই মিরাজ কাদেরী বাড়ি পর্যন্ত যাওয়া যায়। কিন্তু ছোটকাকু চৌধুরীবাড়ির বিশেষ অতিথি। তাই তাকে বিশেষভাবে চৌধুরীবাড়িতে নেওয়া হবে। সেজন্যই ঘোড়ারগাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। গাড়ির সামনে একজন সুদর্শন তরুণ দাঁড়িয়ে আছে। তার পেছনে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে ঘোড়ারগাড়ির চালক। তার পরনে বিশেষ ধরনের পোশাক। মাথায় লাল টুপি। পরনে লালসবুজে মেশানো রাজকীয় স্টাইলের পোশাক। ঘোড়াটাও বেশ নাদুসনুদুস, লম্বা-চওড়া শরীর। ঘোড়ার শরীরে লাল-সবুজ মেশানো কাপড় পরানো হয়েছে। সুদর্শন তরুণটি মাথা ঝুঁকে ছোটকাকুকে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় তুলে ধরল- স্যার আমার নাম আহসান হাবিব। আমি চৌধুরী এস্টেটের জনসংযোগ কর্মকর্তা। আহসান হাবিবকে বেশ পছন্দ হয়েছে ছোটকাকুর। কথাবার্তায় বেশ স্মার্ট মনে হচ্ছে। দেখতেও সুদর্শন। অভ্যর্থনার ভঙ্গিতে হাবিব বলল, স্যার চলুন আমরা রওনা দিই। ঘোড়ার গাড়িতে ওঠার ক্ষেত্রে এক ধরনের কায়দাকানুন মানতে হয়। সেটা শিখিয়ে দিল হাবিব। ছোটকাকু ঘোড়ার গাড়িতে ওঠামাত্রই চালক বিশেষ ধরনের একটা শব্দ করতেই ঘোড়া গাড়ি নিয়ে দৌড়াতে শুরু করল। এই প্রথম শহরের ভিতর দিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে কোথাও যাচ্ছেন ছোটকাকু। ঘোড়ার খুরে টকবগ, টকবগ শব্দ হচ্ছে। একসময় শহর ছেড়ে খোলা রাস্তায় ঢুকল ঘোড়ার গাড়ি। আহসান হাবিব কারও সঙ্গে কথা বলছে। গাড়ির চালক বারবার ছোটকাকুর দিকে তাকাচ্ছে। বোধকরি কিছু বলতে চায়। ছোটকাকু প্রশ্ন করলেন, ভাই আপনার নাম কী?

চালক বিনীত ভঙ্গিতে উত্তর দিল, হাজং সিং।

কতদিন ধরে ঘোড়ার গাড়ি চালান?

সেই ছোটবেলা থেকে। আমার বাবা আগে এই গাড়ি চালাতেন। এখন আমি চালাই। এটা আমাদের পৈতৃক পেশা। বলেই গর্বের হাসি উপহার দিল হাজং সিং।

ঘোড়ার গাড়ি আজকাল উঠেই গেছে। সেখানে পঞ্চগড়ের মতো এলাকায় ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে গর্ব করছে হাজং সিং! ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হলো ছোটকাকুর কাছে। গাড়ি চালাতে চালাতে একাই কথা বলছে হাজং সিং। বুঝলেন বাবু, একটা সময় এ এলাকায় এমন সুন্দর পাকা রাস্তা ছিল না। চৌধুরীবাড়ির লোকজন ঘোড়ার গাড়িতে চড়েই শহরে যাওয়া-আসা করতেন। পথঘাট এখন অনেক সুন্দর। তবু ঘোড়ার গাড়ি বাতিল করেননি আজমল চৌধুরীর একমাত্র বংশধর মিরাজ কাদেরী। ঢাকা থাকি কোনো মেহমান এলে তাকে ঘোড়ার গাড়িতেই চৌধুরীবাড়িতে আনা হয়। এটাই বংশের নিয়ম।

সামনের রাস্তাটা বেশ ফাঁকা। ধু-ধু প্রান্তর। ডানে-বাঁয়ে শুধুই ধানের খেত। দিনে হলে পরিবেশটা আরও সুন্দর দেখাত। আহসান হাবিবকে প্রশ্ন করলেন ছোটকাকু, আর কতদূর?

হাবিব মৃদু হেসে বলল, ঘড়ি ধরে আর মাত্র পনেরো মিনিট স্যার।

হাজং সিং বলল, মনে হয় পনেরো মিনিট লাগবে না। তার আগেই আমরা পৌঁছে যাব। কী বলিসরে লাল মিয়া?

ঘোড়ার নাম লাল মিয়া। হাজং সিংয়ের প্রশ্নের উত্তরে লাল মিয়া চিঁ হিঁ হিঁ আওয়াজ করল। হঠাৎ যেন লাল মিয়ার গতি থেমে গেল। হাজং সিং একটু যেন ভয় পেয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আহসান হাবিবও। ফাঁকা রাস্তায় অন্ধকারেও হঠাৎ একদল মানুষের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। তাদের আসার গতি দেখে বোঝা যাচ্ছে মানুষগুলো সুবিধার নয়। ঘোড়া দুই পা উঁচুতে তুলে কয়েকবার বিপৎসংকেত দিল। ছোটকাকু সত্যি সত্যি ভয় পেয়েছেন। হাবিবকে জিজ্ঞেস করলেন, ওরা কারা?

ঠিক বোঝা যাচ্ছে না ওরা কারা।

আমরা কি তাহলে বিপদে পড়তে যাচ্ছি?

হ্যাঁ। তবে ভয়ের কিছু নেই। আপনি চুপচাপ বসে থাকেন। আমরা ব্যাপারটা দেখছি। বলেই হাজং সিংকে তাড়া দিল হাবিব, হাজং মিয়া ঘোড়াকে বল কোনো ভয় নেই।

হাজং ঘোড়াকে উদ্দেশ করে অস্পষ্ট শব্দে কী যে বলল। ব্যস, ঘোড়া যেন দৌড়ানোর গতি পেল। ঘোড়া গাড়ি নিয়ে দৌড়াচ্ছে। বিপরীত দিক থেকে হইচই করে একদল লোক আসছে। এক সময় মুখোমুখি হলো দুই পক্ষ। হইচই করা লোকগুলো ছোটকাকুকে ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামতে বলছে। কিন্তু হাবিব ছোটকাকুকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ঘোড়ার গাড়ির চালক হাজং সিংয়ের সঙ্গে তর্ক করছে হইচইকারীদের একজন।

অয় হাজং বেশি কথা বলবি না। সাহেবরে গাড়ি থাকি নামা। আমরা তারে নিয়া যাব।

হাজং সিং হুংকার দিয়ে উঠল, আমি বাঁচি থাকতে কোনো ব্যাটা আছে সাহেবরে নিয়া যায়! আয়, আয় দেখি কত বুকের পাটা।

কিন্তু হইচই করা মানুষগুলো সংখ্যায় বেশি হওয়ায় ছোটকাকুর মনে হলো এদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু এরা তাকে ধরে নিয়ে যেতে চাচ্ছে কেন? কারও কি নির্দেশ আছে? ছোটকাকু হঠাৎ হইচই করা মানুষগুলোকে জোরে ধমক দিলেন, তোমরা চুপ কর। আমার কথা শোনো।

ধমকে কাজ হলো। হইচই থেমে গেল। ছোটকাকু সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি আমাকে চেনো? কেউ কোনো উত্তর দিল না।

ছোটকাকু এবার বললেন, তাহলে আমাকে ধরে নিয়ে যেতে চাচ্ছো কেন?

এবারও কেউ কোনো জবাব দিল না। ছোটকাকু এবার ধমকের সুরে বললেন, তোমরা আমাকে আসল ঘটনা বল। তাহলে আমি তোমাদের সঙ্গে যাব।

হঠাৎ হইচই করা মানুষগুলোর মধ্য থেকে একজন চিৎকার দিয়ে বলল, বাবু বেশি কথা বলার সময় নাই। আসল কথা হলো আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। গাড়ি থাকি নামেন...

আবার একটা হইচই শুরু হয়ে গেল। দুজন ষণ্ডামার্কা যুবক ঘোড়ার গাড়িতে উঠে ছোটকাকুর হাত ধরে টান দিতেই দূরে পরপর দুটি গুলির শব্দ হলো। মুহূর্তে পরিস্থিতি গেল পাল্টে। হইচই করা মানুষগুলো যে যেদিকে পারে ছুটতে শুরু করল।

চার.

স্থানীয় থানার ওসি এসেছেন। সঙ্গে একদল পুলিশ। মিরাজ কাদেরীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ওসি আকরাম। তার একটাই কথা- ছোটকাকু এ দেশের একজন নামকরা গোয়েন্দা। পুলিশ অনেক সময় তার কাছেই পরামর্শ নিয়ে তদন্তকাজ চালায়। অথচ তাকেই কি না হামলা করা হয়েছে! না, এ ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না। এর একটা বিহিত করতেই হবে। ওসি আকরাম বললেন, চৌধুরী সাহেব, এটা আমাদের এলাকার মানসম্মানের প্রশ্ন। আপনারা কেউ একজন বাদী হয়ে শুধু থানায় একটা ডায়েরি করেন। তারপর কী করতে হয় আমিই করব। ছোটকাকুর মতো মানুষ যদি হামলার শিকার হয় তাহলে মানসম্মানের কিছু থাকে? আল্লাহই জানে ভ্রাম্যমাণ সাংবাদিকদের কেউ ঘটনার সময় ছিল কি না। কারও একটা ভিডিও ফেসবুকে গেলেই আমি জবাবদিহির মধ্যে পড়ে যাব। আপনার কি মনে হয় কেউ ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে?

মিরাজ কাদেরী বললেন, আমার ধারণা কেউ ভিডিও ফুটেজ পায়নি।

ওসি আকরাম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ভিডিও ফুটেজ কারও কাছে না গেলেই ভালো। আপনার কী মনে হয়, কারা এ হামলার ঘটনায় জড়িত?

মিরাজ কাদেরী মৃদু হেসে বললেন, আমি কী করে বলব? ছোটকাকু তো এ এলাকায় প্রথম এসেছে। কাজেই তার তো শত্রু থাকার কথা নয়।

ওসি আকরাম ভেবে নিয়ে মিরাজ কাদেরীকে বললেন, ছোটকাকু হঠাৎ আপনার বাড়িতে? কোনো কাজে?

না। সে তো আমার বন্ধু। বেড়াতে এসেছে।

মিরাজ কাদেরীর কথা শুনে ওসি আকরাম খুশি হয়ে বললেন, বলেন কী! দেশসেরা গোয়েন্দা আপনার বন্ধু? আমি উনার সঙ্গে একটু কথা বলতে চাই।

কিন্তু ছোটকাকু তো ঘুমাচ্ছেন।

একটু ডেকে তোলা যায় না? তার সঙ্গে একটা ছবি তুলে যাই। আমার ওয়াইফকে ছবিটা দেখাব। সে আবার ছোটকাকুর অন্ধ ভক্ত। আমার জন্য এ কষ্টটা করেন চৌধুরী সাহেব। তা ছাড়া তদন্তের খাতিরে তার সঙ্গে আমার দেখা হওয়া জরুরি। কথা বলা জরুরি।

ছোটকাকুকে ডাকতে হলো না। তিনি নিজেই ড্রয়িংরুমে ঢুকলেন। তার পিছু পিছু এলো আহসান হাবিব। তার চেহারায় অপরাধী ভাব। কারণ মিরাজ কাদেরী তাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ছোটকাকু যে ঘরে ঘুমিয়েছিলেন সেই ঘরের বারান্দায় পাহারায় থাকতে। যাতে হুট করে ঘর থেকে বেরিয়ে না আসেন ছোটকাকু। ছোটকাকুকে দেখে ওসি আকরাম উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিল।

স্যার স্লামালেকুম। আমার নাম আকরামুল ইসলাম। সবাই ডাকে ওসি আকরাম। স্যার আপনি এখন সুস্থ তো?

হ্যাঁ আমি সুস্থ।

তবে যে শুনলাম রাতে আপনার ওপর কেউ হামলা করেছিল?

না, সে রকম কিছু না।

সত্যি বলছেন স্যার?

ছোটকাকু বিরক্ত ভঙ্গিতে বললেন, আপনার নাম যেন কী?

ওসি আকরাম।

আকরাম সাহেব।

জি স্যার...

আপনার কাছে আমি মিথ্যা বলব কেন?

সেটা ঠিক স্যার। আপনি আমার কাছে মিথ্যা বলবেন কেন। তবে স্যার আমার মোবাইলে একটা ফোন এসেছিল। তারই সূত্র ধরে আমার এখানে আসা। তার মানে স্যার গত রাতে কোনো ঘটনা ঘটেনি।

না, সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তার মানে কারও বিরুদ্ধে আপনার কোনো অভিযোগ নাই?

ঘটনা ঘটলে তো অভিযোগের প্রশ্ন আসে।

তা ঠিক, তা ঠিক।

তাহলে স্যার আমরা কি চলে যাব?

ছোটকাকু এবার হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। ওসি আকরাম তার দল নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েই ফিরে দাঁড়ালেন।

স্যার আমার একটা আর্জি ছিল।

আর্জি! বলেন...

আপনার সঙ্গে একটা সেলফি তুলব। আমার ওয়াইফকে দেখাব। সে আপনার বড় ফ্যান। আমাদের ড্রয়িংরুমে আপনার একটা বড় ছবি আছে। স্যারের কি আমার বাসায় যাওয়ার একটু সময় হবে? আমার স্ত্রী বেশ খুশি হবে।

ছোটকাকুর বেশ অস্থির লাগছে। যেজন্য পঞ্চগড়ে আসা তার শতকরা ৫ ভাগও আয়ত্তে আসেনি। প্রথম হলো মিরাজ কাদেরীর দাদার ডায়েরিটা পড়তে হবে। ডায়েরিতে তিনি আসলে কী লিখেছেন সেটা আগে পড়া দরকার। তারপর বোঝা যাবে কাজটা কঠিন না সহজ। তার আগে পুলিশকে বিদায় করা দরকার।

ওসি আকরাম মোবাইলে সেলফি তুলবেন বলে তৈরি হয়ে আছেন। ছোটকাকুর সম্মতি পেয়ে বিপুল আনন্দে সেলফি তুলতে শুরু করলেন। একপর্যায়ে তার সঙ্গে আসা পুলিশ বাহিনীর অন্য সদস্যসহ ছোটকাকুর সঙ্গে পৃথকভাবে ছবি তুললেন। যাওয়ার সময় ছোটকাকুকে বললেন, স্যার একটা কথা বলি। পুলিশের নাকের ঘ্রাণ একটু আলাদা স্যার। আমি কিন্তু একটা ঘ্রাণ পাইতেছি। কিন্তু আপনি যখন বলছেন গত রাতে কিছু ঘটেনি তার মানে আদতে কিছুই ঘটেনি। তবে স্যার আমাকে যদি কখনো প্রয়োজন হয় মোবাইলে কল দিয়েন। এই যে আমার কার্ড। মোবাইল নম্বর দেওয়া আছে। নম্বর দুইটা। ওপরেরটায় ফোন করলেই আমাকে পাবেন। আসি স্যার... স্লামালেকুম।

দলবলসহ ওসি আকরাম চলে গেলেন। মিরাজ কাদেরী আর ছোটকাকু মুখোমুখি সোফায় বসে দুজন দুজনকে দেখলেন কিছুক্ষণ। মিরাজ বললেন, আমি কিন্তু ধারণা করতে পারতেছি রাতে কারা তোমাকে আক্রমণ করেছিল। ভাগ্য ভালো আহসান হাবিব আমার মোবাইলে মেসেজ দিয়েছিল। সে কারণে আমি বন্দুক নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। ছোটকাকু আমি দুঃখিত। আমার এলাকায় এসে তোমাকে হামলার শিকার হতে হলো। আসলে ওরা তোমাকে হামলা করেনি। করেছে আমাকে। আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এ হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি ওদের ছাড়ব না।

মিরাজ কাদেরীর কথা শুনে একটু যেন উদ্বিগ্ন হলেন ছোটকাকু। তার মানে হামলাকারীকে চেনেন মিরাজ কাদেরী। ঘটনাটা আসলে কী? পুরোটাই জানা দরকার। মিরাজ কাদেরীকে প্রশ্ন করলেন ছোটকাকু-

তার মানে হামলাকারীদের তুমি চেনো?

হ্যাঁ।

কে বা কারা?

[চলবে]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর