সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রংপুরের রুদ্ধশ্বাস ঢাকার সহজ জয়

আসিফ ইকবাল

রংপুরের রুদ্ধশ্বাস ঢাকার সহজ জয়

বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের উইকেট পতনের পর ঢাকা ডায়নামাইটসের নাসির ও মুস্তাফিজের উল্লাস - রোহেত রাজীব

ফিল্ডাররা ছাতার মতো ঘিরে ফেলেন সাকলাইন সজীবকে। উদ্দেশ্য কোনো রকমে এক রান আটকানো। আটকাতে পারলেই ‘টাই’! বিপরীতে সাকলাইনের দরকার মাত্র এক রান। নিলেই জয়োৎসব। এমন সমীকরণে ঠাসা ছিল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে চিটাগাং ভাইকিংস-রংপুর রাইডার্স ম্যাচ। পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটির ভবিতব্য জানতে শেষ বলে তখন টানটান উত্তেজনা- দর্শকসহ দুই দলের সাজঘরেও। কিন্তু মাঠের বাইরের উত্তেজনা বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলেনি সাকলাইনের ওপর। স্ট্রেইট ড্রাইভে ম্যাচ জিতিয়ে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন সাকলাইন। ২ উইকেটের অবিশ্বাস্য জয় তুলে তামিম ইকবালের চট্টগ্রামকে স্তব্ধ করে দেয় সাকিব আল হাসানের রংপুর। সন্ধ্যার ম্যাচে রংপুরের দুর্দান্ত জয়ের বিন্দুমাত্র ছাপ পড়েনি ঢাকা ডায়নামাইটসের ওপর। একপেশে ম্যাচে কুমার সাঙ্গাকারার ঢাকা ৬ উইকেটে হারায় মাশরাফি বিন মর্তুজার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে। প্রথম ম্যাচে রানোৎসবে মেতেছেন তামিম ইকবাল, জীবন মেন্ডিস, মিসবাহ উল হক, থিসারা পেরেরারা। দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল বোলার শাসিত। ফেবারিট ঢাকার নিখুঁত বোলিংয়ে ২০ ওভারে মাত্র ৮ উইকেটে ১১০ রান করে কুমিল্লা। বোলারদের ম্যাচে কুমিল্লার প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ মাত্র ২০ রান। ব্যাটসম্যানদের এহেন ব্যর্থতায় মনে হচ্ছিল শ’য়ের ঘর পেরোবে না কুমিল্লা। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফির ২৬ বলে ২৫, মাহামুদুল হাসানের ৩০ বলে ২২ ও সান্তোকির ১৬ বলে ২১ রানে শ’য়ের কোটা পেরোয় কুমিল্লা। আবুল হাসান ৩ উইকেট নিলেও মিতব্যয়ী ছিলেন মোশাররফ রুবেল ও পাকিস্তানি লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহ। দুজনে ৮ ওভারে রান দেন মাত্র ২৯! ১১১ রানের মামুলি টার্গেট। সেটা পেরোতে বিন্দুমাত্র কষ্ট করতে হয়নি নাসির জামসেদ, সাঙ্গাকারাদের। মাশরাফি, সান্তোকি, নারাইনদের সাধারণ মানে নামিয়ে ৪ বল আগেই জয় নিশ্চিত করে সাঙ্গাকারা বাহিনী। জামসেদ সর্বোচ্চ ৪৪ করলেও ম্যাচ সেরা হন আবুল হাসান।

মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে হƒত্বিক রোশন ও জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ নেচে-গেয়ে উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন। সেই উদ্দাম নাচ, গানের রেশ কাটার আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক ম্যাচ উপভোগ করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। চিটাগাংয়ের বেঁধে দেওয়া ১৮৮ রান রংপুর টপকে যায় ম্যাচের শেষ বলে। ওভার প্রতি ৯.৪ রানের জয়ের টার্গেটে খেলতে নামা রংপুর স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত পাকিস্তানি পেসার মোহাম্মদ আমেরের আগুন ঝরানো বোলিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে শুরুতে। প্রথম ২৩ রানে উপরের সারির চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে যখন হারের প্রহর গুনছিল, তখন ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভাব আল-আমিন, মিসবাহ-উল হক, থিসারা পেরেরার। মিসবাহ ও পেরেরা ষষ্ঠ উইকেটে ৩৫ বলে ৮০ রান যোগ করায় জয় পায় রংপুর। ২৮ বলে ৩৮ রান করা আল-আমিনের দেওয়া ভিতকে কাজে লাগিয়ে পেরেরা ১৭ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৪৩ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন। ম্যাচের সমাপ্তি টানেন ৪২ বছর বয়স্ক মিসবাহ ৩৯ বলে ৬১ রানের ইনিংস খেলে। দুজনের মতো কাল আলোকিত ছিলেন আমেরও। দুই স্পেলে বোলিং করে নিজের মেধার আরও একবার প্রমাণ দেন নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আসা এই বাঁ-হাতি পেসার। প্রথম স্পেলে ২ উইকেট নেওয়া আমের দ্বিতীয় স্পেলে নেন পেরেরা ও মিসবাহর উইকেট। মিসবাহর বোল্ডটি ছিল অসাধারণ এক ইয়র্কারে। ১৬ ওভার পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ছিল চিটাগাং। ১৭ নম্বর ওভারে পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। শফিউলের ওই ওভারে দুই ছক্কায় রান আসে ১৭। ১৮ নম্বর ওভারে জিয়াউর রহমান দেন ২ ছক্কায় ২১ রান। শেষ ১২ বলে জয় পেতে রংপুরের দরকার ২২ রান এবং উইকেটে তখনও মিসবাহ ও পেরেরা। আমেরের ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নেন মিসবাহ। দ্বিতীয় বলটি স্লোয়ার, বুঝতে ব্যর্থ হয়ে মিডঅনে ক্যাচ দেন থিসারা পেরেরা। পরের বলে মিসবাহকে দুরন্ত এক ইয়র্কারে বোল্ড করেন আমের। ৬১ রানের ইনিংস খেলা মিসবাহকে বোকা হয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় আমেরের ইয়র্কারে। পেরেরা ও মিসবাহর বিদায়ের পর ম্যাচ ‘ইউটার্ন’ করে চলে আসে চিটাগাংয়ের ঘরে। জয়ের জন্য শেষ ৬ বলে ১৪ রানের দরকার পড়ে রংপুরের। শফিউলের ওভারের প্রথম বলে ব্যাট লাগাতে পারেননি সামি। দ্বিতীয় বলে এক্সট্রা কাভারে ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলে ২ নেওয়ার পরেরটিতে হাঁকান বাউন্ডারি। প্রথম চার বলে ১২ রান; শেষ দুই বলে জয়ের জন্য দরকার পড়ে ২ রানের। পঞ্চম বলে দুই রান নেওয়ার সময় রান আউট হন ৭ বলে ১৮ রান করা সামি। শেষ বলে প্রয়োজনীয় এক রান তুলে নেন সাকলাইন সজীব স্ট্রেইট ড্রাইভে। ওই ড্রাইভের পর প্রজাপতির পাখায় ভর করে জয়োৎসব পালন করেন সাকলাইন ও রংপুর দল।

 

চিটাগাং ইনিংস : ২০ ওভারে ১৮৭/৭, রংপুর ইনিংস : ২০ ওভারে ১৮৮/৮

ফল : রংপুর রাইডার্স ২ উইকেটে জয়ী।

কুমিল্লা ইনিংস : ২০ ওভারে ১১০/৮, ঢাকা ইনিংস : ১৯.২ ওভার ১১২/৪

ফল : ঢাকা ৬ উইকেটে জয়ী।

সর্বশেষ খবর