বৃহস্পতিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সাকিবেই ধরাশায়ী ঢাকা

মেজবাহ্-উল-হক

সাকিবেই ধরাশায়ী ঢাকা

ঢাকার বিপক্ষে জ্বলে উঠলেন সাকিব আল হাসান। রংপুরের পক্ষে ১৬ রানে তিনি চার উইকেট পান। সতীর্থদের উল্লাস ছিল তাই সাকিবকে ঘিরেই - রোহেত রাজীব

যেন বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ে ম্যাচ হচ্ছে মাঠে! গ্যালারির পুরো সমর্থন ছিল ঢাকা ডাইনামাইটসের পক্ষে! আর রংপুর রাইডার্সের গুটি কয়েক সমর্থক থাকলেও তারা ছিলেন যেন নীরব-নিস্তব্ধ। কাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দর্শকের কাছে রংপুর রাইডার্স ছিল যেন জিম্বাবুয়ে! ডাইনামাইটসের ব্যাটসম্যান জামশেদ ও রাজুর ছক্কার সময় কিংবা রাইডার্সের ব্যাটসম্যান সৌম্য-সিমন্স-পেরেরার উইকেট পতনে গ্যালারিতে যে গর্জন উঠেছিল, সে গর্জনের ছিটেফোঁটাও ছিল না রংপুরের সাফল্যের সময়। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে সাধারণত টাইগারদের সঙ্গে বিদেশি কোনো দলের খেলা হলে!

রাইডার্সের ক্যারিবীয় ওপেনার বিশাল বিশাল তিনটি ছক্কা হাঁকালেন। মোহাম্মদ মিথুন ও থিসারা পেরেরা ছক্কাগুলোতেও যেন দর্শকের মন ভরেনি। গ্যালারি নীরব! যে সাকিব আল হাসানের উইকেট শিকার কিংবা বাউন্ডারিতে মুহুর্মুহু কেঁপে ওঠে মিরপুর, সেখানে কাল ‘সাকিব, ভুয়া’ ‘সাকিব, ভুয়া’ স্লোগান উঠলো! আর গুটি কয়েক সাকিব ভক্তের উল্লাসকে মনে হচ্ছিল যেন ‘শশ্মানে কান্নার আওয়াজ’। ঢাকার প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক হওয়ার কারণেই সাকিব ‘হোম অব ক্রিকেটে’ দেখতে হলো বিরূপ চিত্র।

দর্শকের সমর্থন না পেলেও কাল ঠিকই ছন্দে ফিরেছেন। ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয়ে রংপুর রাইডার্সকে জয় এনে দিয়েছেন। ব্যাট হাতে সাকিব মাত্র ১৫ বলে ২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলার পর বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। অধিনায়কের দাপুটে পারফরম্যান্সেই ঢাকার বিরুদ্ধে ৬৯ রানের বড় জয় পায় রংপুর রাইডার্স। তিন ম্যাচে উত্তরাঞ্চলের দলটির দ্বিতীয় জয় এটি।

এবারের বিপিএলে বাইরে নাটকীয় যত ঘটনাই ঘটুক না কেন মাঠের খেলায় ঠিকই টান টান উত্তেজনা ছিল। কিন্তু রংপুর ও ঢাকার ম্যাচের উত্তেজনার ‘অ’ খুঁজে পাওয়া গেল না। গ্যালারির দর্শকের জোরালো সমর্থন পাওয়ার পরও মাঠে ডাইনামাইটসের ক্রিকেটাররা যেন অসহায় আÍসমর্পণ করলেন! রংপুরের করা ১৭৬ রানের জবাবে ঢাকা অলআউট হয়ে যায় মাত্র ১০৭ রানে।

রাইডার্সের ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাটিং করছিলেন তখন মনে হচ্ছিল উইকেট যেন ব্যাটিং স্বর্গ। কিন্তু ডাইনামাইটসের ব্যাটসম্যানের রানের জন্য ২২গজে গিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হলো। রংপুরের স্কোরটা ২০০ও হতে পারতো! ১৫ ওভারে সাকিবদের রান ছিল তিন উইকেটে ১৩৩। সাত উইকেট হাতে থাকায় শেষের ৫ ওভার থেকে ৬৭ রান এলেও তাকে অস্বাভাবিক বলার উপায় ছিল না!

দুই দলের পাওয়ার প্লে-তেই পার্থক্যটা ছিল চোখে পড়ার মতো। রংপুর রাইডার্স যেখানে প্রথম ছয় ওভারে মাত্র এক উইকেট হারিয়ে করেছিল ৫৯ রানে, সেখানে ঢাকা ডাইনামাইটস ৩৫ রান করতেই হারিয়ে ফেলেছিল দুই উইকেট। শুরুর ধাক্কাটা শেষ পর্যন্ত আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ঢাকা। তবে চেষ্টা করেছেন অধিনায়ক সাঙ্গাকারা। কিন্তু তিনি একপ্রান্ত আগলে রাখলেও আরেকপ্রান্তে তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি। ২৮ বলে ২৯ রান করে সাঙ্গা যখন আউট হয়ে যান তখন ঢাকা ডাইনামাইটসের ভাগ্যও ফিকে হয়ে যায়।

রংপুরের দাপুটে শুরুর পেছনে বড় ভ‚মিকা ক্যারিবীয় ওপেনার লেন্ডল সিমন্সের। মাত্র ৩৯ বলে ৫১ রান করেছেন এই তারকা। ৫টি বাউন্ডারির সঙ্গে হাঁকিয়েছেন তিনটি বিশাল ছক্কা। মোহাম্মদ মিথুনের ঝড়ো ৩৪ কিংবা পেরেরার ২৭ রানও রংপুরকে বড় স্কোর এনে দিতে দারুণ সহায়তা করেছে। তবে সাকিবের অপরাজিত ২৪ রান ছিল আশা জাগানিয়া। কেননা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরা ক্লান্ত সাকিবকে নিয়ে হয়তো শঙ্কিত ছিলেন রংপুরের ভক্তরা। কিন্তু কাল ঝড়ো গতিতে রান করে ভক্তদের স্বস্তি দিলেন সাকিব।

বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের আসল ক্যারিশমা ছিল তার বোলিংয়ে। মাত্র ১৬ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাকিব ফিল্ডিংয়েই বা কম কিসে! অসাধারণ ক্ষীপ্রতায় দুটি ক্যাচও নিয়েছেন। নেতৃত্বে সাকিব আরও অনন্য! এবারের বিপিএলে যেখানে শুরুর দিকে কেউ স্পিনারের হাতে বল তুলে দিতেই সাহস দেখান না সেখানে সাকিব দুঃসাহস দেখিয়ে প্রথম ৯ ওভারে টানা বোলিং করালেন স্পিনারদের দিয়ে। সফলও হয়েছেন। কালকের পুরো ম্যাচই হয়ে গেল সাকিবময়! 

 

রংপুর ইনিংস : ২০ ওভারে ১৭৬/৬ (সিমন্স ৫১, মিঠুন ৩৪, পেরেরা ২৭, ইয়াসির ২/২৪)

ঢাকা ইনিংস : ১৯.৪ ওভারে ১০৭/১০ (সাঙ্গাকারা ২৯, সাকিব ৪/১৬)

ফল : রংপুর ৬৯ রানে জয়ী

বরিশাল ইনিংস : ১৮.৩ ওভারে ৮৯/১০ (কুপার ২২, কুলাসেকেরা ৩/৮)

কুমিল্লা ইনিংস : ১৮ ওভার ৯০/২ (মাহমুদুল ৩১, কুপার ১/৭)

ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী। 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর