শুক্রবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

রংপুরের তৃতীয় ঢাকার দ্বিতীয় জয়

মেজবাহ্-উল-হক

রংপুরের তৃতীয় ঢাকার দ্বিতীয় জয়

রংপুরের জয়ে উল­সিত সাকিব। হারে বিমর্ষ সিলেট সুপার স্টার্সের মুশফিক - রোহেত রাজীব

কাঁধ দুলিয়ে নাচতে নাচতে সাকিব আল হাসান এগিয়ে গেলেন ড্যারেন সামির দিকে। ক্যারিবীয় তারকার ‘ট্রেডমার্ক’ নৃত্যই অনুকরণ করলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। হাসতে হাসতে সামি এসে জড়িয়ে ধরলেন সাকিবকে। তারপর সাকিব বাহুডরে বেঁধে ফেললেন বোলার আবু জায়েদ রাহীকে। এই দুই বোলারই (রাহী ও সামি) তো কালকের ম্যাচে শেষের দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে রংপুর রাইডার্সকে এনে দিয়েছেন রুদ্ধশ্বাস এক জয়। আগের ম্যাচের হারের ধাক্কা সামলে ফের জয় পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। লো স্কোরিং ম্যাচে ঢাকা ৬ উইকেটে হারিয়েছে চিটাগাং ভাইকিংসকে।

আম্পায়ারের সঙ্গে অসদাচরণ করায় সাকিব আল হাসানকে এক ম্যাচ নিষিদ্ধ ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগে বিপিএলের এই আসরে আল আমিনকে ৪০ হাজার ও মো. শহীদকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল।

আসল কাজটা কিন্তু করেছেন সাকিব আল হাসান নিজেই। ব্যাট হাতে ২২ গজে গিয়ে ‘মরা উইকেটে’ যুদ্ধ করতে করতে ৩৩ রান করলেন। শুধু রংপুরের ইনিংসে নয়, ম্যাচেই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর এটি। আর বল হাতে সাকিব ৩১ রানে শিকার করলেন তিনটি উইকেট। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’। বিপিএলের আগের আসরে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন সাকিব। এ আসরেও হাঁটছেন একই পথে। চার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে শীর্ষে বোলারদের মধ্যে সাকিব, রানও রয়েছে ৬৪।

লো-স্কোরিং ম্যাচ হলেও কাল রংপুর ও সিলেটের খেলায় পরতে পরতে ছিল রোমাঞ্চ। জয়ের জন্য শেষ দুই ওভারে সিলেটের দরকার ছিল মাত্র ১৪ রান। হাতে উইকেট ছিল মাত্র দুটি। তবে সুপার স্টারসের দিকেই ম্যাচের ভাগ্য কিছুটা হেলেছিল। উইকেট যত স্লো-ই হোক না কেন টি-২০তে ১২ বলে ১৪ রান কোনো ঘটনাই নয়! তাছাড়া তখনো অপরাজিত ছিলেন সিলেটের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম।

১৯তম ওভারে বল করতে এসে ৭ রান দিলেও সিলেটের ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শহীদের উইকেটটি তুলে নেন। শেষ ওভারে স্ট্রাইকিং প্রান্তে মুশফিক না থাকায় আবু জায়েদের ওভারের দ্বিতীয় বলেই সাঙ্গ হয় সিলেটের ইনিংস। ৬ রানে হার। দুর্ভাগ্যই বটে সুপার স্টারসের। প্রথম দুই ম্যাচে তাদের পরাজয়ের ব্যবধান ছিল ১ রান। তিন ম্যাচেই তীরে এসে তরী ডুবে যায় তাদের।

কালকের ম্যাচে ‘দ্য ফিনিশার’ মুশফিকুর রহিম উইকেটে থাকার পরও সহজ ম্যাচটা হাত ছাড়া হয়ে গেল। তবে ১৯তম ওভারের শেষ বলে কেন যে সিঙ্গেল রান নিয়ে মুশি শেষ ওভারে ‘ইচ্ছা’ করে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে গেলেন তার নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে! তাছাড়া এটা তো সত্য যে, একপ্রান্ত থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে থাকলে আরেক প্রান্তে ব্যাটসম্যানও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন! মুশফিক কাল টু-ডাউনে ব্যাট করতে নেমে একে একে সঙ্গীর বিদায়ী দৃশ্য দেখে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতেই যেন ভুল করলেন।

তবে সাকিব কিন্তু ভুল করেননি। রংপুর রাইডার্সকে নেতৃত্ব দিয়েছে সামনে থেকে। তার বোলিং পরিবর্তনের সিদ্ধান্তগুলো ছিল দেখার মতো! শেষ ওভারে অনভিজ্ঞ পেসার আবু জায়েদের হাতে বল তুলে দিয়েও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন সাকিব। তরুণ বোলার জায়েদও দলকে জয় এনে দিয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন।

টি-২০ ক্রিকেটে যে কোনো উইকেটেই ১১০ রান সহজ টার্গেট! তারপরেও কাল সিলেট হেরে গেছে মূলত সাকিব আল হাসানের বুদ্ধিমত্তার কাছে। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১০৯ রান করার পরও আশা ছাড়েননি রাইডার্স দলপতি। তিনি খুব ভালো করেই জানতেন, দ্বিতীয় ইনিংসে বল অনেক বেশি টার্ন করবে। তাই প্রথম ওভারে নিজের হাতেই বল তুলে নেন সাকিব। চতুর্থ বলেই সফলতা। সিলেটের ওপেনার জসুয়া কবকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগে আরেক ওপেনার দিলশান মুনাবীরাকেও ড্রেসিং রুমের রাস্তা ধরিয়ে দেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এরপর মুমিনুল এসে ২৩ বলে ২৯ রান করলেও সিলেটের পরের ব্যাটসম্যানরা আর রংপুরের বোলারদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি। তবে একপ্রান্ত আগলে রাখলেও কাল যেন দর্শকের ভ‚মিকায় ছিলেন মুশফিক। সিলেট অধিনায়ক শেষ পর্যন্ত ২৫ রানে অপরাজিত  থাকেন।

 

রংপুর রাইডার্স : ১০৯/৯, ২০ ওভার (সাকিব ৩৩, পেরেরা ২১। শহীদ ৪/১২)

সিলেট সুপার স্টার্স : ১০৩/১০, ১৯.২ ওভার  (মুমিনুল ২৯, মুশফিক ২৫*। সাকিব ৩/৩১)

 

ফল : রংপুর ৬ রানে জয়ী

চিটাগাং ভাইকিংস : ৯২/১০, ১৮.৪ ওভার (নাঈম ২৯*। মুস্তাফিজ ৩/১৪, নাসির ৩/১২)

ঢাকা ডায়নামাইটস : ৯৬/৪, ১৭.১ ওভার (সৈকত ২৩, সাদমান ৪৫। নাঈম ৩/৭ )

ফল : ঢাকা ৬ উইকেটে জয়ী

সর্বশেষ খবর