বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

কুমিল্লার জয়ের নেপথ্য নায়ক মাশরাফি

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

কুমিল্লার জয়ের নেপথ্য নায়ক মাশরাফি

ম্যাচ শেষে মাশরাফিকে ঘিরে উৎসবে মাতলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের প্রধান উপদেষ্টা আ হ ম মুস্তফা কামাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কী নুয়ান কুলাসেকারা, কী আবু হায়দার রনি! বোলিংয়ে যে আসছেন, তাকেই কানে কী যেন ‘মন্ত্র’ দিয়ে পীঠ চাপড়ে দিচ্ছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা! কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অধিনায়ক খুব ভালো করেই জানতেন, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ‘তক্তা মার্কা’ উইকেটে প্রতিপক্ষকে ১৪৩ রানের টার্গেট জয় পাওয়া শুধু কঠিনই নয়, রীতিমতো দুঃসাধ্য ব্যাপার! সাফল্যের ‘চাবিকাঠি’ বোলারদের হাতে! তাই বোলারদের নানাভাবে অনুপ্রেরণা দিচ্ছিলেন ম্যাশ! শেষ পর্যন্ত নড়াইল এক্সপ্রেসের ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্বেই ১০ রানের দারুণ এক জয় পায় কুমিল্লা। এ জয়ের নেপথ্য নায়ক অধিনায়ক মাশরাফিকেই বলা যায়!

পয়েন্ট টেবিলে এখন শীর্ষে ভিক্টোরিয়ানস। ছয় ম্যাচে তাদের সংগ্রহ ৮। সমান পয়েন্ট রংপুর রাইডার্স ও বরিশাল বুলসেরও। কিন্তু নেট রানরেটে এগিয়ে মাশরাফির দল। ছয় ম্যাচে তৃতীয় হারে চতুর্থ স্থানেই রয়ে গেল ঢাকা ডাইনামাইটস। সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হলো কুমিল্লার।

গতকাল একটা সময় সরল দোলকের মতো দুলছিল ম্যাচের ভাগ্য! কখনো ঢাকা ডাইনামাইটসের দিকে, আবার কখনো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের দিকে। শেষ পাঁচ ওভারে ডাইনামাইটসের দরকার ছিল ৪৪ রান। টি-২০ ক্রিকেটে মোটেও অস্বাভাবিক নয়। তাছাড়া ঢাকার আইকন ক্রিকেটার নাসির হোসেন তখন ক্রিজে। অপরাজিত ছিলেন ২৯ বলে ৩২ রান করে। কয়েক মুহূর্ত ভেবে মাশরাফি বল তুলে দিলেন তরুণ পেসার আবু হায়দার রনির হাতে। প্রথম দুই বলে এক রান। রানের গতিকে তাড়া করতে গিয়ে ওভারের তৃতীয় বলটি কাভারের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন নাসির। টাইমিং না হওয়ায় ক্যাচ উঠে যায়। অনেকটা পথ দৌঁড়ে এসে তালুবন্দী করতে ভুল করেননি ম্যাশ। মূলত তখনই ম্যাচ কুমিল্লার গ্রিপে চলে আসে।

পরের ওভারে মাশরাফি নিজেই বল করতে এসে ডাইনামাইটসের আরেক ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান রায়ান টেন ডেসকাটকে সাজঘরে পাঠিয়ে ডাইনামাইটসকে ম্যাচ থেকেই যেন ছিটকে ফেলে দিলেন।

অথচ গতকাল বোলিং করারই কথা ছিল না মাশরাফির। আগের ম্যাচেই হ্যামস্ট্রিংয়ে সামান্য চোট পেয়েছিলেন। ডাইনামাইটসের বিরুদ্ধে কঠিন ম্যাচ বলে মাঠে নামেন ম্যাশ। কিন্তু পেসার ডলার মাহমুদ ইনজুরিতে পড়ার পর বোলিং করতে বাধ্য হন নড়াইল এক্সপ্রেস। চোট নিয়েও করলেন অসাধারণ বোলিং। চার ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে নেন এক উইকেট।

গতকাল ব্যাটিংয়ে কুমিল্লার শুরুটা হয়েছিল বাজেভাবে। ওপেনার লিটন দাস একপ্রান্ত আগলে রাখলেও আরেক প্রান্ত থেকে একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। ভিক্টোরিয়ানসের জার্সিতে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে যেন ?উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি দুই পাকিস্তানি তারকা ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদ ও শোয়েব মালিক। ইমরুল কায়েস এবং মাশরাফিও দুই অঙ্কের কোটা ছোঁয়ার আগে সাজঘরে ফিরে যান। অপর প্রান্তের উইকেট পতনের দৃশ্য দেখে এক সময় ধৈর্য হারিয়ে লিটনও ৩১ রান করে আউট হয়ে যান। তখন মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়ানসের স্কোর একশও হয় কিনা! কিন্তু পাকিস্তানি ক্রিকেটার আশার জাইদি ও শুভাগত হোম সপ্তম উইকেট জুটিতে ঝড় তোলেন। এই জুটিতে আসে ২২ বলে ৪৫ রান। শুভাগত ১১ বলে ২১ রান আর জাইদি ২৯ বলে ৪৫ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন। এই জুটির ওপর ভর করেই ১৪২ রানের স্কোর করে কুমিল্লা।

তারপর ফিল্ডিংয়ে মাশরাফির ক্যারিশম্যাটিক নেতৃত্ব! কুমার সাঙ্গাকারার মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও হার মানতে বাধ্য হলেন। যদিও জয়টা এক সময় হাতের নাগালেই ছিল ডাইনামাইটসের। সাবলীলভাবেই ব্যাটিং করছিলেন ঢাকার ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু সাঙ্গাকারা, নাসির ও ডেসকাট আউট হওয়ার পর রানের গতি কমে যায়। শেষ দিকে আর তাল মেলাতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা। তাই ছয় উইকেট হারিয়ে ১৩১ রানেই আটকে যায় ঢাকা।

 

কালকের ম্যাচে হেরেও যেতে পারতো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস! যেভাবে একের পর এক ফিল্ডিং মিস- হাতে যাওয়ার পরও বল তালুবন্দি করতে পারেননি ইমরুল কায়েস। রনির একটুখানি অসর্তকতায় যেখানে সিঙ্গেল রানও হওয়ার কথা নয়, সে বলটি হয়ে যায় বাউন্ডারি। ১৯তম ওভারে যেন অমার্জনীয় ভুল করেন শুভাগত হোম। তার হাতের নিচ দিয়ে বল চলে যায় বাউন্ডারিতে। তারপরেও ম্যাচে জয় পায় কুমিল্লা- মাশরাফির মতো অধিনায়ক ছিল বলেই সম্ভব হয়েছে।

রান খরার দিনে ৪৫ রানের হার না মানা ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন আশার জাইদি। তবে ম্যাচের ‘নেপথ্য নায়ক’ অবশ্যই মাশরাফি। 

 

কুমিল্লা ইনিংস : ১৪১/৭, ২০ ওভার (আশার জাইদি ৪৫, লিটন দাস ৩১, শুভাগত হোম ২১, ফরহাদ রেজা ২/২৬, ইয়াসির শাহ ২/২৬)

ঢাকা ইনিংস : ১৩১/৬, ২০ ওভার (নাসির ৩২, সাঙ্গাকারা ৩০, আবু হায়দার ২/৩০)

ফল : কুমিল্লা ১০ রানে জয়ী

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর