বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

আশা জিইয়ে রাখল সিলেট

মেজবাহ্-উল-হক

আশা জিইয়ে রাখল সিলেট

দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে সিলেটের জয় নিশ্চিত করেন শহীদ আফ্রিদি। ম্যাচ শেষে মুস্তাফিজদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন তিনি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিলেট সুপার স্টারসের নাটকীয় জয় নাকি নাটক সৃষ্টি করে জয়! শেষ দৃশ্যে দৃষ্টি রাখলে ম্যাচের নাটকীয় মুহূর্ত সামনে চলে আসে। শেষ ওভারে সিলেটের দরকার ছিল ১০ রান। ফরহাদ রেজার ওভারের প্রথম দুই বলে আসে দুই রান। তৃতীয় বলে ব্যাটসম্যান সোহেল তানভীর আউট। ম্যাচে তখন রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি! জয়ের জন্য সুপার স্টারসের দরকার ৩ বলে ৮ রান। পর পর দুই বলে দুই ছক্কা হাঁকিয়ে উত্তেজনায় জল ঢেলে দিলেন বুম বুম আফ্রিদি।

অথচ জয়টা খুব সহজেই পেতে পারতো সিলেট! এক সময় সিলেটের দরকার ছিল ২৭ বলে ৩৬ রান। হাতে ছিল ৮ উইকেট। ড্রেসিং রুমে শহিদ আফ্রিদি ও মুশফিকুর রহিমের মতো ‘দ্য ফিনিশার’ বসে। আর সেই সহজ ম্যাচে সিলেটের জয়টা আসে শেষ ওভারে গিয়ে।

ঢাকা ডাইনামাইটসের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে পাওয়া এই জয়ে টিম টিম করে জ্বলতে থাকা সিলেটের আশার প্রদ্বীপটা আরও প্রজ্বলিত হলো। সেই সঙ্গে শীর্ষ চারের রাস্তাটা আরেকটু দীর্ঘ হয়ে গেল ডাইনামাইটসের জন্য। তিন দল রংপুর রাইডার্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস এবং বরিশাল বুলসের কোয়ালিফাইং রাউন্ড নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। বাদ হয়ে গেছে চিটাগং ভাইকিংসও। এখন চতুর্থ দল হিসেবে কারা সুযোগ পাচ্ছে তা নিয়ে তৈরি হয়ে গেছে উত্তেজনা।

তবে সিলেটের চেয়ে ঢাকার সমীকরণটা অনেক সহজ। আজকের শেষ ম্যাচে তারা বরিশাল বুলসকে হারাতে পারলেই টিকিট পেয়ে যাবে পরের রাউন্ডের। সে তুলনায় সিলেটের পথটা কণ্টকাকীর্ণই বটে। ঢাকার হার কামনা করার পাশাপাশি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিরুদ্ধে তাদেরকে জিততে হবে বিশাল ব্যবধানে।

প্রথম দুই ম্যাচে ১ রানের ব্যবধানে হার, তৃতীয় ম্যাচে ৬ রানে পরাজিত হওয়ার পর ‘ক্লোজ’ ম্যাচে যেন হারতে ভুলে গিয়েছিল সুপার স্টারস। হারিয়ে ফেলেছিল আত্মবিশ্বাসও। তাই কালকের রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জয়টা সিলেটের কাছে গভীর খনিতে আটকে পড়া শ্রমিকের হঠাৎ অক্সিজেনের সন্ধান পাওয়ার মতো স্বস্তিদায়ক! এ যাত্রায় জীবনটা তো বেঁচেছে এখন উপরে ওঠার মিশন! কালকের ম্যাচে হারলেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ঘণ্টা বেজে যেত দলটির। তখন আজকের ম্যাচটা হয়ে যেত কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতা!

কাল প্রথমে ব্যাটিং করে ৫ উইকেটে ১৫৭ রান করে ঢাকা ডাইনামাইটস। সর্বোচ্চ ৪৮ রান এসেছে অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারার ব্যাট থেকে। জয়ের জন্য টার্গেটটা বড় হলেও ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিক ও রবি বোপারা মিলে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৩ বলে ৮৬ রান করে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু শেষ দিকে অতিরিক্ত ডট বল হওয়ায় সহজ ম্যাচটা কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু আফ্রিদি মাত্র ৭ বলে ১৫ রান করে সুপার স্টারসকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায়।

কালকের ম্যাচে ৪০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সিলেটের ব্যাটসম্যান রবি বোপারা। তবে ম্যাচে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা ছিল ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকের। ৪৪ বলে খেলেছেন ৫১ রানের দারুণ এক ইনিংস। ম্যাচসেরা হতে না পারলেও নিজেকে যেন নতুন করে ফিরে পেয়েছেন রাজশাহীর তারকা ব্যাটসম্যান। এক সময় জাতীয় দলে নিয়মিত খেলতেন। কিন্তু কয়েক বছর থেকে জাতীয় দলের বাইরে। এই টুর্নামেন্টেও নিয়মিত সুযোগ পাননি। প্রথম ম্যাচে খারাপ করায় ৬ ম্যাচে তাকে আর একাদশে রাখা হয়নি। তবে ফিরেই চমক দেখাচ্ছেন। নিজের হাফ সেঞ্চুরি সম্পর্কে জুনায়েদ বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টটা আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জ। অনেক পরিশ্রম করেছি। তার ফল পাচ্ছি। তবে আমি সব সময়ই টি-২০ ক্রিকেটকে উপভোগ করি।  টি-২০ আমাকে অন্যরকম আত্মবিশ্বাস দেয়। যত দিন আমি খেলা উপভোগ করবো ততদিন আমার ব্যাট কথা বলবে। এখন বিপিএল খেলছি এখানেই সেরাটা দিতে চাই।’

কালকের ম্যাচের নাটকীয় শেষ ওভার সম্পর্কে জুনায়েদ বলেন, ‘যেহেতু আফ্রিদি স্ট্রাইকে ছিলেন তাই আশা ছিল। ইয়র্কার দিতে গিয়ে ফরহাদ রেজা ফুলটস দিয়েছেন, আর তাতেই আফ্রিদির ছক্কা।’

 

ঢাকা ইনিংস : ১৫৭/৫, ২০ ওভার, সিলেট ইনিংস : ১৬২/৪, ১৯.৫ ওভার

ফল: সিলেট ৬ উইকেটে জয়ী

চিটাগাং ইনিংস : ১৩৫/৭, ২০ ওভার, বরিশাল ইনিংস : ১৪১/২, ১৫ ওভার

ফল: বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর