শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাশরাফির নেতৃত্বে এক বছর

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মাশরাফির নেতৃত্বে এক বছর

গুগল সার্চ জরিপে সবার উপরে ‘কাটার’ বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। বিস্ময়করভাবে জরিপের শীর্ষ দশে নেই সাকিব আল হাসান। কিন্তু রয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের পর ‘অখ্যাত’ মুস্তাফিজ এখন বিখ্যাত ক্রিকেটার। তাহলে পরিচিত মাশরাফিকে কেন খোঁজা? কারণ আর কিছুই নয়, পারফরম্যান্স। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত অধিনায়ক মাশরাফির যে পারফরম্যান্স, তাতে নতুন করে জানার আগ্রহ জন্মাতেই পারে ক্রিকেটপ্রেমীদের। হয়েছেও তাই। গুগল সার্চ জরিপে মাশরাফির অবস্থান ৯। এখন জরিপ নিয়ে কথা হচ্ছে না। কথা হচ্ছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে। মাশরাফির বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের গ্রাফ এতটাই উপরে যে, বিস্মিত গোটা ক্রিকেটবিশ্ব। এ এক বছরে মাশরাফি যখন, যেখানে হাত দিয়েছেন, তার হাতের পরশে সোনা ফলেছে।

২০১৪ সালে হঠাত্ই তার কাঁধে তুলে দেওয়া হয় দায়িত্ব। এর আগে আরও দুবার টাইগারদের অধিনায়ক ছিলেন। ২০০৯ সালে আহত হলে নেতৃত্ব বদল হয়। এরপর ২০১০ সালে ফের অধিনায়কত্ব হারান। এবার এমন একসময় দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় তার হাতে, যখন হারতে হারতে মাঝদরিয়ায় এসে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ মিলিয়ে ২৫ ম্যাচের ২২টিতেই হারের লজ্জায় সিক্ত হয়েছিল দল। যার দুটি আবার অখ্যাত আফগানিস্তান ও হংকংয়ের বিপক্ষে। সবেধন নীলমণি যে দুটি জয় পেয়েছিল, সেগুলো আবার টি-২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তান ও নেপালের বিপক্ষে। টানা হারে মানসিকভাবে তলানিতে এসে থেমেছিলেন ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে টেনে তুলতে দায়িত্ব দেওয়া হয় মাশরাফির হাতে। এরপর সবই ইতিহাস।

অধিনায়কত্বের প্রথম দুই ধাপে বোঝার আগে সরে দাঁড়াতে হয়েছিল। কিন্তু এবার দায়িত্ব নিয়ে দেখালেন মুদ্রার ওপিঠ। সাফল্য যেন ডাক দিয়ে ধরা দিচ্ছে! জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে শুরু তার নতুন পথচলা। সেই যে সাফল্য ধরা দিল, তার শেষ বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টেরিয়ানসকে চ্যাম্পিয়ন করে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে নতুন করে দায়িত্ব পেলেও টাইগারদের সাফল্যের শুরু বিশ্বকাপ ক্রিকেট দিয়ে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে বিশ্বকাপ আসর বসে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে। মাশরাফির নেতৃত্বে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলে ইংল্যান্ডকে পেছনে ফেলে জায়গা করে নেয় কোয়ার্টার ফাইনালে; যা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা সাফল্য। এরপর ঘরের মাটিতে টানা সিরিজ জিতেছে দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও ভারতকে হারিয়ে। পাকিস্তানকে আবার হোয়াইটওয়াশ করে মাশরাফিবাহিনী। ভারতের বিপক্ষে বিস্ময়কর বোলিং করেন মুস্তাফিজ। পাকিস্তানকে ৩-০-তে হারানোর পর ভারতকে হারায় ২-১ ব্যবধানে। এরপর পিছিয়ে থেকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। টানা তিন সিরিজ জিতে নয় বছর পর বাংলাদেশ জায়গা করে নেয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগে; যা অনুষ্ঠিত হবে ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে। নভেম্বরে ফের হোয়াইটওয়াশ করে জিম্বাবুয়েকে। অধিনায়কত্বের তৃতীয় ধাপ গত ডিসেম্বরে শুরু করেছিলেন জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে। এক বছর পূর্তি করেন জিম্বাবুয়েকে আবারও হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবিয়ে।

গত ডিসেম্বর থেকে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ১৯টি। জিম্বাবুয়ে সিরিজ ধরলে সংখ্যা হবে ২৩টি। জিম্বাবুয়ের সিরিজ শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালের নভেম্বরে। সিরিজ খেলেছে পাঁচটি। সব কটি সিরিজই জিতেছে বাংলাদেশ এবং ১৯ ম্যাচের ১৪টিতে হেসেছে টাইগাররা। শুধু ওয়ানডে নয়, টি-২০ ক্রিকেটেও সাফল্য খুব কম নয় মাশরাফির বাংলাদেশের। সিরিজ জিতেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। প্রোটিয়াদের কাছে হারলেও ড্র করেছে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে। সব মিলিয়ে ২০১৫ সালে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ টি-২০ ম্যাচ খেলেছে পাঁচটি এবং জিতেছে মাত্র দুটি; যার একটি পাকিস্তানের বিপক্ষে। এ তো গেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এবার ঘরোয়া ক্রিকেটের হিসাব দেখা যাক। দেশের সবচেয়ে মর্যাদার ক্রিকেট টুর্নামেন্ট টি-২০। সেখানেও মাঝারি মানের একটি দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে চ্যাম্পিয়ন করার পর তার অধিনায়কত্ব নিয়ে কাটাছেঁড়া চলছে। সবাই প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। কিন্তু মাশরাফি বিষয়টি সেভাবে দেখছেন না। সাফল্যের সব কৃতিত্ব দিচ্ছেন সতীর্থদের, ‘দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর এখনো কঠিন সময় আসেনি। তাই প্রশ্ন ওঠেনি। সবাই প্রশংসা করছেন আমার দল পরিচালনা নিয়ে। তবে এ সাফল্যের পুরো কৃতিত্ব কিন্তু খেলোয়াড়দের। তারা যদি পরিকল্পনামতো ক্রিকেট না খেলতেন, কিংবা দায়িত্ব পালন না করতেন তাহলে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব হতো। ক্রিকেটাররা যখন দায়িত্ব পালন করেন, তখন একজন অধিনায়কের পক্ষে ভালো করা সহজ হয়।’ গুগল সার্চ জরিপে মাশরাফির অবস্থা হয়তো ৯ নম্বরে। কিন্তু এটা সত্যি, সাফল্যের পরিসংখ্যানে কিন্তু সবার উপরে। কোনো সন্দেহ নেই, পরিসংখ্যানই বলছে বাংলাদেশের সেরা ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি। এটাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা মৌসুম।

 

ডিসেম্বর, ২০১৪-ডিসেম্বর, ২০১৫

ওয়ানডে

প্রতিপক্ষ ম্যাচ   জয়   হার

জিম্বাবুয়ে     ৪    ৪    ০

ভারত  ৪    ২    ২

পাকিস্তান     ৩    ৩    ০

দ. আফ্রিকা   ৩    ২    ১

ইংল্যান্ড ১    ১    ০

শ্রীলঙ্কা ১    ০    ১

নিউজিল্যান্ড    ১    ০    ১

আফগানিস্তান১  ১    ০

স্কটল্যান্ড     ১    ১    ০

...............................................................

মোট : ১৯   ১৪   ৫

টি-২০

প্রতিপক্ষ ম্যাচ   জয়   হার

পাকিস্তান     ১    ১    ০

দ. আফ্রিকা   ২    ০    ২

জিম্বাবুয়ে     ২    ১    ১

...............................................................

মোট : ৫    ২    ৩

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর