বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

অলস সময় কাটছে মামুনুলদের

কেরালা থেকে — রাশেদুর রহমান

অলস সময় কাটছে মামুনুলদের

এমন দৃশ্য প্রতি ম্যাচেই আশা করেছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। বাস্তবে ভুটানের বিপক্ষেই শুধু উল্লাসে মেতেছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা

কেরালার রাজধানী ত্রিভানদ্রাম থেকে মাত্র নব্বই কিলোমিটার দূরে কন্যাকুমারি। ভারতের দক্ষিণের বিন্দু। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। পনের কিলোমিটার দূরে বিশ্বখ্যাত কোভালাম সমুদ্র সৈকত। অজস্র নারকেল গাছ, সমুদ্রের তীরে মজবুত পাথরের পাঁচিল আর সুবিশাল ঢেউয়ের রাজ্যে পর্যটকদের বহনকারী দ্রুতগামী স্পিডবোড; সবমিলিয়ে এক স্বপ্নপুরী যেন। ত্রিভানদ্রামের আশপাশে সৌন্দর্য্যের ছড়াছড়ি থাকার পরও ২০ সদস্যের বাংলাদেশ ফুটবল দল কোথাও ঘুরতে যেতে পারছে না। পরাজিত দলের সদস্যদের এত আহ্লাদ থাকতে নেই! বাংলাদেশ দলের বিপরীতে বিজয়ী আফগানিস্তান আর মালদ্বীপ যখনই হোটেলের লবী কিংবা কোথাও বের হচ্ছে, হাসছে খিলখিল করে। উত্সবমুখর পরিবেশ তাদের দলে। অট্টহাস্যে তারা জানান দেয় নিজেদের উপস্থিতি। মামুনুলদের জন্য এ অট্টহাসি সহ্য করার চেয়ে হোটেলের বন্দিত্ব বরণ করাই সম্ভবত সবচেয়ে ভালো।

নাহ্, বিকালে নাসির-ওয়ালিরা বেরিয়ে এলেন হোটেল ছেড়ে। ওয়ালি বলছিলেন, এক রুমে বন্দী থাকতে আর ভালো লাগছে না। এবার একটু মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে চাই। ওয়ালি ফয়সালের মতোই নাসির-রায়হান এবং আরও অনেকে গতকাল বিকালে মুক্ত হাওয়ায় নিঃশ্বাস ফেলতে হোটেলের বন্দিত্ব ছেড়ে বেরিয়েছিলেন কেরালার রাজধানী ত্রিভানদ্রামের পাহাড়ি পথে। কিন্তু ফুটবলারদের দেখে মনে হলো না, তারা কোথাও ঘুরতে যাচ্ছেন। বরং মন খারাপ সবার। একটা টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেওয়ার বেদনা তো আছেই সঙ্গে আছে দেশে ফিরতে দেরি হওয়ার কষ্টও। এরই মধ্যে টিমের অন্য সদস্যরা (৭ জন) দেশে ফিরেছেন। বাকি কেবল কোচিং স্টাফ এবং ফুটবলাররা। তারাও একসঙ্গে দেশে ফিরতে পারছেন না। ১০ জনের একটা দল যাবে ৩১ ডিসেম্বর। বাকিরা যাবেন নতুন বছরের প্রথম দিন।

এই কদিন কী করবেন ফুটবলাররা! সামনেই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। বাংলাদেশের গ্রুপে নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার মতো দল রয়েছে। ওয়ালি তো বলেই দিয়েছেন, এটা মৃত্যুকূপ হতে যাচ্ছে। সামনে এমন গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট রেখে জাতীয় দলকে অলস বসিয়ে রাখার গোপন রহস্যটা ঠিক বুঝা গেল না। এদিকে ফুটবলাররা কিছুটা রানিং করে আর হোটেলকক্ষে গল্পগুজব করেই সময় পার করেছেন গতকাল। এ যেন অনেকটা ‘নাই কাজ তো খই ভাজ’ টাইপের অবসর কাটান! সাংবাদিকদের সঙ্গেও বেশ খোলামেলা আলাপ করেছেন ফুটবলাররা। কেউ কেউ বললেন, দলে কোনো সমস্যা নেই। সবাই একই ছাতার নিচে আছে। কিন্তু ভুটান ম্যাচের ৬৪ মিনিটে জামাল-ইয়াসিনের কাণ্ডটা তাহলে কীসের আলামত! জামাল ভুইয়া যেন অনেকটা বাধ্য হয়েই মিডিয়ার সামনে এসে বলে গেলেন, নাহ্, আমরা বন্ধু ছিলাম। বন্ধুই আছি। মামুনুলও বার বার বললেন, দলে ওরকম কোনো সমস্যা নেই। মাঠে এরকম কিছু হতেই পারে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফুটবল মাঠে এমন ঘটনা সত্যিই নজীরবিহীন। ওয়ালি ফয়সাল অবশ্য আকার ইঙ্গিতে কিছুটা গোমর ফাঁস করে গেলেন। ‘আমি আর জাতীয় দলেই খেলতে চাই না। এখানে কেউ কাউকে সম্মান করতে জানে না। আমরা সিনিয়রদের যেমন সম্মান করতাম এখন আর কেউ ওরকম করে না।’ ওয়ালির এ নীরব অভিমান থেকে অনেক কিছুই স্পষ্ট হতে পারে।

দুই পরাজয় আর এক জয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্ব থেকে এরই মধ্যে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। মামুনুলদের সঙ্গী হয়েছে ভুটান এবং নেপালও। এরই মধ্যে দেশে ফিরে গেছে নেপাল ও ভুটান। তবে বাংলাদেশ দল আটকে আছে কেরালায়। তাও কেবল ফুটবলাররাই। বাফুফের কর্মকর্তা বলতে সঙ্গে আছে কেবল ‘টিম এটেনডেন্ট’ মোহাম্মদ মহসীন! কোচিং স্টাফের মধ্য থেকে দেশে ফিরে গেছেন মারুফুল হক। বাকিরা এখনো কেরালায়ই আছেন। গতকাল সকালেই দেশে ফিরে গেছেন আজমল আহমেদ তপন। তিনি বাংলাদেশ দলের ‘অবজার্ভার’ হিসেবে কেরালা এসেছিলেন। কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করার পর এখন বুঝি তার দূর থেকেও দলকে পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজন পড়েছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর