শিরোনাম
শনিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

ছন্দে ফিরল বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

ছন্দে ফিরল বাংলাদেশ

শ্রীলঙ্কার জালে বল। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম গোল করে এভাবেই উৎসবে মেতে উঠলেন সাখাওয়াত হোসেন রনি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জয় দিয়ে বছর শুরু। এর চেয়ে তৃপ্তিদায়ক ফল আর কী হতে পারে। মাঠে নামার আগের দিন এমিলি বলেছিলেন, উদ্বোধনী ম্যাচে জয় ছাড়া বাংলাদেশ কিছুই ভাবছে না। জয় দিয়ে বছরটা শুরু করতে পারলে চাপটা অনেক কমে যাবে। হ্যাঁ, চতুর্থ বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ শুভসূচনা করেছে। এই ম্যাচ দিয়ে যশোর শামস-উল-হুদা স্টেডিয়ামে আসরের পর্দা উঠেছে। এই প্রথম আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে মাইকেল মধুসূদনের জন্মভূমি যশোরে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভরাডুবি ঘটেছে। শিরোপার লক্ষ্যে কেরালায় গেলেও গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। আগের দুই আসরেও একই পরিণতি ঘটেছিল। এমন ব্যর্থতায় ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে হতাশা নেমে আসে। কিন্তু বাংলার মানুষ ফুটবলকে কতটা ভালোবাসে তা প্রমাণ মিলল যশোরে। ১২ হাজার আসনবিশিষ্ট পুরো গ্যালারিটি ভরে যায়। টিকিটের জন্য দর্শকদের হাহাকারের শেষ ছিল না। লাল-সবুজের পতাকা ভরে যায় স্টেডিয়াম। ২০১৪ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যশোরে প্রীতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। এবার প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হচ্ছে। ভেন্যু বাছাই করে বাফুফে যে ভুল করেনি, তার প্রমাণ দিয়েছে যশোরবাসী।

টুর্নামেন্ট ঘিরে যশোর সেজেছে নতুন রূপে। আরও তিনটি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হবে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুরো যশোরই এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।

সাফে ব্যর্থতার পর মামুনুলরা শপথ নিয়েছেন ঘুরে দাঁড়ানোর। বাফুফে সভাপতিরও আশা কেরালায় যাই ঘটুক না কেন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ছেলেরা ছন্দে ফিরবে। বছরটা শেষ হয়েছিল জয়ে। নতুন বছরে শুরুটা হলো একইভাবে। এটা হতাশার মাঝে কিছুটা স্বস্তি বলা যায়। শ্রীলঙ্কাকে হারানোয় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে পরের ম্যাচগুলোতে মামুনুলরা উজ্জীবিত হয়ে খেলতে পারবে। ফুটবলে শ্রীলঙ্কা এক সময় বাংলাদেশের কাছে পাত্তাই পেত না। সে দেশে ফুটবলে পয়সা কম বলে লাওন পিরিচ, পাকির আলী, মাহিন্দপালা, প্রেমলালদের মতো লঙ্কান তারকারা ঢাকা লিগে খেলতেন। সেই খবর কলম্বোর পত্রিকাগুলোতে গুরুত্বসহকারে ছাপা হতো। কালের বিবর্তনে লঙ্কানরাও হয়ে উঠেছে কঠিন প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশ গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছিল। অথচ শ্রীলঙ্কা ঠিকই জায়গা করে নিয়েছিল শেষ চারে। যদিও সেমিফাইনালটা সুখকর ছিল না। আফগানিস্তানের কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছিল। যাক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ট্রফি জিতবে কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু বছরের শুরুতে জয় পেয়ে সেমির পথটা অনেকটা পরিষ্কার করে ফেলল মামুনুলরা। এখন মালয়েশিয়া বা নেপালকে হারাতে পারলে শেষ চার নিশ্চিত হবে।

সত্যি বলতে কি শুরুতে বাংলাদেশের জয়টা ছিল খুবই জরুরি। দেয়ালে পিঠ ঠেকা ফুটবলারদের ভিতর বাড়তি জেদ কাজ করছিল তা ম্যাচের শুরু থেকে বোঝা যায়। অলআউট ফুটবল খেলে শ্রীলঙ্কাকে দিশাহারা করে রাখে। আক্রমণের পর আক্রমণ দেখে শামস-উল হুদা স্টেডিয়াম উৎসবে মেতে উঠেছিল। ইনজুরি কাটিয়ে এমিলি মাঠে ফেরাতে আক্রমণভাগ সক্রিয় হয়ে ওঠে। ১৭ মিনিটে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। জাহিদ প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল দেন রনিকে। প্লেসিং শটে রনি লঙ্কান গোলরক্ষককে পরাস্ত করলে দর্শকদের উল্লাস আর দেখে কে। কিন্তু এ উৎসব কিছুক্ষণের মধ্যে হারিয়ে যায়। ২১ মিনিটে নাসির উদ্দিন নিষিদ্ধ এলাকায় লঙ্কার মাধুসান ডি সিলভাকে ফাউল করলে থাই রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। ধানসুকা অনায়াসে গোল করে সমতা ফেরান। পরের মিনিটেই বাংলাদেশ আবার এগিয়ে যায়। মামুনুলের কর্নারে ছোট বক্সে হেডে গোল করেন ইয়াসিন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে জীবন গোল করায় ব্যবধান দাঁড়ায় ৩-১।

দর্শকদের আশা ছিল দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ আরও গতিময় খেলা খেলবে। অথচ কেন জানি মামুনুলদের নিস্তেজ মনে হচ্ছিল। ভুল পাসের ছড়াছড়ি, সুযোগটা কাজে লাগিয়ে শ্রীলঙ্কা জ্বলে ওঠে। বার বার তারা বাংলাদেশের রক্ষণভাগে ফাটল ধরাচ্ছিল। বলতে হয় এ সময় ম্যাচ ছিল লঙ্কানদের নিয়ন্ত্রণে। ৫১ মিনিটে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন জামাল ভূঁইয়া। চাতুরাঙ্গা সেই বল পেয়ে ব্যবধান কমালে ম্যাচের উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো বলতে হয়, নিশ্চিত দুটো সহজ সুযোগ নষ্ট করে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচের ভাগ্য কী হবে এ নিয়ে টেনশনে কাঁপতে থাকে দর্শক। শেষ পর্যন্ত ৮৬ মিনিটে শ্রীলঙ্কার রক্ষণভাগের ভুলে খেলার বিপরীতে গোল করে স্বস্তি ফেরান রনি। ৪-২ গোলে জিতে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। আজ মালয়েশিয়া লড়বে নেপালের বিপক্ষে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর