বৃহস্পতিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

তবু আশাবাদী সিদ্দিকুর

মেজবাহ্-উল-হক

তবু আশাবাদী সিদ্দিকুর

বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনে শট নিচ্ছেন দেশের সেরা গলফার সিদ্দিকুর (বাঁয়ে)। টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাফওয়ান সোবহান কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে উপভোগ করেন প্রথম দিনের খেলা —রোহেত রাজীব

টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে দারুণ মিল গলফ খেলার। পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে রোমাঞ্চ। অনিশ্চয়তা থাকে প্রতি মুহূর্তেই। একটুখানি মনোযোগ এদিক-সেদিক হলেই ঘটে যেতে পারে বিপত্তি। প্রথম দিনে পারফরম্যান্স দেখে ফল সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন। আবার কখনো কখনো ভাগ্যই এখানে হয়ে ওঠে জয়-পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক।

দ্বিতীয় বসুন্ধরা বাংলাদেশ ওপেনের প্রথম দিন যেন ভাগ্য বিড়ম্বনারই শিকার হলেন দেশের সেরা গলফার সিদ্দিকুর রহমান। সারা দিন দারুণ খেললেন, ফলটা তারপরেও আশানুরূপ হলো কোথায়! গতকাল কুর্মিটোলা গলফ কোর্সে অন্তত ৫-৬টি ‘বার্ডি’ মিস করেছেন। অথচ এর মধ্যে চারটিও যদি ‘বার্ডি’ হতো তাহলে প্রথম দিন শেষে লিডারবোর্েডর শীর্ষেই থাকতেন সিদ্দিকুর।

১৭ নং হোলের কথাই ধরুন, সিদ্দিকুরের দ্বিতীয় শটটি গিয়ে পড়ল গাছের আড়ালে। সেখান থেকে বাকি তিন শটে ‘হোলে’ বল ফেলতে পারলে ‘পার’ হবে, মানে সমান সমান! মনে হচ্ছিল নিশ্চিত ‘বগি’ খেতে হবে সিদ্দিকুরকে। কিন্তু সেখান থেকে নাটকীয়ভাবে তার তৃতীয় শটটি সরাসরি হোলে গিয়েও পড়েও উঠে গেল। একটুর জন্য মিস হয়ে গেল ঈগল! ১৮ নং হোল সিদ্দিকুরের সবচেয়ে পছন্দের। এই হোলে বলতে গেলে সব সময়ই ‘বার্ডি’ পান তিনি। ৪ পারের এই হোলে মাত্র দুই শটে বল পাটিং গ্রিনে (হোলের চারপাশের সবুজ ঘাসবেষ্টিত অংশ) ফেললেন। কিন্তু পরের শর্টে বল হোলে ফেলতে পারলেন না। নিশ্চিত একটি ‘বার্ডি’ মিস। একইভাবে ১২, ১৩ ও ১৬ নং হোলে ‘বার্ডি’ও মিস হয়েছে গতকাল। ১৪ নং হোলে অপ্রত্যাশিতভাবে বল গিয়ে পড়ে ‘বাঙ্কারে’ (বালুর আস্তরণ)। সেখান থেকে বল তুলতে গিয়ে খেতে হয় ‘বগি’। আসলে গতকাল সিদ্দিকুরের শুরুটাই হয়েছিল বাজেভাবে। প্রথম হোলেই তিনি ‘বগি’ খেলেছেন। ষষ্ঠ হোলেও বগি খেতে হয়েছে। অথচ এই দুই হোলেই নিয়মিত ‘বার্ডি’ পেয়ে থাকেন সিদ্দিকুর। সৌভাগ্যের বিষয় যে, ভাগ্য বিড়ম্বনার পরও প্রথম দিনে ‘৩ আন্ডার পার’ খেলে যৌথভাবে ১৪তম অবস্থানে রয়েছেন। গতকাল বাংলাদেশি গলফারদের এটিই সেরা সাফল্য। ৭১ পারের খেলায় সিদ্দিকুরের সঙ্গে পারের চেয়ে ৩ শট কম খেলে একই অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশের অন্য তিন গলফার জামাল হোসেন হোসেন ভূঁইয়া, জীবন আলী ও আবদুল মতিন। মজার বিষয় হচ্ছে, বসুন্ধরা গলফে জীবন আলীকে নিয়ে কোনো আলোচনাই হয়নি। অথচ গতকাল সকালে বার বার লিডারবোর্ড কাঁপিয়ে দিয়েছেন এই গলফার। শুরুতেই তিন ‘বার্ডি’ মেরে এক সময় দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। কিন্তু শেষ দিকে গিয়ে আর চাপ নিতে পারেননি এই গলফার। তাই যে হোলে ‘বার্ডি’ পাওয়া সহজ সেই ১৬তম হোলে গিয়ে ‘অহেতুক’ ডাবল বগি খেয়ে পিছিয়ে পড়েন। তা না হলে দিন শেষে আরও উপরে থাকতেন জীবন। জামাল ভূঁইয়ার শুরুটা ছিল স্বপ্নের মতো। ‘ব্যাক-৯’ —এ তিন বার্ডি হাঁকিয়ে দৃষ্টি কাড়েন সবার। কিন্তু ‘ফ্রন্ট-৯’ হোলে সাফল্যের ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখতে পারলেন না জামাল। দুই ‘বার্ডি’র সঙ্গে দুটি ‘বগি’ও খেয়ে যান। তবে চমক দেখিয়েছেন গলফার আবদুল মতিন। পর পর দুটি ‘বগি’ খাওয়ার পরও পাঁচটি ‘বার্ডি’ হাঁকিয়ে দিন শেষে ১৪তম অবস্থানে।

‘২ আন্ডার পার’ খেলে বাংলাদেশের আরেক গলফার সাইয়ুম হয়েছেন যৌথভাবে ২৩তম। পারের চেয়ে এক শট কম খেলে সাখাওয়াত হোসেন সোহেল ও বাদল হোসেন হয়েছেন ৩৮তম। পারের সমান শট খেলে ৫৭তম অবস্থানে রয়েছেন তিন গলফার সজীব আলী, লিটন মিয়া ও আকবার হোসেন। কুর্মিটোলা গলফ কোর্সের সেরা তারকা দুলাল হোসেন গতকাল যেন চির পরিচিত কোর্সের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি। পারের চেয়ে এক শট বেশি খেলেছেন। দেশের অন্য তিন গলফার লিটন হাওলাদার, রেজাউল করিম, জাকিরুজ্জামান জাকির ও কায়সার হোসেনও গতকাল এক শট বেশি খেলেছেন।

প্রথম দিন শেষে ‘৭ আন্ডার পার’ খেলে যৌথভাবে লিডারবোর্ডের শীর্ষে রয়েছেন জাপানের সুনীয়া তাকায়াসু ও কোরিয়ার সুমিন লী। থাইল্যান্ডের তারকা গলফার থিতিফুন চুয়াইপরাকং পারের চেয়ে ৬ শট কম খেলে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন।  ৫ শট কম খেলে যৌথভাবে তৃতীয়স্থানে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার মিথুন পেরেরা, ভারতের শুভঙ্কর শর্মা ও থাইল্যান্ডের টাঙ্গামল।  প্রথম দিনে বাংলাদেশি গলফাররা ভালো করতে না পারলেও এখনো স্বপ্ন দেখছেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশিরা ভালোই করবে। এটা কেবল তো প্রথম রাউন্ড। পরের রাউন্ডে দেখা যাক। তবে আজ আমি ছোট ছোট কিছু ভুল করেছি। পরের রাউন্ডে আশা করছি ভালোই করবো।’ প্রথম রাউন্ডে লিডারবোর্ডে নেতৃত্ব দিয়েও ‘কাট’ মিস করেছেন, আবার শুরুতে পেছনের দিকে থাকার পরও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নাটকীয় ঘটনা গলফের ইতিহাসে অনেক আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর