শুক্রবার, ৪ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষা

মেজবাহ্-উল-হক

ক্রিকেটকে আগে বলা হতো অভিজাত খেলা! এখন যে খেলাটি দক্ষিণ এশিয়ায় গণমানুষের খেলায় পরিণত হয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আভিজাত্যের গন্ধটা এখনো ক্রিকেট থেকে পুরোপুরি যায়নি। তাই তো ছোট দল বড় দলের বিভেদটা এখনো প্রকট! ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ওয়ানডেতে বড় দল হিসেবে নিজেদের অবস্থানটা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে। এরপর পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে ঘরের মাঠে সিরিজে হারিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে উত্থান ঘটিয়ে নিজেদের অবস্থানটা আরও পোক্ত করেছে।

এখন টি-২০তেও নিজেদের ‘পৌরুষত্ব’ দেখানোর সময় এসেছে। যদিও আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে আফগানিস্তানের নিচে মাশরাফিদের অবস্থান দেখে অনেকে বাংলাদেশকে ‘ছোট’ দলের কাতারে রাখতেই পারে। কিন্তু ফাইনালে ওঠার পরও কী বাংলাদেশ নিয়ে এমন ধারণা অটুট থাকবে!

সেটা যাদের ভাবার দরকার তারা ভাবুক। কিন্তু প্রতিনিয়ত আগুনে পারফরম্যান্স দেখিয়ে মাশরাফিরা যে সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিচ্ছে এটাই তো অনেক বড় পাওয়া। বাংলাদেশকে নিয়ে সাম্প্রতিক সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছে পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেটার রমিজ রাজা। ধারাভাষ্য দিতে গিয়ে নানাভাবেই বাংলাদেশকে ছোট করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে বাংলাদেশের কী ক্ষতি হয়েছে। বরং আগের দিন রমিজের প্রিয় পাকিস্তান দলকেই বোতলবন্দী করে মাশরাফিরা ফাইনালে উঠে গেছে। গতকাল ভারত-আমিরাত ম্যাচের আগে মিরপুর স্টেডিয়ামে রমিজকে দেখে খুবই নিঃস্ব মনে হলো!

অবশ্য কে বাংলাদেশকে নিয়ে সমালোচনা করলো বা কে অভিশাপ দিল, এসব দেখার সময় নেই। এখন বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময়। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব এখন টাইগারদের হাতের নাগালে। জিততে হবে আর মাত্র একটি ম্যাচ! ফাইনালে প্রতিপক্ষ দল ভারত, তাতে কি? বাংলাদেশ এখন আর কাউকে ভয় পায় না। ক্রিকেটারদের ভেতর এখন জয়ের অভ্যাস গড়ে উঠেছে। নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বেড়ে গেছে।

এ মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটার কে? এমন প্রশ্নে মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সৌম্য সরকার, আল আমিন কিংবা তাসকিনের নামই আসবে। ইনজুরির কারণে মুস্তাফিজুর রহমান এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেছে। তাই কাটার মাস্টারকে আলোচনার বাইরেই রাখা হলো। কিন্তু দলে থাকা সেরা তিন তারকা সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম এবং তামিম ইকবালকে ছাপিয়ে যে অন্য নামগুলো আলোচিত হচ্ছে, এটাই তো বাংলাদেশের উন্নতির পরিষ্কার প্রতিচ্ছবি!

মাশরাফিকে বলতে হয় বাংলাদেশ দলের অক্সিজেন! নিজে খুব দাপুটে পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও দলের নেতা হিসেবে সতীর্থের সেরা পারফরম্যান্সটা কিভাবে বের করে নিয়ে আসতে হয় তা খুব ভালো করেই জানেন তিনি। দলকে কিভাবে উজ্জীবিত করতে হয় তা ম্যাশের চেয়ে আর কে ভালো পারেন!

মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ হচ্ছেন বাংলাদেশ দলের বিপদের বন্ধু! কী বল হাতে, কী ব্যাট হাতে, দল যখনই বিপর্যয়ে পড়েন তখনই বীরচিত্তে আবির্ভূত হন তিনি। সৌম্য সরকার তো নিজের নামের অর্থের সম্পূর্ণ বিপরীত এক চরিত্র। বিশ্বের সেরা সেরা বোলারদের কিভাবে ‘পাড়ার বোলার’ বানিয়ে ফেলতে হয় সেই জ্ঞানটুকু ভালোভাবেই আয়ত্ত করেছেন তিনি। তাসকিন তো সত্যিকারের এক গতি দানব! ১৪৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিতে তার জুড়ি নেই। শেষ ম্যাচে পাক ব্যাটসম্যানরা তো তাসকিনের সামনে দাঁড়াতেই পারছিলেন না।  আল আমিনের বোলিংয়ে নিষিদ্ধ হওয়ার আগে ছিলেন বাংলাদেশের এক নম্বর বোলার। ধীরে ধীরে আবারও নিজেকে আগের অবস্থানে নিয়ে যেতে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। চার ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়ে এবারের এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি এখন তিনি। ফাইনালে বোলিংয়ে বাংলাদেশের বড় ভরসা এখন তিনি।

উদ্বোধনী বোলিংয়ে তাসকিনের সঙ্গে আল আমিনের জুটিটাও দারুণ বনে গেছে। মুস্তাফিজ না থাকলেও ফাইনালে তাদের আগুনে ফর্মের কারণে বোলিংয়ে ভারতের চেয়ে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। তবে ব্যাটিংয়ে এখনো কিছুটা দুর্বলতা রয়েই গেছে। কিন্তু সাকিব-মুশি-তামিম ত্রয়ী তারকা যে ফাইনালেও ঘুমিয়ে থাকবেন তা তো নয়! তা ছাড়া তিন তারকাকে স্বরূপে দেখার আগেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে বাংলাদেশের। টি-২০তে প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠা তো চাট্টিখানি কথা নয়। ওয়ানডের আত্মবিশ্বাসটা টি-২০তে নেই বলে এবারের এশিয়া কাপকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি টুর্নামেন্ট হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা। যদিও মনের সুপ্ত বাসনাকে বাস্তবায়িত করতে তাড়া ছিল। তাই বলে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ! সপ্তাহখানেক আগেও যা ছিল বিলাসী কল্পনা এখন তা চরম বাস্তব! 

এবারের এশিয়া কাপে ইতিমধ্যেই প্রত্যাশার চেয়ে অর্জনের খাতা ঝুলিটা অনেক বড় হয়ে গেছে। তাই ফাইনালে এখন মাশরাফিদের আর হারানোর কিছু নেই। কেবল স্বপ্নকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অপেক্ষা।

আমিরাত ইনিংস : ৮১/৯, ২০ ওভার (সালাইমান আনোয়ার ৪৩, কুমার ২/৮ (অসমাপ্ত)

সর্বশেষ খবর