শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০১৬ ০০:০০ টা

অভিযুক্ত তাসকিন সানি

এবার টার্গেট মুস্তাফিজ!

অভিযুক্ত তাসকিন সানি

বাংলাদেশের বোলিং লাইন-আপের ওপর অদৃশ্য ‘কালো ছায়া’র উপস্থিতিটা অনুমেয়ই ছিল! বোলারদের দাপুটেপনায় টাইগাররা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে অনেকেই ঈর্ষণীয়! আর সেই ঈর্ষাই কিনা কাল হয়ে গেল। আইসিসির সন্দেহের তালিকায় পড়ে গেল বাংলাদেশের দুই বোলার পেসার তাসকিন আহমেদ ও স্পিনার আরাফাত সানি।

বুধবার নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচে জয়ের পরই দুঃসংবাদটা ছড়িয়ে যায়। ম্যাচের দুই  আম্পায়ার ভারতের সুন্দরম রবি ও ইংল্যান্ডের রড টাকার তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে রিপোর্ট করেন জিম্বাবুইয়ান ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের কাছে। পরে পাইক্রফট বিষয়টি আইসিসিকে অবহিত করেন এবং আইসিসি দুই বোলার তাসকিন ও সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহের বিষয়টি জানায় বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকে। এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে। রবিবার প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচ খেলবে ওমানের বিপক্ষে।

বাংলাদেশের দুই বোলারের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহ করার বিষয়টি গতকাল বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা- আইসিসি। জানানো হয়েছে, আগামী ৭ দিনের মধ্যে চেন্নাইয়ে পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে দুই বোলারকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনাটি বাংলাদেশ দলের জন্য যেন ‘বিনা মেঘে বজ পাত’! অনেকে এটিকে চক্রান্তের অংশ হিসেবে দেখছেন! কেননা বর্তমানে তাসকিন আহমেদ কেবল বাংলাদেশ দলেরই অন্যতম সেরা পেসার নন, বিশ্বের সেরা বোলারদের মধ্যে একজন। বর্তমানে উপহাদেশে সেরা গতি তারকা। এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে ১৪৬ কিলোমিটার গতিতে বল করেছেন। মাত্র ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন এক উইকেট। তবে প্রথম তিন ওভারে তার বোলিং ফিগার ছিল ৩-১-২-১। গতি ও নিখুঁত লাইনলেন্থের কারণে খেলতেই পারেননি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। আগের ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ের অন্যতম কারিগড় তাসকিন। বিশ্বকাপে ২১ বছর বয়সী এই তরুণ পেসার যে ‘হট কেক’ হতে যাচ্ছেন, তা কে না জানতো! সে কারণেই কিনা দেওয়া হলো একটা ধাক্কা!

এই মুহূর্তে বাংলদেশের স্পেশালিস্ট স্পিনার আরাফাত সানি। ভারতের মাটিতে তার বোলিং খুব কার্যকর হবে বলেই ধরে নেওয়া হয়। অভিষেকের পর থেকেই ক্যারিশম্যাটিক বোলিং করছেন। বিশেষ করে, ব্রেক থ্রু এনে দেওয়ার ক্ষেত্রে সানি অধিনায়কের প্রথম পছন্দ। বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২৯ বছর বয়সী এই স্পিনারকেও দেওয়া হলো এক ধাক্কা। এক্ষেত্রে নিজেকে সৌভাগ্যবানই মনে করতে পারেন, বাংলাদেশের সেরা বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। ইনজুরির কারণে তিনি ভাগ্যিস নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে মাঠে ছিলেন না। তা না হলে হয়তো তাকে সন্দেহের তালিকায় পড়তো হতো! কেননা টার্গেটের কেন্দ্র তো কাটার মাস্টারই!

চূড়ান্ত পরীক্ষায় দুই বোলার দোষী প্রমাণিত না হলেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলকে বেকায়দায় ফেলা তো সম্ভব! তাই আম্পায়াররা অন্যায়ভাবে সন্দেহ করলেও তো তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উপায় নেই। তবে দুই আম্পায়ারের আড়ালে অন্য কেউ যে কলকাঠি নাড়তে পারে তা তো দিবা-রাত্রির মতো পরিষ্কার। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে এই অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছিল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার ওপর। বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল দুই দেশের দুই বোলারকে- শ্রীলঙ্কার সচিত্রা সেনানায়েকে এবং পাকিস্তানের সাঈদ আজমলকে। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার চেয়েও যে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার অপেক্ষায় বাংলাদেশ তা ক্রিকেটবিশ্ব বুঝতে পেরেছিল এশিয়া কাপেই। দুই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেরা বোলার মুস্তাফিজকে ছাড়াই কাঁপিয়ে দিয়েছিল ভারতকে। বাংলাদেশ এশিয়া কাপের শিরোপা জিততে না পারলেও একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, বিশ্বকাপে যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানোর সামর্থ্য আছে টাইগারদের। সে কারণে মানসিকভাবে দুর্বল করে দিতে এটা ছিল খুব ভালো পন্থা! বাংলাদেশের বোলারদের যদি নিষিদ্ধ নাও করা যায়, পুরো দলকে তো মানসিকভাবে চাপে রাখা যাবে! হয়তো দেখা যাবে, পরীক্ষার বিষয়টি মাথায় থাকার কারণে টেনশনে পরের ম্যাচে বাজে বোলিং করে বসলেন বোলাররা। এমনকি ম্যাচটা হেরে গিয়ে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বের আগেই বিদায় নিতে হলো। সেক্ষেত্রে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে শিরোপা প্রত্যাশীদের রাস্তা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে এমন চক্রান্ত সম্পর্কে অবহিতই রয়েছেন কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। তাই তো গতকাল ধর্মশালায় সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘তারা আমাদের দুই বোলারের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ করেছে। এখন আইসিসি প্রক্রিয়া অনুযায়ী আমরা কাজ করব। তবে তারা খেলতে পারবে। সত্যি এটা বিস্ময়কর ব্যাপার। এটা কিভাবে হতে পারে! তাসকিন ও সানি জানে, তারা সঠিক অবস্থানেই আছে। মানসিকভাবে দৃঢ় অবস্থায় আছে তারা। আশা করি, ম্যাচে এ বিষয়টি কোনো প্রভাব ফেলবে না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর