শুক্রবার, ১ এপ্রিল, ২০১৬ ০০:০০ টা

স্পিন ভয়েই সফর বাতিল করেছিল অস্ট্রেলিয়া!

ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢুকতেই দেখা হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক বন্ধুটির সঙ্গে। যার সঙ্গে প্রথম পরিচয় ২০১১ সালের বিশ্বকাপের সময়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নিউজ করার পর বের হয়ে পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। আমি তাকে হোটেলে পৌঁছে দিয়েছিলাম! তারপর থেকে টুইটার ও ফেসবুকে নিয়মিতই যোগাযোগ হতো। ছয় বছর পর আবার দেখা হয়ে গেল ওয়াংখেড়েতে।

কুশল বিনিময়ের পর দুই দেশের প্রসঙ্গ নিয়ে অনেক কথা! এক সময় সে কিছুটা ক্ষোভের সঙ্গেই বলল, ভারতকে ম্যাচটা উপহার দিয়ে বাংলাদেশ ঠিক কাজ করেনি। পাল্টা প্রশ্ন করি, কে বলল, বাংলাদেশ ম্যাচটা উপহার দিয়েছে ভারতকে! স্মিথ হেসে সাংবাদিক বন্ধু বললেন, আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটে অনেক উন্নতি করেছে। মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকের খেলা অনেক দেখেছি। ২০১৪ সালে মাহমুদুল্লাহ কী দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই না দেখালেন। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচে যখন দরকার তিন বলে দুই রান, এমন সময় মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ ওভাবে ক্যাচ তুলে দিয়ে চলে আসবেন, এটাও আবার বিশ্বাস করতে হবে! জানো, ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তো বাংলাদেশের ওপর ভীষণ ক্ষ্যাপা! ওই ম্যাচে ভারত হেরে গেলে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াই চলে যেত। কারণ ভারতের চেয়ে অস্ট্রেলিয়ার নেট-রানরেট অনেক বেশি!

অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালে গেলে বাংলাদেশের কি? কিংবা ভারত বাদ পড়লেই বা কি আসত যেত! কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে ওই ম্যাচে জিতলে পুরো দেশ যে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০১৪ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে বিতর্কিতভাবে টাইগারদের হারিয়ে দেওয়ার পর প্রতিশোধের একটা মোক্ষম সুযোগ নষ্ট হয়ে গেছে। যদিও বিশ্বকাপের পরই ভারতকে ওয়ানডে সিরিজে হারিয়ে মাশরাফিরা নিজেদের সামর্থ্য বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে এক বিশ্বকাপের জবাব আরেক বিশ্বকাপের দেওয়ার মধ্যে অন্যরকম এক মজা আছে! কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে তীরে এসে তরী ডুবে যাওয়ায় পুরো জাতি হতাশায় ডুবে গিয়েছিল। ক্রিকেটারদের স্বাভাবিক হতেও অনেক সময় লেগেছে।

সেই বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকের মুখে বাঁকা কথা শুনে কার ভালো লাগে? সাংবাদিক বন্ধুটিকে তাই পাল্টা প্রশ্ন করলাম, খেলায় জয়-পরাজয় থাকেই, বাংলাদেশ ক্লোজ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি হয়ে গেছে সত্য, কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হঠাৎ বাংলাদেশ সফর বাতিল করে অস্ট্রেলিয়া কি কাজটা ভালো করেছিল? বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কেন হতাশার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া? এমন প্রসঙ্গের জন্য হয়তো প্রস্তুত ছিলেন না ভদ্রলোক। তাই কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বললেন, না কাজটা মোটেও অস্ট্রেলিয়ার ঠিক হয়নি।

সত্যি কি বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কা ছিল বলেই সেই সফর বাতিল করেছিল অস্ট্রেলিয়া? ভদ্রলোক বললেন, আসলে বিষয়টি তা নয়! বাংলাদেশ তো আর পাকিস্তানের মতো নয়। ওই সময় অ্যাশেজ সিরিজ হারায় এমনিতেই বিধ্বস্ত ছিল অস্ট্রেলিয়া দল। কাছাকাছি সময়ে মাইকেল ক্লার্ক, অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন, উইকেটকিপার ব্রাড হাডিন, ওপেনার ক্রিস রজার্স অবসর নেওয়ায় দলে কোনো ভারসাম্য ছিল না। চোটের কারণে দলে ছিলেন না ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারও। সম্পূর্ণ তরুণ দল নিয়ে বাংলাদেশে গিয়ে প্রথম অ্যাসাইমেন্টেই চ্যালেঞ্জে পড়তে হতো স্টিভ স্মিথকে। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের স্পিন সামলানো মোটেও সহজ ছিল না। এমনিতেই অ্যাশেজ হেরে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছিল ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। যদি বাংলাদেশের কাছেও হারতো তবে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। এ কারণেই কিনা!

অবশেষে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এলো! বাংলাদেশের স্পিনকে ভয় করেই সিরিজটা বাতিল করেছিল অস্ট্রেলিয়া। আইসিসির চাবিকাঠি হাতের মুঠোয় থাকায়, নিরাপত্তার অজুুহাত দেখিয়ে সিরিজটি বাতিল করতে অস্ট্রেলিয়ার কোনো সমস্যাই হয়নি। তবে দুই টেস্ট সিরিজ বাতিলের ঘটনা যে অস্ট্রেলিয়ার নাটক ছিল প্রমাণিত হয়ে যায়, মাস খানেক পরেই যখন তাদের ফুটবল দল বাংলাদেশে আসে! সব কিছু জেনে বুঝেও ‘ছোট’ দল হওয়ায় যেন মেনে নিতে হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। ‘জলে বাস করে কুমিরের সঙ্গে ঝগড়া করে কী লাভ!’ আইসিসি তো আর ফিফার মতো সংগঠন নয় যে সবার জন্য আইন সমান হবে! এখানে ‘জোর যার মুল্লুক তার’!

সব শেষে সাংবাদিক বন্ধু বার বার অনুরোধ করতে থাকেন, তার নাম ও তার মিডিয়ার নাম যেন উল্লেখ না করা হয়! সে কারণেই প্রতিবেদনের কোথাও ভদ্রলোকের নাম লেখা হয়নি।

ভারত ইনিংস : ১৯২/২, ২০ ওভার।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫/০. ১ ওভার। [অসমাপ্ত]

সর্বশেষ খবর