মুস্তাফিজ মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন গোটা ভারত। বন্দনায় মেতে উঠেছেন সুনীল গাভাস্কার নভজোত সিং সিধুঁ, ভিভিএস লক্ষণ, টম মুডিদের মতো সাবেক তারকা ক্রিকেটাররা। আইপিএলের দলগুলো কাটাছেড়ায় ব্যস্ত মুস্তাফিজের ‘রহস্যময়’ ও ‘দুর্বোধ্য’ বোলিংয়ের খুটিনাটি খুঁজতে। মুস্তাফিজুর রহমান; বয়স মাত্র ২০। এক বছর আগেও শোনা যায়নি যার নাম, সে এখন বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত ক্রিকেটার। বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইল, ড্যারেন ব্রাভোদের মতো ক্রিকেটাররা মাঠ মাতাচ্ছেন, কিন্তু এ মুহুর্তে আইপিএলের সবচেয়ে বড় তারকা ক্রিকেটার মুস্তাফিজ। যাকে ডেভিড ওয়ার্ণার, শেখর ধাওয়ান, যুবরাজ সিংরা আদর করে ডাকেন ‘ফিজ’ বলে। যাকে বুঝতে বাংলা ভাষা শিখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লক্ষণ, মুডিরা। ভারতীয় মিডিয়াও নিত্য নতুন সংবাদ লিখছে। জনপ্রিয় পত্রিকা আনন্দবাজার লিখেছে, বহুদিন ধরে মুস্তাফিজের মতো বোলিং দেখা যায় না। সত্যিই সময়টা এখন মুস্তাফিজের।
বিশ্বের সবচেয়ে জমজমাট ক্রিকেট আসর আইপিএলে এই প্রথম খেলছেন মুস্তাফিজ। অভিষেক বছর হলেও নেই কোনো জড়তা। প্রতিপক্ষ দলের তারকা ক্রিকেটার নিয়ে কোনো ভাবনা নেই। ক্রিকেটারদের নিয়ে বাড়তি চাপ নেই বলেই আলো ছড়াচ্ছেন প্রতিটি ম্যাচে। বিশেষ করে শনিবার রাতে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে যে ধারায় বোলিং করেছেন, তাতে মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। ম্যাচে তার বোলিং স্পেল ৪-১-৯-২। টি-২০ ক্রিকেটে যা অবিশ্বাস্য। অথচ গতি, সুইং ও কাটারের মিশ্রনে দুর্দান্ত বোলিং করে ওয়ার্ণারদের আদরের ‘ফিজ’ বোকা বানিয়েছেন শন মার্শদের মতো ক্রিকেটারদের। পাঞ্জাব ম্যাচে তার বোলিংয়ের সবচেয়ে বড় দিক ছিল, ২৪ বলের ১৭টি ডট। যার প্রথম ৯বলে কোনো রান হয়নি। আইপিএলের ক্রিকেট ইতিহাসে স্পেলের প্রথম ৯ বল ডট, রেকর্ডও বটে। প্রথম ৩ ওভারে রান ছিল ৩ এবং শেষ ওভারে রান দেন ৬। ছয় রান দেওয়ার পর ভারতীয় ক্রিকেট কিংবদন্তী সুনীল গাভাস্কার চিৎকার করে ওঠেন, ‘বড্ড খরুচে বোলিং করলো মুস্তাফিজ!’।
আগের ৪ ম্যাচে উইকেট সংখ্যা ৫টি। শনিবার রাতে যখন নামেন, তখনও কেউ ভাবেননি এতটা ‘রহস্যময়’ হয়ে উঠবেন মুস্তাফিজ। তিন স্পেলে বোলিং টানা তৃতীয় জয় উপহার দেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে। অসাধারন পারফরম্যান্সের ফল পান ম্যাচ সেরা হয়ে। ম্যাচ সেরা হওয়ার পর যখন ডায়াসে আসেন, তখন রমিজ রাজার প্রশ্নোত্তোরে বাংলায় বলেন, ‘ম্যাচটি খুব ভালো হয়েছে।’ তার আগে ওয়ার্ণার প্রশংসায় ভাসান মুস্তাফিজকে, ‘ইংরেজী বলতে পারেন না মুস্তাফিজ। কিন্তু তার ক্রিকেট মেধা অসাধারন।’ মুস্তাফিজ ইংরেজী না জানলেও তার পাশে বন্ধু, ফিলোসফার ও গাইড হিসেবে ছায়ার মতো লেগে আছেন অসি ক্রিকেটার ওয়ার্নার। মুস্তাফিজকে সাহস যোগানো ওয়ার্ণার বলেন, ‘ক্রিকেট নো প্রবলেম। টকিং প্রবলেম, ব্যাটিং প্রবলেম’। এই মুহুর্তে মুস্তাফিজের ‘নো প্রবলেম’ সবচেয়ে আলোচিত উক্তি আইপিএলে।
মুম্বাইয়ের বিপক্ষে দুর্বোধ্য বোলিং করা মুস্তাফিজ আইপিএলে ৫ ম্যাচে মুস্তাফিজ রান দিয়েছেন মাত্র ১১৫। ওভার প্রতি গড় ৫.৭৫। টি-২০ ক্রিকেটে যা অবিশ্বাস্য। উইকেট পেয়েছেন ৭টি।
মুস্তাফিজের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স শেষে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ অফিশিয়ালী টুইট করে লিখেছে, প্রশংসা করার জন্য কোনো বিশেষণ খুেঁজ পাচ্ছে না, ‘ম্যাজিক্যাল, মিস্ট্রিরিয়াস ও ম্যাগনিফিসেন্ট! আমরা আমাদের তারকা খেলোয়াড় মুস্তাফিজের প্রশংসার জন্য বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না।’ শুধু বাংলাদেশ কিংবা ভারতের ক্রিকেটার ও আইপিএলের দলগুলোই অনুসরণ করছে না মুস্তাফিজকে। তার কাউন্টি দল সাসেক্সও অনুসরণ করছে। দলটির তারকা ক্রিকেটার লুক রাইট টুইট করেছেন, ‘আমাদের তারকা ক্রিকেটার মুস্তাফিজ ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান দিয়েছেন। কাউন্টির দর্শকেরাও তার অসাধারন বোলিং উপভোগ করবেন।’
মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সে এতটাই মুগ্ধ সানরাইজার্সের কোচ টম মুডি যে, বাংলা শেখা শুরু করেছেন। মাঝেমধ্যেই তিনি বাংলা টুইট করছেন। পাঞ্জাবকে হারানোর পর ইনস্টাগ্রামে একটা ছবি পোস্ট করেছেন মুডি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মুস্তাফিজের মুখে কেক মাখিয়ে দিচ্ছেন সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মেন্টর ভি ভি এস লক্ষ্মণ। ছবির ক্যাপশনে মুডি লিখেছেন, ‘ফিজের জন্য কেক উদযাাপন! ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়ার জন্য মুস্তাফিজ তোমাকে অভিনন্দন। কী অসাধারণ পারফরম্যান্স!’