রবিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে স্বস্তি

মেজবাহ্-উল-হক

একদিন আগেও ছিল উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা। ক্রিকেটার থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী, মিডিয়াকর্মী সবার ভিতরই ছিল দুশ্চিন্তা। সবচেয়ে বেশি টেনশনে ছিলেন এদেশের ক্রিকেটপাগল ভক্তরা। কিন্তু ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশ সফর করার সিদ্ধান্তে সবার মধ্যেই স্বস্তি!

মাঠের ক্রিকেটের আগেই যেন একটা বড় জয় পেয়ে গেছে বাংলাদেশ! এটা ক্রিকেট কূটনীতির জয়। ক্রিকেট বোর্ড তাদের সব সোর্স ব্যবহার করে ইংল্যান্ডকে বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে রাজি করতে পেরেছে। এটা ক্রিকেট বোর্ডের একটা সফলতাই বটে! ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল। তখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তত ভালো ছিল না। হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে চট্টগ্রামে যে হোটেলে ক্যারিবীয় যুবারা ছিলেন সেই হোটেলের সামনে। বাড়তি সতর্কতার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক তত্পরতা চালু করে। এমন তত্পরতা দেশে ক্যারিবীয় তরুণরা ভাবলেন, ঘটনাটি না জানি কতো বড়! তারপর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড অনেকটা ভুল বুঝেই তাদের ক্রিকেটারদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেল। সেটিই ছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে প্রথম কলঙ্কজনক ঘটনা!

এরপর নিরাপত্তা অজুহাতে ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে অস্ট্রেলিয়া। যদিও ওই সফর স্থগিত নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে! কেন না ওই সময় অ্যাশেজ সিরিজে নাস্তানাবুত হয়ে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিল অসিরা। তারপর একসঙ্গে তাদের বেশ কয়েকজন ক্রিকেট অবসর নিয়েছেন। কয়েকজন তারকা ইনজুরিতে পড়েছিলেন। পুরো দলটাই যেন তারকাহীন হয়ে পড়েছিল। অন্য দিকে বাংলাদেশ তখন ছিল ফর্মের তুঙ্গে। ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে সিরিজে হারিয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার উপমহাদেশের খেলার ভীতি তো ছিলই! সব মিলেই সিরিজটা স্থগিত করে অস্ট্রেলিয়া। এরপর অস্ট্রেলিয়াকে অনুসরণ করতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড তাদের মেয়েদের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করে দেয়।

তাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় হামলার পর ক্রিকেটপাগল ভক্তরা যেন ইংল্যান্ড  সিরিজের আশাই অনেকটা ছেড়ে দিয়েছিল। সে কারণেই ইংল্যান্ডের বাংলাদেশে আসার খবরটি অনেক বেশি সাড়া ফেলেছে। ইসিবি তাদের অফিসিয়াল ফ্যানপেজে  বাংলাদেশে  আসার  ব্যাপারে নিশ্চিত করে যে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, তার নিচে বাংলাদেশিদের মন্তব্যে ভরে গেছে। ইসিবি-কে অভিনন্দন জানিয়েছে সবাই। একজন লিখেছেন, ‘আমি বাংলাদেশি। আগে কখনোই ইংল্যান্ডকে পছন্দ করতাম না। কিন্তু এখন বাংলাদেশের পর ইংল্যান্ডই আমার প্রথম পছন্দ। সত্যিই, তোমাদের মন মানসিকতা যে অনেক উদার, তা বুঝিয়ে দিলে। অভিনন্দন ইসিবি।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘এই সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য বাঙালিরা তোমাদের অনেক দিন মনে রাখবে।’ —বাংলাদেশ যে কতটা ক্রিকেটপাগল জাতি, ক্রিকেটের জন্য এদেশের মানুষ যে  কতটা  মুখিয়ে  থাকে,  ক্রিকেটকে যে কতটা  ভালোবাসে তা এখানেই বোঝা যায়!

বিসিবির পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যদিও ইসিবি কখনোই বলেনি তারা আসবে না। হলি আর্টিজানে হামলার পর নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে আসে। তবে বাংলাদেশ সরকারের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তাদের পছন্দ হওয়ায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাদের এই সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা ক্রিকেট বিশ্বের জন্যই স্বস্তির।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটামোদীদের জন্য অপেক্ষা করছে আরও খুশির খবর— ইংল্যান্ডের আগেই ঘরের মাঠে আরেকটি সিরিজ খেলবে টাইগাররা। ইংল্যান্ড আসবে ৩০ সেপ্টেম্বর। আর এই সিরিজটি হবে সেপ্টেম্বরের তৃতীয় কিংবা চতুর্থ সপ্তাহে। আফগানিস্তান নাকি বাংলাদেশে আসার ব্যাপারে রাজিও হয়েছে। যদিও বিসিবি এখনো পরিষ্কার করে কিছু জানায়নি। গতকাল ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কয়েকটি দলের সঙ্গে কথা বলছি। ইংল্যান্ড সিরিজের আগে দুই তিনটা ওয়ানডে খেলার চেষ্টা করছি। এখনো কিছু নিশ্চত হয়নি। তবে দুই তিনটি ম্যাচ খেলার জন্য কোনো না কোনো দল আসতে পারে। কারা আসছে এখনো নিশ্চিত নয়।’

সর্বশেষ খবর