ওয়ানডে ক্রিকেটে সব বড় দলের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্টে তেমন স্মরণীয় জয় নেই। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ২০০৪ সালে সিরিজ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে টাইগারদের। সেবার চট্টগ্রামেই জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথম জয়ের মুখ দেখে। এরপর ঢাকা টেস্ট ড্র করলে অভিষেকের মাত্র চার বছরের মাথায় সিরিজ জেতার কৃতিত্ব অর্জন করে। যা অনেক দেশেরই নেই। আরও কবার টেস্টে জিম্বাবুয়েকে হারিয়েছে। এমনকি ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সিরিজ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে। তবে নিজেদের দ্বন্দ্বে তখন দুর্বল প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নামে দুই দেশ। এই জন্য উৎসবটাও চোখে পড়ার মতো ছিল না।
চট্টগ্রাম থেকে শুরু। সেই চট্টগ্রামে স্মরণীয় টেস্ট জয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ওয়ানডেতে জয় পেলেও টেস্টে ইংলিশদের হারাবে তা ছিল স্বপ্নের ব্যাপার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে যেতে পারে আজই। পঞ্চম দিনে বাংলাদেশ ৩৩ রান তুলতে পারলে ক্রিকেটে নতুন এক ইতিহাস লিখে ফেলবে। দুই উইকেট হাতে থাকায় জয় নিয়ে শঙ্কাও রয়েছে। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে শুধু টিকে আছেন সাব্বির। নবম উইকেটের পতন ঘটলে শফিউল নামবেন। পারবে কী বাংলাদেশ? টেনশনে কাঁপছে পুরো দেশ। কী ঘটবে আজ? দেশবাসী চেয়ে থাকবে চট্টগ্রামের দিকে।
২০০০ সালে বাংলাদেশের শুরু। অন্যদিকে ইংল্যান্ড টেস্ট খেলছে ১৮৭৭ সাল থেকে। ক্রিকেটের অভিভাবক মূলত ইংলিশদেরই বলা হয়। টেস্টে তাদের হারাতে পারলে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে। ওয়ানডে ক্রিকেটে টাইগারদের যে পারফরম্যান্স তাতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতবে এই প্রত্যাশা অনেকেরই ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে হেরে যায়। প্রায় ১৪ মাস পর বাংলাদেশ টেস্ট খেলবে। ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে সুবিধা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা ছিল। ভয়টা আরও বেড়ে যায় হেড কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের মন্তব্যে। সিরিজ শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ক্রিকেটারদের সেই সামর্থ্য নেই যে ইংল্যান্ডের ২০ উইকেট ফেলবে।’ শিষ্যরা কিন্তু যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। দুর্দান্ত বোলিং করে প্রথম ইনিংস ২৯৩ ও দ্বিতীয় ইনিংস ইংল্যান্ডকে ২৪০ রানে অল আউট করে দেয়। অভিষেকেই মেহেদী হাসান মিরাজ দেখান চমক। সাকিব আল হাসানও বড় ভূমিকা রাখেন।সত্যি বলতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এমন পারফরম্যান্স কেউ আশাই করেননি। শেষ ইনিংসে ২৮৭ রানের লিড নেওয়ার পাল্লাটা সফরকারীদের দিকেই ঝুঁকে ছিল। ১৪০ রানের মাথায় সাকিব সাজঘরে ফেরার পর অনেকেই তো ধরেই নিয়েছিলেন একদিন আগেই ইংল্যান্ড জিতে যাবে। কিন্তু মুশফিক ও সাব্বির জুটি চমৎকার খেলতে থাকলে ম্যাচ বাংলাদেশের হাতেই চলে আসছিল। ইংলিশ বোলাররা দিশেহারা হয়ে পড়ছিলেন। মনে হচ্ছিল দুজনই বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেবেন। দলীয় ২২৭ রানের মাথায় মুশফিক আউট হয়ে গেলে ম্যাচের চেহারা পাল্টে যায়। এরপর সাজঘরে ফেরেন মেহেদী ও রাব্বি। ৮ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ এখন ২৫৩। দরকার এখন ৩৩ রানের। বলা কঠিন কী হবে? টেস্টে এমন উত্তেজনা খুব কমই দেখা যায়। স্বীকৃত ব্যাটসম্যান সাব্বির ৫৯ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন। তাই সুন্দর এক সকালের অপেক্ষায় দেশবাসী।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস : ২৪০/১০ (৮০.২ ওভার) স্টোকস ৮৫। সাকিব ৫/৮৫, তাইজুল ২/৪১, মেহেদি ১/৫৮।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস : ২৫৩/৮ (৭৮ ওভার) সাব্বির ৫৯*, ইমরুল কায়েস ৪৩, মুশফিক ৩৯, মুমিনুল ২৭। বাট্টি ৩/৬৫, ব্রড ২/২৬, মঈন আলী ২/৬০ (চতুর্থ দিন শেষে)