সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সেদিনের ম্যাচে আসলে কী ঘটেছিল

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সেদিনের ম্যাচে আসলে কী ঘটেছিল

বিদেশে ফুটবলে পাতানো ম্যাচের প্রমাণ মিললে দলগুলোর শুধু পয়েন্ট কাটা হয় না, বহিষ্কারও করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সামান্য জরিমানা করেই দায়িত্ব শেষ। বলা হয় উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়ায় বড় ধরনের শাস্তি দেওয়া সম্ভব নয়। আসলে এই যুক্তিটি হাস্যকর। কারণ খেলার ধরন দেখেই বুঝা যায় কোনটা পাতানো বা ফেয়ার ম্যাচ। স্বাধীনতার পর লিগ শিরোপা জিততে বা রেলিগেশন সেভ করতে অনেক ক্লাবই পাতানো ম্যাচে অংশ নিয়েছে। কিন্তু বাফুফে এ ক্ষেত্রে বরাবরই নীরব ভূমিকা পালন করছে। আসলে ফেডারেশন শাস্তি দেবেইবা কীভাবে? তারাও তো বিভিন্ন ক্লাবের সঙ্গে জড়িত। অতীতে বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের রুমে পাতানো খেলা ঠিক করা হয়েছে। পুরো পয়েন্ট পেতে সাধারণ সম্পাদকের হাত করা ক্লাব কর্মকর্তাদের হাতে আগাম অর্থও তুলে দিয়েছিলেন। ঘটনাটি ওপেন হওয়ার পরও কিছু হয়নি। সুতরাং বাংলাদেশে পাতানো খেলার বিচার হবে কীভাবে?

পাতানো ম্যাচ ক্রীড়াঙ্গনে ভাইরাস বলেই পরিচিত। বাংলাদেশে এই রোগ কখানো সারানোও যাবে না। যাক পাতানো ম্যাচ নিয়ে গত কয়েক মৌসুম ধরে আলোচনা বা হৈ চৈ হয়নি। এই জন্য লিগ কমিটির কর্মকর্তারা বলেন, পাতানো ম্যাচ বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ‘কয়লা ধুলেও যেমন ময়লা যায় না’ তেমনি পাতানোর অভ্যাসও পাল্টানো যাবে না। এবার জেবি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে বিতর্কিত রেফারিং নিয়ে ঝড় বয়ে গেলেও পাতানো ম্যাচের প্রসঙ্গটি আড়ালেই ছিল। দ্বিতীয় পর্বে বেশ কিছু ম্যাচ ঘিরে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে ১৫ ডিসেম্বর বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঢাকা আবাহনী ও শেখ জামালের ম্যাচ ঘিরে ক্রীড়াঙ্গনে বিতর্কের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। অন্যদের কথা বাদই দিলাম নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাফুফে নির্বাহী কমিটির কয়েক জন সদস্য বলছেন কোনো সন্দেই নেই ম্যাচটি পাতানো ছিল।

আসলে কী ঘটেছিল সেদিনের ম্যাচে? বড় দুই দলের ম্যাচকে ঘিরে কেন এত সন্দেহ? পেশাদার লিগে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জিততে এই ম্যাচে ঢাকা আবাহনীর জয়টা জরুরি ছিল। হারলে তখন চট্টগ্রাম আবাহনীর সমান পয়েন্ট হয়ে যেত। অনিশ্চিত হয়ে পড়ত শিরোপা। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে প্রথমে গোল করে এগিয়েও গিয়েছিল আবাহনী। পরে আবার ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ল্যান্ডিং ও এমেকা জালে বল পাঠালে শেখ জামাল ২-১ গোলে এগিয়ে যায়। এ অবস্থায় নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ। চলছিল ইনজুরি টাইম। মনে হচ্ছিল আবাহনী হেরে যাবে। এই সময়ে আবাহনীর বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। ইনজুরি টাইমে প্রথম মিনিটে সমতায় ফেরালেন দলকে। খেলা শেষ হওয়ার অন্তিম মুহূর্তে আবারও জাল স্পর্শ করলেন নাবিব। হারা ম্যাচ জিতে নাবিব যেন আবাহনীকে নতুন জীবন দিলেন। এ জন্য তিনি প্রশংসা পেতেই পারেন। কিন্তু হঠাৎ করে শেষ মুহূর্তে নেমে নাবিবের এই দুই গোলই ম্যাচকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। সত্যি কথা বলতে কি নাবিব যখন গোল দুটি করেন তখন আবাহনীর খেলা ছিল ছন্দহীন। তা ছাড়া তাকে শেখ জামালের ডিফেন্ডারদের বাধা দিতে দেখা যায়নি। সন্দেহটা তো এখানেই। অন্যরা পাতানোর সন্দেহ করবেন কী? ম্যাচ শেষে স্বয়ং শেখ জামালের দুই বিদেশি ফুটবলার এমেকা ও ল্যান্ডিং অভিযোগ করেছেন পাতানো ম্যাচের। শেখ জামালের ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে আবাহনীকে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ নাকি দিয়েছেন। মাঠে নিজ দলের খেলোয়াড় এর আগে ক্লাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তোলেননি। শুধু তাই নয় দুই বিদেশি ফুটবলার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন এমন নোংরামিতে তাদের ভাবিয়ে তুলেছে সামনে তারা ঢাকায় খেলতে আসবেন কি না।

গতকাল চুন্নুর সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘এই অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ৪০ বছর ধরে আমার বিরুদ্ধে কেউ এ ধরনের অপবাদ দেয়নি। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার ও শেখ জামালের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এই নোংরামির আশ্রয় নিয়েছে। নিজ দলের দুই বিদেশি ফুটবলার সম্পর্কে চুন্নু বলেন, ‘হয়তো বা তাদের স্বার্থান্বেষী মহল বড় অংকের টাকার অফার দিয়েছিল। এখন টাকা পাবে না বলে রাগের মাথায় আবোল-তাবোল বলতে শুরু করেছে তারা। এর সঙ্গে শুধু আমার নয়, ক্লাবের সুনামও জড়িত। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের অ্যাকশনে যাব তার চিন্তা ভাবনা চলছে।’

অন্যদিকে ঢাকা আবাহনী ফুটবল দলের ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপু বলেন, ‘আমার বা দলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠেনি। সুতরাং এ নিয়ে মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। তবে এতটুকু বলতে পারি ফুটবলে আবাহনীর সাফল্য অনেকের সহ্য হচ্ছে না। এবারও শিরোপা জেতার পথে আমরা। এই সাফল্যকে বিতর্কিত করে তুলতে কেউ কেউ উঠেপড়ে লেগেছে। শেখ জামালের বিরুদ্ধে আমরা ফেয়ার ম্যাচ খেলে জিতেছি। এখানে পাতানোর অভিযোগ হাস্যকর। লিগ কমিটির চেয়ারম্যান বাফুফে সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাম মুর্শেদী এ ব্যাপারে এখনো মুখ খোলেননি। গতকাল ফোন করা হলেও ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে ম্যাচ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তবে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ বলেছেন, ‘অভিযোগ যখন উঠেছে তখন অবশ্যই ঢাকা আবাহনী ও শেখ জামালের ম্যাচ পাতানো ছিল কি না তা তদন্ত করা হবে।’

সর্বশেষ খবর