বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের নেলসনে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়ে দল থেকে ছিটকে পড়েছিলেন এনামুল হক বিজয়। তাই বাধ্য হয়েই সে ম্যাচে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করতে হয়েছিল সৌম্য সরকারকে। আহামরি কিছু করতে পারেননি। তার ব্যাট থকে এসেছিল মাত্র ২ রান। তবে সৌম্যর সৌভাগ্যের দরজা খুলে গিয়েছিল সে ম্যাচেই! এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওপেনিংয়ে নিজেকে আলাদা করে চেনালেন সৌম্য। এমন মারকাটারি ব্যাটিং করতে থাকেন যে, এক সময় মনে হচ্ছিল তামিমও তার ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারকেও তুলাধোনা করেছেন ওয়ানডেতে।
এবার আরেক ওপেনার ইমরুল কায়েসের ইনজুরির কারণে টেস্টে প্রথমবারের মতো ওপেন করার সুযোগ পেলেন। সেটাও কিনা সেই নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই। আর প্রথম ইনিংসেই বাজিমাৎ। খেলেছেন ৮৬ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। যে ক্রাইস্টচার্চে পেসাররা ছড়ি ঘোড়ান সেই মাঠে তিনি বোলারদের তুলাধোনা করে ছেড়েছেন। ১০৪ বলের ইনিংসে বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১১টি। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, গতকাল তার ব্যাটিংয়ে ছিল আত্মবিশ্বাসের দ্যূতি। এ যেন ওয়ানডের সেই সৌম্য, যার ব্যাটের সামনে পড়লে বিশ্বের বাঘা বাঘা বোলারদের মনে শঙ্কা কাজ করত।
তিন তারকা ব্যাটসম্যানের ইনজুরির পর এই টেস্টে গুরুদায়িত্ব ছিল তিন সিনিয়র তামিম, সাকিব ও মাহমুদুল্লাহর ওপর। কিন্তু নেতৃত্ব চাপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি তামিম। মাত্র ৫ রানেই তার বিদায়ঘণ্টা বেজে যায়। তামিমের উইকেট দিয়েই বাংলাদেশের ইনিংসের উইকেট পতন শুরু হয়।
এ ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ ফ্লপ। আউট হয়েছেন ১৯ রান করে। তবে সাকিব হাফ সেঞ্চুরি করলেও তার ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি।
আগের টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম যেভাবে কিউই বোলারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন, এ ম্যাচে সেই কৌশলই বেছে নেন সৌম্য। সফলও হয়েছেন। প্রিয় পজিশন ওপেনিংয়ে সুযোগ পেয়েই নিজেকে নতুন করে চেনালেন। তবে আর মাত্র ১৪ রান করতে পারলেই নিজের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়ে যেতেন। তাই আক্ষেপের আগুনে পুড়ছেন। সৌম্য বলেন, ‘ইনিংসটা বড় করতে পারলে আমার জন্য ভালো হতো। এর চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে দলের জন্য অনেক ভালো হতো। আমি আউট হওয়ার পর সাব্বির আর সাকিব ভাই আউট হয়ে গেছেন। আমি আউট না হলে হয়তো তারাও আউট হতেন না। তবে স্কোর বোর্ডে রানও ভালো থাকত।’ নিজের ইনিংস নিয়ে সন্তুষ্ট নন সৌম্য, ‘ওয়ানডে, টি-২০ বা টেস্ট— যে সংস্করণেই হোক আমার রান দরকার ছিল। চেয়েছিলাম আরও রান করব। তাই আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি।’
ক্রাইস্টচার্চের উইকেট ওয়েলিংটনের মতো নয়। খেলার আগে দুই দিন উইকেট ছিল ঢাকা। এমন উইকেটে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করা খুবই কঠিন। কিন্তু গতকাল টসে হারার পর প্রথম ব্যাট করতে হয় বাংলাদেশকে। দিন শেষে ২৮৯ রানের স্কোরকে খারাপ বলার উপায় নেই। গতকাল নিউজিল্যান্ডের পেসার টিম সাউদি ৯৪ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ৪ উইকেট নিয়েছেন ট্রেন্ট বোল্ট। তবে প্রথম দিন শেষে বলার উপায় নেই কে এগিয়ে আর কে পিছিয়ে। তবে বাংলাদেশের স্বস্তি—ক্রাইস্টচার্চের প্রথম দিনে সেই ‘ভয়ঙ্কর’ সৌম্যকে ফিরে পাওয়া।