বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভাবনায় এখন ভারত সফর

মেজবাহ্-উল-হক

ভাবনায় এখন ভারত সফর

নিউজিল্যান্ড সফরে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে টাইগারদের। ওয়ানডে, টি-২০ ও টেস্ট তিন ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। এখন সেই হতাশা ভুলে বাংলাদেশ লড়বে ভারতের বিরুদ্ধে —ফাইল ফটো

খেলোয়াড়দের সব পরিবেশের সঙ্গেই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয়— শীত, গ্রীষ্ম, বৃষ্টি কিংবা তুষারপাত হোক। তাই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাজে পারফরম্যান্সের জন্য কন্ডিশনকে দায়ী করার উপায় নেই। ক্রিকেটাররা দায়ী করছেনও না। কেননা নিউজিল্যান্ড যাওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুই সপ্তাহের অনুশীলন ক্যাম্প করেছিল বাংলাদেশ। তবে এটাও দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে না খেলার পর এই দুই সপ্তাহের ক্যাম্প আর কতটাই বা সহায়ক হয়! তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে উপমহাদেশের দলগুলোর ভালো করার নজির নেই বললেই চলে। তারপরেও দুই-আড়াই বছর টানা ভালো খেলার পর নিউজিল্যান্ডে গিয়ে টাইগাররা যে এমন নাকাল হয়ে পড়বেন, তা অকল্পনীয় ছিল।

এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সে ক্রিকেটাররা নিজেরা হয়তো অনুতপ্ত। তিন ফরম্যাটের ৮ ম্যাচের সব কটিতে হারার পর যেন ক্রিকেটপাগল ভক্তদের মনে একটা ক্ষত তৈরি হয়েছে! তবে এই ক্ষতটা পূরণে একটা সুযোগও পেয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে যদিও টাইগাররা ভালো কিছু করে দেখাতে পারেন।

ভারতের বিরুদ্ধে টেস্টটা শুরু হবে ৯ ফেব্রুয়ারি। নিউজিল্যান্ড থেকে ফেরার পর পরই ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে টাইগারদের। সফরে একটাই ম্যাচ। অনুষ্ঠিত হবে হায়দরাবাদে।

ভারত টেস্টের এক নম্বর দল। ঘরের মাঠে তারা যে কতটা ভয়ঙ্কর তা খুব ভালো করেই বুঝেছে ইংল্যান্ড। ৫ ম্যাচের টেস্টে ইংল্যান্ডকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছেন কোহলিরা।

এক ম্যাচের টেস্টে হয়তো বাংলাদেশকেও উড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা করেই মাঠে নামবে ভারত। কারণ বাংলাদেশে এসে ওয়ানডে সিরিজ হারার কষ্ট তো এখনো তারা ভুলতে পারেননি। তাই হয়তো এক ম্যাচের টেস্টেই সে আক্ষেপটা পূরণ করতে চাইবে। এ কারণে আরও সতর্ক হয়ে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশকে।

টাইগারদের ওপর আক্ষেপ ছিল নিউজিল্যান্ডেরও। তাই তো দেখা গেছে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে মাঠে এবং বাইরে তারা অনেক বেশি সিরিয়াস ছিলেন। প্রথম টেস্টে অসৎ উপায়ও নাকি অবলম্বন করেছিলেন কিউরা। বাংলাদেশ দল ভালো ব্যাটিং করায় ওয়েলিংটনে তারা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে যাতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান সুবিধা করতে না পারে সেজন্য নাকি উইকেট ভিজিয়ে রেখেছিলেন। শুধু কী তাই, টাইগার ব্যাটসম্যানদের ইনজুরিতে ফেলতে তারা শরীর সোজা শট বল করেছেন। যাতে মিস হলেও তা শরীরে আঘাত করে। এছাড়া থ্রু করার সময়ও দেখা গেছে, তামিমদের শরীর সোজা করে তারা বল ছুড়ছেন। এ থেকেই বোঝা যায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য তারা কতটা মরিয়া ছিল।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও নিউজিল্যান্ড সফরে ব্যর্থতার ষোলকলাপূর্ণ করেছেন। ওয়ানডে ও টি-২০র পর টেস্টেও হোয়াইটওয়াশ। এ কারণে রেটিং পয়েন্টও হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। যদিও র‌্যাঙ্কিংয়ে অবস্থানে কোনো নড়চড় হয়নি।

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ গিয়েছিল অনভিজ্ঞ এক বোলিং লাইনআপ নিয়ে। তারপরেও ফিল্ডিং ও ব্যাটিংয়ের তুলনায় বোলিংই ভালো হয়েছে। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংস বাদ দিলে এই সফরে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন ব্যাটসম্যানরা। সবচেয়ে দৃষ্টিকটূ ছিল ফিল্ডিং। একের পর এক ক্যাচ হাত ফসকে বের হয়ে গেছে। দুই টেস্টেই সব মিলে ১৮-২০টির মতো ক্যাচ মিস হয়েছে। ক্রিকেটে যেখানে একটি ক্যাচই ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সেখানে কিনা রীতিমতো ক্যাচ মিসের উৎসব হয়েছে। 

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ ছিল একটি অগোছালো দল। এই সফরে কেন যেন ভাগ্যের কাছ থেকেও বিমাতাসূলভ আচরণ পেয়েছেন টাইগাররা। যেমন সফরের আগেই টেস্টের পরীক্ষিত বোলার পেসার মোহাম্মদ শহীদ ও আরেক পেসার শফিউল ইসলামও ইনজুরির কারণেই যেতে পারেননি। আর নিউজিল্যান্ডে যাওয়ার পর চোট তো ক্রিকেটারদের বন্ধু হয়ে গিয়েছিল। দেশসেরা পেসার কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান দীর্ঘ সময় ইনজুরিতে থাকার পরও নিউজিল্যান্ড সফরে ফিরলেও ফিটনেসের ঘাটতির কারণে তাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছিল। মুশফিকুর রহিম ও ইমরুল কায়েস তো মাঠ থেকে সরাসরি হাসপাতালেই গিয়েছিলেন। যদিও ইনজুরি খুব বেশি গুরুতর ছিল না। তবে শেষ টেস্টে তারা আর খেলতে পারেননি। শেষ টেস্টের আগে অনুশীলনের সময় চোট পেয়েছেন টেস্টের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। এছাড়া ছোটখাটো চোট সমস্যা ছিলই। আর এই সমস্যার বৃত্তে আটকেই ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খেয়েছেন টাইগাররা।  আশার কথা হচ্ছে, ভারত সফরের আগে পুরো দলকেই পাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই নিউজিল্যান্ড সফরের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পুনরায় নতুন পরিকল্পনা করে এগিয়ে যাবে টাইগাররা। মুশফিক-সাকিবদের ভাবনায় এখন শুধুই ভারত সফর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর