বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

রোনালদোর হ্যাটট্রিকে সেমিতে রিয়াল

আসিফ ইকবাল

রোনালদোর হ্যাটট্রিকে সেমিতে রিয়াল

দিয়াগো ম্যারাডোনার সেই কান্না এখনো ভাইরাল! ১৯৯০-এর বিশ্বকাপ ফাইনালে জার্মানির কাছে পেনাল্টিতে হেরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন আজেন্টাইন ফুটবল তারকা। হার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ম্যারাডোনা। বারবার বলছিলেন, আর্জেন্টিনার জয় ছিনিয়ে নিয়েছে মেক্সিকান রেফারি এদওয়ার্দো কোডেশাল। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে বিতর্কিত পেনাল্টি দিয়েছিলেন মেক্সিকান রেফারি। শুধু জার্মানি-আর্জেন্টিনা ফাইনালই নয়, রেফারিং নিয়ে বিতর্ক চলছে যুগে যুগে। চলমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগেই সমালোচনার ঝড় বইছে রেফারিং নিয়ে। সেরা ১৬-তে প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের বিপক্ষে বার্সেলোনার অবিশ্বাস্য জয়ের ম্যাচেও রেফারির বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে কথা উঠেছে। এবার সমালোচনার ঝড় বইছে রিয়াল মাদ্রিদ-বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচের দ্বিতীয় লেগে রেফারিং নিয়ে। পরশু রাতে চারবারের বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর হ্যাটট্রিককে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ৪-২ গোলের বড় জয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে গত আসরের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু জঘন্য রেফারিং বিতর্কিত করেছে ম্যাচটিকে। রোনালদোর অবিশ্বাস্য হ্যাটট্রিকেও আঁচড় কেটেছে একই সঙ্গে। বিতর্কিত রেফারিং সত্ত্ব্বেও বার্নাব্যুতে অবিশ্বাস্য ফুটবল খেলে এখন টানা শিরোপা জয়ের অপেক্ষায় অল গ্যালাকটিকোরা। দুই ম্যাচ জিতে গোলের পার্থক্য ৬-৩।

বায়ার্নের মাটিতে প্রথম লেগে ২-১ গোলে জিতেছিল রিয়াল। অ্যাওয়ে ম্যাচ জেতায় সেমির পথে এক পা দিয়েই রেখেছিল স্প্যানিশ জায়ান্টরা। ঘরের মাঠে দল জিতবে-এ আশায় দর্শকে ভরে গিয়েছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। সবার হাতে দলের প্রিয় পতাকা। ম্যাচ শুরু থেকেই সমর্থকরা আগাম জয়োৎসব করতে থাকেন। বিতর্কের গন্ধ থাকলেও ১২০ মিনিটের ম্যাচে হতাশ হননি সমর্থকরা। যদিও নির্ধারিত ৯০ মিনিট ১-২ গোলে পিছিয়েছিল স্বাগতিকরা। এরমধ্যে ৮৪ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ভিদাল। যা বিতর্কিত করেছে ম্যাচকে। ভিদালের লাল কার্ডে অতিরিক্ত ৩০ মিনিট ১০ জনের বায়ার্ন খেলে। কার্লোস আনচেলোত্তির বায়ার্ন শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠেনি। অতিরিক্ত সময়েই হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রোনালদো। হ্যাটট্রিক গড়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলের সেঞ্চুরি পূরণ করেন সিয়ার্স সেভেন।

ঘরের মাঠ, পরিচিত পরিবেশ-তারপরও গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয় রিয়াল। প্রথমার্ধে তাই আক্রমণের ধারটা বেশিই ছিল সফরকারী বায়ার্নের। জয় পেতে আনচেলোত্তির বায়ার্ন ছিল মরিয়া। জয়ের ক্ষুধায় পাগল বায়ার্ন অলআউট ফুটবল খেলতে থাকে রেফারির বাঁশি বাজতেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি। ফলে প্রথমার্ধ গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়। দ্বিতীয়ার্ধে তেড়েফুরে খেলতে থাকে জার্মান ক্লাবটি। ৫০ মিনিটে রুবেনের শট গোল লাইন থেকে বাঁচান রিয়ালের ব্রাজিলিয়ান তারকা মার্সেলো। তিন মিনিট পর হেসে ওঠেন আনচেলোত্তি। ৫৩ মিনিটে পেনাল্টিতে বায়ার্নকে এগিয়ে নেন দলের পোলিশ স্ট্রাইকার লেভানদোভস্কি (১-০)। বাঁ প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়ার মুহূর্তে ডাচ উইঙ্গার রুবেনকে ফেলে দেন রিয়ালের রক্ষণভাগের কাসেমিরো। রেফারি পেনাল্টি দেন। এগিয়ে যাওয়ার পর আক্রমণের ধার বাড়িয়ে দেয় জার্মান জায়ান্টরা। ৫৭ মিনিটে নিশ্চিত গোল মিস করেন আর্তুরো ভিদাল ক্রসবারের ওপর দিয়ে মেরে। ৭৬ মিনিটে সমতা আনে রিয়াল। ডান প্রান্ত থেকে বদলি খেলোয়াড় কাসেমিরোর ক্রসে দুর্দান্ত হেডে সমতা আনেন রোনালদো (১-১)। সমতা ফেরার পর দলীয় সমর্থকের যখন উৎসবমুখর, তখনই অধিনায়ক সার্জিও র‌্যামোস আত্মঘাতী গোল করে স্তব্ধ করে দেন বার্নাব্যুকে। ৭৭ মিনিটে ডি-বক্সে বল বিপদমুক্ত করতে যেয়ে নিজ জালে পাঠিয়ে দেন রামোস (১-২)। ৮৪ মিনিটে অ্যাসেনসিওকে মার্ক করতে যেয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন ভিদাল। অথচ রিপ্লেতে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখার মতো ট্যাকল করেননি ভিদাল। এরপর ১০ জনের দল নিয়ে নির্ধারিত সময় শেষ করে বায়ার্ন ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে।

দুই লেগ মিলিয়ে দুই দলের গোল ৩-৩ হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী আরও ৩০ মিনিট খেলা হয়। তখনই দেখা মিলে রোনালদোর জাদুকরি ফুটবলের। ম্যাচের ১০৪ মিনিটে সমতা আনেন রোনালদো। রামোসের উঁচু করে বাড়ানো বল বুক দিয়ে নামিয়েই ভলিতে সমতা আনেন দলের পর্তুগিজ স্ট্রাইকার (২-২)। বায়ার্নের ফুটবলাররা অফসাইডের আবেদন করেন। টিভি রিপ্লেতেও দেখা গেছে পরিষ্কার অফসাইড ছিলেন রোনালদো। ১০৯ মিনিটে হ্যাটট্রিক করেন রোনালদো (৩-২)। প্রতিপক্ষের রক্ষণভাগের দুজনকে কাটিয়ে  মার্সেলো নিজে গোল না করে বাড়িয়ে দেন ফাঁকায় দাঁড়ানো রোনালদোকে। এরপর ঠাণ্ডা মাথায় গোল করে ইতিহাস লিখেন চারবারের বিশ্বসেরা ফুটবলার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি আসরে এটা রোনালদোর সপ্তম এবং সব মিলিয়ে ১০০ নম্বর গোল। ১১২ মিনিটে দলের চতুর্থ ও ছয় নম্বর গোলটি করেন অ্যাসেনসিও (৪-২)।

অ্যাসেনসিওর গোলের পর আর থেমে থাকেনি বার্নাব্যু। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নে বিভোড় সমর্থকরা রোনালদোর স্তুতি গাইতে গাইতে বাড়ি যান।  

সর্বশেষ খবর