শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

বোলিং নেতৃত্বে স্পিনাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

বোলিং নেতৃত্বে স্পিনাররা

মাসিক বেতন নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ফের বিবাদে জড়িয়েছেন স্টিভ স্মিথরা। গতকালই ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ার কথা ক্রিকেটারদের। ফলে নতুন চুক্তি সম্পাদনের আগে বেকার বলাই যাবে স্মিথদের। এমন জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশ সফরে দুই টেস্ট খেলতে আসার আগে। বেতন বাড়ানোর জন্য বহুবার অনুরোধ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা। কিন্তু সে দেশের ক্রিকেট বোর্ড এ নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায়নি। স্মিথরা অবশ্য বারবার বিষয়টি নিয়ে ভাবতে বলেছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে। এমন জটিল পরিস্থিতি নিয়েই পূর্ণ শক্তির দল ঘোষণা করেছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ২৭-৩১ আগস্ট টেস্ট দিয়ে শুরু হবে সিরিজ। অস্ট্রেলিয়ার দল ঘোষণা হলেও স্বাগতিক বাংলাদেশ এখনো অনুশীলনে নামেনি। কিন্তু প্রাথমিক দল দিয়েছে বিসিবি। ১০ জুলাই শুরু মুশফিক বাহিনীর অনুশীলন। এরপরই ঘোষিত হবে  চূড়ান্ত দল। ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ ড্র করেছিল স্পিন উইকেট বানিয়ে। সেই আত্মবিশ্বাসেই অস্ট্রেলিয়াকে বধ করতে এবারও বানানো হবে স্পিন সহায়ক উইকেট। সেই উইকেটে স্বাগতিকদের বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিবেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ও মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনের সঙ্গী হিসেবে থাকবেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। সর্বশেষ চার সিরিজে তিন স্পিনারের উইকেট ৭৬টি। এই পরিসংখ্যানই বলছে নেতৃত্বে থাকছেন।

ঈদের আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে দেশে ফিরেছে টাইগাররা। প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিম ইকবাল, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকরা ভালো ব্যাটিং করেছেন। কিন্তু বোলাররা ছিলেন নির্বিষ। ফলে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে টাইগারদের বোলিং নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি, শুভাশিষ রায়দের নিয়ে। কিন্তু গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম কিন্তু আত্মবিশ্বাসী, ‘চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বোলাররা ভালো বোলিং করেননি সেটা ঠিক বলব না। তবে আরও ভালো বল করা উচিত ছিল। আর অস্ট্রেলিয়া সিরিজে আমার বিশ্বাস হবে স্পিন সহায়ক। সিরিজে সাকিব, মিরাজ, তাইজুলরাই বোলিং নেতৃত্বে থাকবেন বলে মনি করি। সুতরাং অস্ট্রেলিয়াকে কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হবে।’ গত বছরের নভেম্বরে ঘরের মাঠে মিরাজ ও সাকিব মিলে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিলেন ইংল্যান্ডকে। দুই টেস্ট ম্যাচের সিরিজ ড্র হয়েছিল ১-১ ব্যবধানে। চট্টগ্রামে ইংল্যান্ড জিতেছিল ২২ রানে এবং মিরপুরে বাংলাদেশ ১০৮ রানে। সিরিজে অভিষেক হয়েছিল মিরাজের। অভিষেক সিরিজেই ১৯ উইকেট নিয়ে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিলেন অ্যালিয়েস্টার কুকদের। চট্টগ্রামে ৭ উইকেট পেলেও মিরপুরে নেন ১২ উইকেট। সিরিজে ১২ উইকেট নেন সাকিবও। দুজনে মিলে উইকেট নেন ৩১টি। যা যে কোনো দেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্পিনারদের সেরা সাফল্য। সিরিজে ৭ উইকেট পেয়েছিলেন তাইজুল ইসলাম। তিন স্পিনারের উইকেট সংখ্যা ছিল ৩৮টি। প্রতিপক্ষে ৪০ উইকেটের ৩৮টিই ছিল স্পিনারদের! ভাবা যায়? কিন্তু এটাই সত্যি। সেজন্যই স্টিভ স্মিথদের জন্য ঘূর্ণি উইকেট বানানো হবে—এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

সাকিবের ফর্ম নিয়ে চিন্তিত নানাজন। পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ মিলে ছন্দেই আছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ২০১৬-১৭ মৌসুমে চার সিরিজে সাকিবের উইকেট ২৯টি। সব মিলিয়ে গত ১০ টেস্টে তার উইকেট ৩৪টি। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের বিপক্ষে তিনটি টেস্ট শেষই হতে পারেনি। ৪৯ টেস্টে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১৭৬টি। দেশের বোলারদের মধ্যে উইকেট সবচেয়ে বেশি। আরেক স্পিনার মিরাজের পরিসংখ্যানও সমৃদ্ধ। ৭ টেস্টে উইকেট ৩৫টি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে ১৯ উইকেট। পরের ৫ টেস্টে ১৬টি। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অধিনায়ক মুশফিকের ট্রাম্প কার্ড মিরাজকেই। মিরাজ আসার পর একটু আড়ালে পড়ে গেছেন বাঁ হাতি স্পিনার তাইজুল। ১৩ টেস্টে ৪৮ উইকেট নেওয়া তাইজুলের মূল অস্ত্র টার্ন। যা স্মিথ, ওয়ার্নার, ওসমান খাজাদের বিপদে ফেলতেই পারে।

ঘরের মাঠ, সর্বশেষ সিরিজগুলোর পরিসংখ্যান বলছে বাংলাদেশের সাফল্য-ব্যর্থতার পুরোটাই নির্ভর করছে তিন স্পিনারের ওপর। গত চার সিরিজের ৭ টেস্টে সাকিব, মিরাজ, তাইজুলদের মোট উইকেট সংখ্যা ৭৬টি। ৭ টেস্টে সাকিবের উইকেট ২৯টি, মিরাজের ৩৫টি এবং তাইজুল ৪ টেস্টে নিয়েছেন ১২টি। পরিসংখ্যানের বিবেচনায় বলাই যায়, বাংলাদেশের বোলিংকে নেতৃত্ব দিবেন সাকিব, মিরাজ।

সর্বশেষ খবর