শুক্রবার, ২১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

এক ফেডারেশনে দুই নীতি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

এক ফেডারেশনে দুই নীতি

কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী

ফুটবলে বিজয় উৎসব এখন ভাবাই যায় না। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী জাতীয় দল। ২০১০ সালে সাফ গেমসে সোনা জেতার পর ফুটবলে সাফল্যই আসেনি। তবে কিশোর ফুটবলাররা ২০১৫ সালে সাফ টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতে দেশকে উৎসবে ভাসিয়ে ছিল। সিলেটে ম্যাচ শেষে কিশোরদের বাঁধভাঙা উৎসব ছিল চোখে পড়ার মতো। কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানীকে মাথায় তুলে যে নাচানাচি হয়, সেই দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ যেন বিশ্বকাপই জয় করে নিয়েছে।

সেই অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ ফুটবল শুরু হচ্ছে আগামী মাসেই। তবে শুধু জিলানীর দেখা মিলবে না। তিনি এখন নিষিদ্ধের তালিকায় চলে গেছেন। এমনকি বাফুফের তালিকাভুক্ত কোচের নাম থেকে জিলানীকে বরখাস্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। কী এমন দোষ করেছিলেন জিলানী যে এত বড় শাস্তি পেতে হবে তাকে? ঘটনা সেই পাতানো ম্যাচ। যা বাংলাদেশের ফুটবলে চেনা হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই। ঘটনা ঘটে সিনিয়র ডিভিশন ফুটবলকে কেন্দ্র করে। ফ্রেন্ডস সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ও ঢাকা ইউনাইটেড পাতানো ম্যাচে অংশ নেয়। বিষয়টি প্রথমে আমলেই নেয়নি বাফুফে। কিন্তু অন্য দলগুলো সোচ্চার হওয়ায় ও ফিফার কাছে নালিশের হুমকি দেওয়ার পর কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। প্রমাণও  মেলে ম্যাচ পাতানোর। কিন্তু জিলানী তো আর কোনো দলের খেলোয়াড় বা কোচ ছিলেন না। তাহলে তাকে কেন দোষী সাব্যস্ত করা হলো। জিলানী বাফুফের তালিকাভুক্ত কোচ হয়েও ফ্রেন্ডস সোশ্যালের কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সময়ে মিডিয়ার কাছে পাতানো ম্যাচের কথা অস্বীকার করেন জিলানী। তাই তাকে শাস্তি পেতে হবে। পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জড়িত থাকলে জিলানীর শাস্তি হতেই পারে। এ নিয়ে কারও আপত্তি নেই। কিন্তু সব কর্মকর্তা কি পাতানো ম্যাচের কথা জানবেন? এ জঘন্য অপরাধ করা হয় খুব গোপনে। বাফুফের অধিকাংশ কর্মকর্তাই এখন সাবেক ফুটবলার। তারা যখন যে ক্লাবে খেলতেন তখনো পাতানোর অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত করার সময় খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা স্বীকার না করায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ একসময়ে ফুটবলে পাতানো ম্যাচের ছড়াছড়ি ছিল। অভিযোগ উঠেছে, কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের সময় চা-নাস্তা খেয়ে সব শেষ। কোনো দল শাস্তি পেয়েছে এর কোনো নজির নেই। এখন পেশাদার লিগে কি পাতানো ম্যাচ হয় না?

সিনিয়র ডিভিশনে ঠিকই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। দুই দলকে দ্বিতীয় বিভাগে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জিলানী জড়িত থাকলেও তালিকাভুক্ত কোচের এ ধরনের ভূমিকা মেনে নেওয়ার মতো নয়। তবে কথা উঠেছে, বাফুফে তো আগে থেকেই জানত জিলানী সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের সঙ্গে জড়িত। শর্তভঙ্গ করায় বাফুফে কি কখনো তাকে সতর্ক করেছিল? বাফুফের নির্বাহী কমিটির অনেকে তো কোনো কোনো ক্লাবের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে আবার অনেক ক্লাব আপত্তিও তুলেছিল। শুধু তাই নয়, কেই কেউ আবার রেফারির সঙ্গে অশোভন আচরণও করেছেন। সব দেখে এখানে কেন নীরব বাফুফে? জিলানীর শাস্তি নিয়ে কেউ আপত্তি তুলছে না। প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে অন্যদের অন্যায় ঢাকা পড়ে যাচ্ছে কেন? তাহলে কি এক ফেডারেশনে দুই নীতি চলছে? তা ছাড়া জিলানী যদি সাবেক সুপারস্টার ফুটবলার হতেন বাফুফে কি এমন ব্যবস্থা নিতে পারত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর