টেস্ট ক্রিকেট যেন বাংলার ষড়ঋতু! সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে ফেলে রূপ! তবে ঋতু বৈচিত্র্য নির্দিষ্ট সময় অন্তর ঘটলেও টেস্টের রূপ বদলায় আকস্মিক! ঠিক শরতের আকাশের মতো। সকালে মেঘাচ্ছন্ন, দুপুরে রোদ, আবার দেখা যায় বিকালেই ঝুম বৃষ্টি! দ্বিতীয় দিন শেষে যেখানে চালকের আসনে ছিল বাংলাদেশ, তৃতীয় দিন শেষে সেখানে হারের শঙ্কা! তবে এখন জয়ের রাস্তা খোলা আছে দুই দলের সামনেই। অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন আর মাত্র ১৫৬ রান, আর বাংলাদেশের দরকার ৮ উইকেট। কে হাসবে বিজয়ের হাসি বাংলাদেশ না অস্ট্রেলিয়া?
অস্ট্রেলিয়ার মতো টেস্ট সেরা দলের দলের বিরুদ্ধে জিততে হলে দাপুটে পারফরম্যান্সের সঙ্গে সৌভাগ্যের ছোঁয়াও প্রয়োজন। গতকাল মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত ম্যাচটা বাংলাদেশের হাতের মুঠোয় ছিল। দিনের পরের দুই সেসনেই বদলে যায় ম্যাচের রঙ। দুর্ভাগ্য যেন অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরে ছিল বাংলাদেশকে। তা না হলে কেন দুর্দান্ত ছন্দে ব্যাটিং করা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে এমনভাবে আউট হতে হবে! কিংবা তামিমের আউটের কথাই চিন্তা করুন! স্পিন স্বর্গে যেখানে স্পিনাররাই লাইন খুঁজে পাচ্ছিলেন না সেখানে পেসার প্যাট কামিন্সের বলে সাজঘরে ফিরতে হলো ড্যাসিং ওপেনারকে। অসি পেসারের বল এমনভাবে আলতো করে তামিমের গ্লাভসে চুমু দিয়ে কিপার ম্যাথু ওয়েডের তালুবন্দী হলেন তা আম্পায়ারও বুঝতে পারেননি। পরে রিভিউ নিয়ে ড্যাসিং ওপেনারকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়া। মুশফিকের আউটটা তো আরও দুর্ভাগ্যজনক! ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সাব্বির রহমানকে নিয়ে ৪৩ রানের দারুণ জুটি গড়েছিলেন টাইগার দলপতি। দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। দলীয় ১৮৬ রানের মাথায় ৪১ রান করে নন-স্ট্রাইকিং প্রান্তে মুশি। সাব্বির বাউন্ডারির আশায় সজোরে ব্যাট চালালেন। রান নেওয়ার জন্য মুশফিক ক্রিজের বাইরে চলে আসেন। কিন্তু বোলার লিয়নের হাতে লেগে বিদ্যুৎ গতিতে বল গিয়ে লাগে স্ট্যাম্পে! মুশফিক আউট। তারপর সেই ১৮৬ রানেই পড়ে যায় আরও দুই উইকেট। নাসিরের পর সাব্বিরও আউট হয়ে যায়। ১৮৬/৫ থেকে হঠাৎ স্কোর হয়ে যায় ১৮৬/৮! সেখানেই ব্যাকফুটে চলে যায় বাংলাদেশ। তারপরেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২২১ রানের পুঁজি পায় মেহেদী মিরাজের দাপুটে ব্যাটিংয়ে। মিরাজ নিজে করেন ২৬ রান এবং শেষ দুই জুটিতে শফিউল ও মুস্তাফিজকে নিয়ে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন ৩৫ রান। অথচ চার স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান- সৌম্য, ইমরুল, সাব্বির ও নাসির প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ। সৌম্য দুই ইনিংস মিলে করেছেন মাত্র ২৩ রান। মুমিনুলকে বসিয়ে রেখে একাদশে নেওয়া হয়েছিল ইমরুলকে। কিন্তু সেই ইমরুল দুই ইনিংস মিলে করেছেন মাত্র ২ রান। প্রথম ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি, দ্বিতীয় ইনিংসে যাওয়া আসার মিছিলে যোগ দিয়েছেন। অনেক দিন দলে সুযোগ পাওয়া নাসির প্রথম ইনিংসে দারুণ চেষ্টা করেছিলেন। তার ব্যাট থেকে এসেছিল ২৩ রান। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে রানের খাতাই খুলতে পারেননি। সাব্বির প্রথম ইনিংসে শূন্য। দ্বিতীয় ইনিংসে সম্ভাবনা জাগিয়েও ২২ রানের বেশি করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে মাত্র ২৬৫ রানের টার্গেট দিয়েছে বাংলাদেশ।