শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হঠাৎ ইনিংস ঘোষণা প্লেসিসের

মেজবাহ্-উল-হক

হঠাৎ ইনিংস ঘোষণা প্লেসিসের

মুস্তাফিজুর রহমানের বাউন্সার ঠিকমতো খেলতে না পেরে ১৯৯ রানে সাজঘরে ফেরেন ডিন এলগার। আউট হওয়ার পর হতাশায় ভেঙে পড়েন প্রোটিয়া এই ওপেনার —এএফপি

এ যেন ‘টাইমলেস’ যুগের টেস্ট! ব্যাটসম্যানরা যে কদিন ইচ্ছা ব্যাট করবেন! প্রতিপক্ষের বোলার-ফিল্ডারদের যত বেশি খাটিয়ে নেওয়া যায়! পচেফস্ট্রুম টেস্টে দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশন দেখে তাই মনে হচ্ছিল। কিন্তু বিকালে হঠাৎ ৪৯৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দেন ফাফ ডু প্লেসিস।

প্রথমে অবাক লাগলেও একটু পরে দেখা যায় সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছেন তিনি। কেননা কাল শেষ বিকালে পচেফস্ট্রুমের তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। আকাশও মেঘলা ছিল। এই সুযোগে মাত্র ৩৬ রানেই বাংলাদেশের দুই ওপেনারকে বিদায় করে দেন দুই পেসার মরনে মরকেল ও কাগিসো রাবাদা।

অথচ বাংলাদেশের বোলাররা ১৪৬ ওভার বোলিং করে মাত্র তিনটি উইকেটের পতন ঘটাতে পেরেছিলেন। প্রথম দিন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পড়েছে মাত্র একটি। সেখানেও বোলারদের কোনো অবদান নেই। রান আউট। গতকাল উইকেট পড়েছে আর মাত্র ২টি। হাশিম আমলাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন শফিউল। তবে তার আগেই সেঞ্চুরি পূরণ করেন এই প্রোটিয়া টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।

আরেক ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান ডিন এলগারকে ফিরিয়ে দিয়েছেন মুস্তাফিজ। তবে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে রানের এভারেস্টে তুলে দিয়ে গেছেন। এলগার খেলেছেন নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তারপরও হাসি মুখে ড্রেসিং রুমে ফিরতে পারেননি এই প্রোটিয়া ওপেনার। উইকেট থেকে যখন তিনি ফিরছিলেন, তখন চারদিকে যেন তাকে হতাশা গ্রাস করে ফেলেছিল। সতীর্থরা নির্বাক। কোচ ওটিস গিবসন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। মাত্র এক রানের জন্য যে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটা মিস করেছেন এলগার।

প্রথম দিন অসাধারণ খেলেও এইডেন মার্করাম যখন ড্রেসিং রুমে ফিরছিলেন তখনো ছিল হতাশা। কেননা মাত্র তিন রানের জন্য অভিষেক সেঞ্চুরি মিস করেছেন। মার্করামের কষ্টটা খুব কাছে থেকে অনুভব করেছেন এলগার। কাল একই রকম হতাশা ছুঁয়ে গেল তাকেও। মুস্তাফিজের বল অফ-স্ট্যাম্পের বাইর দিয়ে যাচ্ছিল—পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে মুমিনুল হকের সহজ ক্যাচে পরিণত হলেন।

রাতে ঘুম হওয়ার কথা নয় এলগারের। ১৯৯ রানে বোকার মতো আউট হওয়ার দৃশ্যটি তার হূদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দিতে পারে! ১ রানের গুরুত্ব যে কতটা বেশি তা এলগারের চেয়ে আর কে ভালো বুঝতে পারবেন। তবে এলগারই ১৯৯ রানে আউট হওয়া প্রথম ব্যাটসম্যান নন। এমন বেদনাদায়ক ঘটনা টেস্টে আরও ১১ বার ঘটেছে। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানি ওপেনার মাদাসসর নজর ফয়সালাবাদ টেস্টে ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৯ রানে আউট হয়েছেন। সেটাই ছিল ১৯৯ রানে আউট হওয়ার প্রথম ঘটনা। এই তালিকায় দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লেখিয়েছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহার উদ্দীন— ১৯৮৬ সালে কানপুর টেস্টে। এই অভিজ্ঞতা রয়েছে জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারেরও। তবে ফ্লাওয়ার আউট হননি। সঙ্গীর অভাবে তাকে আটকে থাকতে হয়েছে ১৯৯-এ। স্কোর বোর্ডের ভুলের কারণে কুমার সাঙ্গাকারা তো ডাবল সেঞ্চুরি করার সেলিব্রেশন সেরেও ফেলেছিলেন। কিন্তু পরে জানতে পারেন তাকে আরও এক রান করতে হবে। কিন্তু সেই ১ রানই আর হয়নি। অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যান আউট হয়ে যাওয়ায় ১৯৯ রানেই অপরাজিত থাকতে হয় লঙ্কান কিংবদন্তিকে। এ ছাড়া বেদনাদায়ক এই ১৯৯ রানে আউট হওয়ার বাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু এলিয়ট, স্টিভ ওয়াহ, স্টিভেন স্মিথ, ইংল্যান্ডের ইয়ান বেল, শ্রীলঙ্কার সনৎ জয়সুরিয়া, পাকিস্তানের ইউনুস খান এবং ভারতের লোকেশ রাহুলের। এই ১১ জনের দিকে তাকিয়েই সান্ত্বনা খুঁজতে পারেন এলগার। 

গতকাল এলগারের আগে আউট হয়েছেন হাশিম আমলা। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থাকা এই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান ২০০ বলে করেছেন ১৩৭ রান। ১৭টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি ছক্কা। আমলা-এলগার জুটিতে এসেছে ২১৫ রান। এই জুটিই দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোরকে নিয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

টেস্টে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস কত জানেন— ৭৩০ রান। ২০১৪ সালে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে এই রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৮৭ রান করেছিল ভারত। সেটা চলতি বছরেই। হায়দরাবাদ টেস্টে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেরা পাঁচে ভারতের আরেকটি স্কোর আছে। ২০০৭ সালে ৬১০ রান করেছিল। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ক্যারিবীয়রা ২০১২ সালে খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টে করেছিল ৬৪৮ রান। ২০১৫ সালে খুলনাতেই পাকিস্তান ৬২৮ রান করেছিল।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্কোরটি ৫৮৩ রানের। ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে এই রান করেছিল প্রোটিয়ারা। কিন্তু পচেফস্ট্রুম টেস্টের প্রথম ইনিংসে এই স্কোরও ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল সহজেই। অথচ কাল বিকালে হঠাৎ করেই ইনিংস ঘোষণা করে দেন প্রোটিয়া দলপতি ফাফ ডু প্লেসিস।

প্লেসিসের দ্রুত ইনিংস ঘোষণার পেছনে বড় যুক্তি হচ্ছে— দক্ষিণ আফ্রিকাকে তো আর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করতে হবে না। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ভালো করলে তৃতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করার সুযোগ তো তাদের হাতে থাকছেই।

টেস্টে কোনো দলই এখন আর চতুর্থ ইনিংস ব্যাটিং করার ঝুঁকি নিতে চায় না। যে কোনো পিচেই চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা ‘ভয়ঙ্কর’! কিন্তু টসে জিতে এই ভয়ঙ্কর কাজটি যেন সেধে নিলেন মুশফিক। টস জিতে নেওয়া ‘ভুল’ সিদ্ধান্তের মাশুলটাই দিতে হচ্ছে এখন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দ. আফ্রিকা : প্রথম ইনিংস ৪৯৬/৩, ১৪৬ ওভার (মারক্রাম ৯৭, এলগার ১৯৯, আমলা ১৩৭। মুস্তাফিজ ১/৯৮, শফিউল ১/৭৪)।

বাংলাদেশ : প্রথম ইনিংস ১২৭/৩, ৩৪ ওভার (লিটন ২৫, ইমরুল ৭, মুমিনুল ২৮*, মুশফিক ৪৪, তামিম ২২*। মরকেল ১/৩৪, রাবাদা ১/৩৩, মহারাজ ১/৩৮)।

সর্বশেষ খবর