শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হকিতেও জ্বলে ওঠা সম্ভব

ক্রীড়া প্রতিবেদক

হকিতেও জ্বলে ওঠা সম্ভব

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে টাইগাররা। টি-২০ সিরিজে জ্বলে উঠতে পারবে কিনা এ নিয়ে সংশয় রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা শক্তিশালী দল। তাদের মাটিতে জয় পাওয়াটা সত্যিই কষ্টকর। তবে আশা ছিল টাইগাররা জোর লড়াই করবে। টেস্টে কিংবা ওয়ানডেতে ব্যাটিং বোলিং ও ফিল্ডিং কোনো ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারেনি। যাক এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই। সামনে আবার টাইগাররা টাইগার রূপ ধারণ করবে এ নিয়ে সংশয় নেই। ক্রিকেটে একটা দলের সময় খারাপ যেতেই পারে। ক্রিকেটের সাফল্যই বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। এর পেছনে বড় অবদান নিঃসন্দেহে ক্রিকেটারদেরই। তবে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, সুযোগ-সুবিধা আলাদা নজর দেওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট এগিয়ে গেছে। খ্যাতনামা ক্রিকেট বিশ্লেষকরাই বলছেন বাংলাদেশও বিশ্বকাপ জয়ের সামর্থ্য রাখে। ক্রিকেট এগিয়েছে। কিন্তু জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের তো বড্ড করুণ হাল। জাতীয় দল হতাশা ছাড়া দেশবাসীকে কিছুই দিতে পারছে না। যতটুকু আশা তা যুবাদের ঘিরে। এনিয়ে বাফুফের সমালোচনা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এটাও ঠিক কর্মকর্তারা একেবারে বসেও নেই। বারবার বিদেশি কোচ পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ জন্য অর্থও ব্যয় হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু লাভ হচ্ছে না কিছুতেই। এতটা খারাপ অবস্থা যে জাতীয় দল ভুটানের কাছে হেরে দেশকে লজ্জায় ডুবিয়েছে। বড় কোনে টুর্নামেন্ট নয়, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনাল খেলাটাও স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ফুটবল এখন হতাশায় বন্দী। আদৌ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা এনিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

দলীয় আরেক জনপ্রিয় খেলা হকি। এই খেলাতেও বাংলাদেশ শক্তিশালী অবস্থানে নেই। কিন্তু এনিয়ে কেউ হতাশ বা ক্ষুব্ধ নন। কেননা সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও হকিকে কখনও সেই ভাবে নজর দেওয়া হয়নি। অথচ ক্রিকেটের আগেই হকি এগিয়ে যাওয়ার কথা। পাকিস্তান ও ভারতের পর এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশই শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে পারত। উপযুক্ত ট্রেনিং ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে দক্ষিণ কোরিয়া এখন বিশ্ব হকির অন্যতম শক্তিশালী দল। সর্বোচ্চ চারবার এশিয়া কাপে শিরোপা জেতার রেকর্ড রয়েছে তাদের। এশিয়ান গেমসেও সোনা জিতেছে। জাপানও এগিয়ে গেছে। এমনকি চীন ও ওমানও যথেষ্ট উন্নতি করেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে বলে জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস ও স্পেন হকিতে এতটা এগিয়ে গেছে ভারত ও পাকিস্তান তাদের সঙ্গে জিততেই পারছে না। সাম্প্রতিককালে হকিতে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে ফুটবলের দেশ বলে পরিচিত আর্জেন্টিনা। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে সবাইকে পেছনে ফেলে হকিতে সোনা জিতেছে আর্জেন্টিনা। অথচ এক সময় আর্জেন্টাইনদের কাছে হকির পরিচয় ছিল লাঠি খেলা বলেই। বাংলাদেশ দেখেছে কিভাবে হকির পরাশক্তি দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান পিছিয়ে গেছে। তবুও টনক নড়েনি। যেভাবে অবহেলা করা হয়েছে তাতে মনে হয়েছে হকি কোনো খেলা নয়।

ক্রিকেট যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে তখন বাংলাদেশে ছিল না কোনো বিশ্বমানের ক্রিকেটার। অথচ হকিতে ছিলেন আবদুস সাদেকের মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড়। বিশ্ব হকিতে পাকিস্তানের দাপট যখন তুঙ্গে সেই সময় প্রথম বাঙালি হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় দলে সুযোগ পান সাদেক। বছর তিনেক আগে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের সভাপতি নেগ্রে ঢাকা সফরে আসেন। তখন তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, যে দেশে সাদেকের মতো সুপরিচিত খেলোয়াড় রয়েছেন সেই বাংলাদেশ হকিতে এগুতে পারছে না কেন?

শুধু নেগ্রে নন। অনেকের মুখে একই সুর হকিতে বাংলাদেশ এগুতে পারছে না কেন? ১৯৮৫ সালে ঢাকায় আয়োজিত হয় এশিয়া কাপ হকির। কী যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছিল বর্তমান প্রজন্মের ক্রীড়ামোদীদের বিশ্বাস করানো মুশকিল হবে। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ফুটবলকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল হকি। সেই জোয়ার যদি কাজে লাগানো যেত এতদিনে নিশ্চয় বাংলাদেশের হকি অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত। কেন হয়নি, এনিয়ে নতুন করে বিতর্ক তুলে লাভ নেই। এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে। ৩২ বছর পর ঢাকায় আরেকটি এশিয়া কাপ হয়ে গেল। নিজস্ব ভেন্যু, টার্ফ, ফ্লাডলাইট, ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ড— সবকিছুতেই নতুনত্বের ছোঁয়া। প্রত্যাশিতভাবেই টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। প্রশ্ন উঠেছে নিজেদের ঘরের মাঠে বাংলাদেশ কি পেল? সত্যি কথা বলতে কি, শিরোপা তো বটেই বাংলাদেশ সুপার ফোরে খেলবে এই আশা কেউ করেননি। হয়েছেও তাই। তাহলে জিমিদের মিশন কি ব্যর্থ? না সফল বা ব্যর্থ কোনোটাই বলা যাবে না। লক্ষ্য পূরণ হওয়ায় হকিপ্রেমিরা অন্তত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পেরেছেন।

কোচ মাহবুব হারুন কোনো লুকোচুরি বা মিথ্যার আশ্বাস দেননি। টুর্নামেন্টের আগে সোজাসাপটা বলেছেন, তার লক্ষ্য পাঁচ বা ছয়ে থাকা। লক্ষ্য পূরণে সফলও হয়েছে তিনি। চীনকে হারিয়ে ছয়ে থাকা নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এর ফলে ২০২১ সালে এশিয়া কাপে সরাসরি খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। জাপানের কাছে হেরে পাঁচে থাকতে পারেননি জিমিরা। গ্রুপ পর্বে তিন প্রতিপক্ষের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে। এরপরও একটা ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে যত্ন নিলে সামনে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। মূলত কৌশল ও অভিজ্ঞতার কাছে মার খেয়ে যায় বাংলাদেশ।

টুর্নামেন্টে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে প্রতিটি ম্যাচে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। গ্রুপ পর্বে ১-১ ড্র থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ শেষ দুই মিনিটে জাপানের কাছে ২ গোল খায়। পঞ্চম স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও শেষ কোয়ার্টারে বাংলাদেশ তিন গোল হজম করে। লড়াই করার সামর্থ্য আছে কিন্তু কৌশলের কাছে সব শেষ। হোক না ৬ষ্ঠ। এশিয়া কাপেই প্রমাণ মিলেছে হকি নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। কথা হচ্ছে উপযুক্ত ট্রেনিং দিলেই কি ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। প্রশিক্ষণের তো কোনো বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধা ছাড়াও অবকাঠামোর কথা ভাবতে হবে। ফ্লাডলাইট তো এই প্রথম জ্বললো। মওলানা ভাসানী ও বিকেএসপি ছাড়া হকিতে তো টার্ফই নেই। জার্মানিতে স্কুলেও টার্ফের ছড়াছড়ি। বাংলাদেশে বাস্তবতার কারণে তা সম্ভব নয়। যেসব জেলা থেকে হকি খেলোয়াড় বের হয়ে আসছে সেখানে টার্ফ বসানোটা জরুরি হয়ে পড়েছে। হকির যখন উজ্জ্বল সম্ভাবনা তখন তো খেলোয়াড়দের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করতে হবে। ক্রিকেটে এগিয়েছে, নজর দিলে হকি ও ঘুরে দাঁড়াবে। তা না হলে পেছনের দিকেই হাঁটতে হবে। এক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর