বছর কয়েক আগেও ভারতীয় ক্রিকেট দলের নামের পাশে সাঁটানো ছিল ‘দেশে বাঘ, বিদেশে বিড়াল’ স্টিকার। পারফরম্যান্সের বিচারে এখন বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি ভারত। দেশ ও দেশের বাইরে যে কোনো পরিবেশে প্রতিপক্ষকে চেপে ধরেছে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, বিরাট কোহলির ভারত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এখন অনেকেই আগের ভারতীয় ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন! মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা দেশে বাঘ, চাপের মুখে দেশের বাইরে ছন্নছাড়া। দক্ষিণ আফ্রিকার সফরই সর্বশেষ জ্বলন্ত উদাহরণ। অরণ্যের দেশ, রংধনুর দেশ, হীরকের দেশটিতে উড়াল দেওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় ছিলেন টাইগাররা। কিন্তু এবি ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, এইডেন মারক্রাম, ডিন এলগার, ডেভিড মিলারদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে নাভিশ্বাস উঠেছে টাইগারদের। হয়ে পড়েছে ছন্দহীন। হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখে মনে হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট পুরনো রূপেই ফিরে যাচ্ছে। ক্রিকেটপ্রেমীরা প্রিয় দলের এমন চেহারা দেখতে চান না কোনোভাবেই। তাদের চাওয়া টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০-তিন ফরম্যাটেই দেশ ও বিদেশে সমানতালে সাফল্য। চাইলেই কি হয়? এজন্য চাই সঠিক পরিকল্পনা এবং একজন বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ক্রিকেটার। যিনি পরিচিত ও বৈরী পরিবেশে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবেন। যেমনটা ফুটবলে দেখা যাচ্ছে। উদাহরণ রয়েছে ক্রিকেটেও।
বার্সেলোনার বর্তমান সময়ের সাফল্য আসছে লিওনেল মেসির হাত ধরে। রিয়ালের সাফল্যের কাণ্ডারী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ভারতীয় ক্রিকেটের আলোকবর্তিকা এখন বিরাট কোহলি। সাকিব আল হাসানের সমবয়সী। অথচ ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ব্যাট হাতে রানের ফুলঝুড়ি ছুটিয়ে সেঞ্চুরির নহর বইয়ে। পিছিয়ে নেই অস্ট্রেলিয়ার স্টিভেন স্মিথও। যে কোনো ক্রান্তিকালে ‘হারকিউলিস’ হয়ে ব্যাট হাতে দলকে উদ্ধার করছেন অসি অধিনায়ক। বাংলাদেশের ক্রিকেটে দরকার এদের মতো একজন ক্রিকেটার। যিনি যে কোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বুক সমান লড়াই করে দলকে টেনে নিয়ে যাবেন শিখরে। টেন্ডুলকার, গাঙ্গুলীদের দেখানো পথে ভারতীয় ক্রিকেটের খোলনলচেই পাল্টে দিয়েছেন কোহলি। ব্যাট হাতে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটের রানের ফোয়ারায় ভাসিয়ে সাফল্য এনে দিচ্ছেন একের পর এক। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩২ নম্বর সেঞ্চুরি করেছেন কোহলি। সব মিলিয়ে সেঞ্চুরি তালিকায় তার অবস্থান লিজেন্ড টেন্ডুলকারের পরে (৫১)। টেস্টে সেঞ্চুরি ১৭টি। স্টিভেন স্মিথের সেঞ্চুরি টেস্টে ২০টি এবং ওয়ানডেতে ৮টি। শুধু এই দুই ক্রিকেটারই নন, প্রোটিয়াদেরও নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডি ভিলিয়ার্স, হাশিম আমলা, নিউজিল্যান্ডে কেন উইলিয়ামসন, রস টেলররা। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও চাই এদের মতো একজন ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিমরা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা তারকা। কিন্তু দলের ক্রান্তিকালে তারা কি সত্যিই কোহলি, স্মিথ হয়ে উঠেছেন কখনো? তারা কি দিক নির্দেশক হয়ে উঠতে পেরেছেন?
দেশের মাটির সাফল্য পেতে এসব ক্রিকেটারের বিকল্প নেই। এদের পারফরম্যান্সই দলের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাপকাঠি হয়ে উঠেছে প্রতিটি সিরিজে। দেশের বাইরের ব্যর্থতা কাটাতে দরকার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। এই নেতৃত্ব দিতে হবে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফিদেরই কোনো একজনকে। যেমন ভারতকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কোহলি, অস্ট্রেলিয়াকে স্মিথ।