সোমবার, ২৭ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিপিএলে ‘নতুন’ মাশরাফি

রাশেদুর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে

বিপিএলে ‘নতুন’ মাশরাফি

যুদ্ধ মঞ্চে সামনে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের সাহস খুব কম সেনাপতিরই থাকে। অনেক সময় কৌশলগত কারণেও আড়ালে থাকতে হয় সেনাপতিকে। কিন্তু লড়াইয়ের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সেনাপতিকেও মাঝে মধ্যে সম্মুখ সমরে অবতীর্ণ হতে হয়। মাশরাফি বিন মর্তুজা; এই কৌশলটা বেশ ভালো জানেন। প্রয়োজনে আড়াল থেকে বেরিয়ে আসেন অস্ত্র হাতে। ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রতিপক্ষের ওপর নির্ভয়ে। তার দুঃসাহস ছড়িয়ে পড়ে সহযোদ্ধাদের মধ্যেও। শনিবার চিটাগং ভাইকিংস ম্যাচে কঠিন এক সময়ে দলকে প্রেরণা জোগাতে ব্যাট হাতে ওয়ান ডাউনে নামেন মাশরাফি। রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক মাত্র ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন মাত্র ১৭ বলে। তাতে রংপুর রাইডার্সও পেয়ে যায় জয়ের উপলক্ষ। এমন দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেও নিজেকে ব্যাটসম্যান বলতে নারাজ। তবে বিপিএলে নতুন এক মাশরাফির দেখা মিলল।

বিপিএলের পঞ্চম আসরের বড় বিজ্ঞাপন, রংপুর রাইডার্সে খেলতে আসছেন ক্যারিবীয়ান তারকা ক্রিস গেইল এবং কিউই তারকা ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। ঢাকা ডায়নামাইটে খেলবেন পাকিস্তানের শহিদ আফ্রিদি। বিপিএলে এই তিন জনকে ঘিরেই ছিল ভক্তদের সব উৎসাহ, উদ্দীপনা। ধুম ধরাক্কা ব্যাটিং দিয়ে এরাই তো ভক্তদের মন ভরিয়ে দিতে পারতেন। দেশি-বিদেশি আরও অনেকের উপরই ছিল ভক্তদের চোখ। কিন্তু সবাইকে  পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন রাজশাহী কিংসের ড্যারেন স্যামি আর রংপুর রাইডার্সের মাশরাফি বিন মর্তুজা। রংপুর রাইডার্সকে কেবল নেতৃত্বই দেননি মাশরাফি, একজন সৈনিকের ভূমিকাও পালন করেছেন। শনিবারের ম্যাচটা রংপুর রাইডার্সের পক্ষে ছিল না। চিটাগং ভাইকিংসের ১৭৬ রানের পর ম্যাককালাম শুরুতেই আউট হলে নিরাশ হয়েছিল রংপুরের ভক্তরা। মাশরাফি সবাইকে চমকে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। অবশ্য ম্যাচটা জিততে এরপরও বহু কাঠ খড় পোহাতে হয়েছে রংপুরকে। তবে মাশরাফির ওরকম একটা ম্যাজিক্যাল ইনিংস না হলে তো জয়ের পথই তৈরি হতো না!

সব দিক দিয়ে মাশরাফির ইনিংসটা এবারের বিপিএলে বৈচিত্র্যপূর্ণ। মানে গুনে আর সময়োপযোগিতায়। ড্যারেন স্যামির ১৪ বলে করা ৪৭ রানের ইনিংসটাও নিঃসন্দেহে দুর্দান্ত। ওই ইনিংসটা রাজশাহী কিংসকে বিজয়ী হতে সাহায্য করেছিল। ওই ম্যাচে বল হাতে মোহাম্মদ সামি (৯ রানে ৪ উইকেট) দুর্দান্ত কিছু করতে ব্যর্থ হলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে থামাতে পারতো না রাজশাহী কিংস। আর মাশরাফির ইনিংসটা ছিল ম্যাচ উইনিং ইনিংস। বোলার মাশরাফি সেদিন ব্যাটসম্যান হয়ে উঠেছিলেন। স্যামির স্ট্রাইকরেট ছিল ৩৩৫.৭১। মাশরাফির স্ট্রাইকরেট ছিল ২৪৭.০৫। এদিক থেকে এবারের বিপিএলে স্যামি এক নম্বরে, মাশরাফি দুই নম্বরে। কিন্তু মাশরাফি যেভাবে ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করেছেন সেভাবে স্যামি পারেননি। ম্যাককালাম আউট হওয়ার পর ক্রিস গেইল অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। মাশরাফির দুরন্তপনা দেখে তিনিও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন। ৩৩ রানের ইনিংসে ৩টা ছক্কা মেরেছিলেন মাশরাফিকে মারতে দেখেই! চিটাগং ভাইকিংসের বোলারদের আত্মবিশ্বাসে চির ধরিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক। স্যামি আর মাশরাফি এবারের বিপিএলে বিশ্বসেরা হার্ড হিটারদের ছাড়িয়ে গেলেন। স্যামির তবু ব্যাটসম্যান হিসেবে খ্যাতি আছে। প্রায়ই তিনি ঝলসে উঠেন দলের প্রয়োজনে। ধারাবাহিক স্যামির চেয়ে তাই মাশরাফির ব্যাটিংটাই এখন আলোচ্য। গেইল, আফ্রিদি আর ম্যাককালামদের অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে মাশরাফি। এবারের বিপিএলে আফ্রিদির সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট ২১৭.৬৪ (১৭ বলে ৩৭)। ক্রিস গেইলের ১৮২.১৪ (২৮ বলে ৫১)। আর ম্যাককালামের! ক্রিকইনফোর দেওয়ার ৫০ জনের তালিকায় তার নামই নেই!!

চিটাগংয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতে রংপুর রাইডার্স বিপিএলের চলতি আসরে শীর্ষ চারে স্থান করে নিয়েছে আপাতত। অবশ্য পথ আরও বাকি। আরও চারটা ম্যাচ খেলতে হবে। এর মধ্যে কোন ভুল করলে শোধরানোর সুযোগ থাকবে না। এসব মাশরাফিরা ভালোই জানেন। এ কারণেই পরের ম্যাচগুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিচ্ছেন। আগামীকাল চট্টগ্রাম পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলবে রংপুর রাইডার্স। প্রতিপক্ষ সিলেট সিক্সার্স। এই ম্যাচ জিতলেই শীর্ষ চারে থাকার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠবে রংপুরের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর