সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিরপুরে উইকেটে কী জাদু!

মেজবাহ্-উল-হক

মিরপুরে উইকেটে কী জাদু!

খুলনা টাইটানসের আরও একটি উইকেটের পতন। উত্সবে মেতে উঠলেন মাশরাফি-ম্যাককালামরা। শেষ পর্যন্ত ১৯ রানে জিতে সুপার ফোর নিশ্চিত করে রংপুর রাইডার্স —রোহেত রাজীব

লাউড স্পিকারে চলছে ‘পপসংগীত’, কিন্তু সেদিকে কারও ভ্রূক্ষেপ নেই! দর্শক নির্বিকার। বেলা ৩টার সময়ই প্রথম ম্যাচ শেষ! পরের ম্যাচ শুরু হতে বাকি পাক্কা তিন ঘণ্টা। রোদে পুড়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কি কোনো কাজ আছে দর্শকের?

গতকাল মিরপুরে ‘চিটাগং ভাইকিংস বনাম সিলেট সিক্সার্স’ ম্যাচটি শেষ হয়েছে মাত্র দুই ঘণ্টায়! ম্যাচে ছিল না কোনো উত্তেজনা। ছক্কা-চারের বন্যাও ছিল না। দুই দলের ইনিংস মিলে ছক্কা হয়েছে মাত্র ৩টি। বাউন্ডারি ১৭টি। দুই দলের দুই ইনিংসের রানের যোগফল ১৩৫!

যে কোনো খেলার প্রাণ হচ্ছে দর্শক। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন খুব ভালো করে বোঝে শূন্য গ্যালারির কষ্টটা কত বেশি! ফুটবল থেকে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তাহলে কেন এমন নিষ্প্রাণ ম্যাড়ম্যাড়ে ক্রিকেট দেখতে দর্শক টিকিট কেটে মাঠে আসবেন? টি-২০ ক্রিকেট মানেই রান-বন্যা। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা দেখে দর্শক খুবই মজা পেয়েছেন। অনেক রান হয়েছে সেখানে। কিন্তু মিরপুরে হঠাৎ কী হলো যে রানই হচ্ছে না। মিরপুরের উইকেটে কি জাদু আছে?

মাশরাফির দলের বিরুদ্ধে জেতার পরও উইকেট নিয়ে আক্ষেপ করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘আমার কাছে যে ব্যাপারটা খারাপ লাগছে, এত দর্শক এসেছে, আর এত দর্শক এসে যদি ৯৭ রান আর  সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে শেষ ওভারে গিয়ে তাড়া করে জয়— এত দর্শক এসে যদি এই ম্যাচ দেখে তাহলে তো খুব হতাশাজনক ব্যাপার। ক্রিকেট বোর্ড বলেন, কিংবা খেলোয়াড়রা- সবাই চায় বিপিএল পরের ধাপে যাক। পরের ধাপে যাওয়ার জন্য উইকেটটা ঠিক থাকতে হবে। এমন জঘন্য উইকেটে যদি ক্রিকেট খেলা হয় আমি হারতে পারতাম। হারলেও আমি এই কথাই বলতাম। কি কারণে ওরা এমন উইকেট প্রস্তুত করছে আমার কোনো ধারণা নেই।’

মাশরাফির আক্ষেপ আরও বেশি, ‘আমার মনে হয় আপনারা সবাই খেলা বোঝেন। আসলে এই ধরনের উইকেটে টি-২০ খেলা খুবই কঠিন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম থেকে আসার পর এখানে এ ধরনের উইকেট পাওয়া অবশ্যই আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জানি এখানে টস হারলে বোলিং টিম সুবিধা পায়, কিন্তু এত সুবিধা পাবে যেমন গুডলেন্থ বল মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। স্পিন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্টে যেমন হয়েছিল সাদা বলেও তেমন হবে, এটা আসলে খুবই কঠিন।’ উইকেট তৈরি করেছেন লঙ্কান কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। এর আগেও তিনিই উইকেট বানিয়েছেন, যেখানে অনেক বেশি রান হয়েছে। তাহলে গামিনির হঠাৎ কী মনে হলো যে তিনি এমন উইকেট তৈরি করে ফেললেন? নাকি গামিনিকে দিয়ে নির্দিষ্ট কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে তৈরি করা হয়েছে এমন উইকেট- এমন প্রশ্নও উঠছে?

ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে হারের পর গামিনি সম্পর্কে নড়াইল এক্সপ্রেস বলেন, ‘আমি সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলব না। যে কিউরেটর এই উইকেট বানান তিনি আগেও ভালো উইকেট বানিয়েছেন যদি ইতিহাস দেখেন। তবে আমি জানি না সমস্যাটা কী। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এটা খুঁজে বের করা উচিত। কারণ টুর্নামেন্টের এই পর্যায়ে এসে সবাই চাই ভালো উইকেটে খেলতে। টসে হেরে গিয়ে ম্যাচ হেরে গেছি নিশ্চয়ই এই ফিলিংস নিয়ে কেউ মাঠে আসতে চায় না। এমনিতে ঢাকার উইকেটে টস হারলে ব্যাটিং করতে হবে, তারপর যদি গিয়ে দেখি উইকেট এমন আচরণ করছে তাহলে ড্রেসিংরুম বিভ্রান্ত হয়ে যায় যে কোনো দলেরই।’ চট্টগ্রামে যেখানে সিলেটের বিপক্ষে রানের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল, সেখানে কিনা ঢাকায় গতকাল ভাইকিংস ৬৭ রানে অলআউট। এটা কি উইকেটের দোষ, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। গতকাল স্টেডিয়াম জুড়েই দর্শকদের মুখে এই সুরটা ঘুরপাক খেয়েছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, খুলনা টাইটানস এবং ঢাকা ডায়নামাইটসের প্লে-অফ নিশ্চিত হয়ে গেছে আগেই। তবে আগের দিন হেরে যাওয়ায় অপেক্ষায় ছিল রংপুর রাইডার্স। পরের দুই ম্যাচে রংপুর হেরে গেলে এবং সিলেট এক  ম্যাচে জিতে গেলে হিসাব হবে অন্যরকম। রংপুরকে টপকে সিলেট উঠে যাবে প্লে-অফে! গতকাল রংপুর জয়ের পর সিলেট টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছে। এদিকে প্রথম দল হিসেবে আগেই বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে চিটাগং ভাইকিংসের। নিজেরা বিদায় নেওয়ার পর কাল মিরপুরে ১০ উইকেটে হেরে গিয়ে চিটাগং ভাইকিংস কি সিলেট সিক্সার্সের বড় উপকার করল? এই প্রশ্নের আর প্রয়োজন নেই।

গতকাল মাত্র ১২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় ভাইকিংস। ব্যাটসম্যানদের শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল যেন আউট হওয়ার জন্যই তারা বাইশ গজে যাচ্ছেন। যখন দ্রুত উইকেট পড়ে যায়, তখন ব্যাটসম্যানরা ধরে খেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এমন কোনো প্রচেষ্টাই গতকাল দেখা যায়নি ভাইকিংস ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। এই সিলেট সিক্সার্সের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চিটাগং ভাইকিংস করেছিল ২১১ রান। সেই একই দলের বিরুদ্ধে গতকাল ভাইকিংস অলআউট হয়ে গেল মাত্র ৬৭ রানে। এবারের বিপিএলে সর্বনিম্ন রান। সত্যিই ক্রিকেট বড় রহস্যময় খেলা! তবে রংপুর রাইডার্স ১৯ রানে খুলনাকে হারিয়ে সিলেটের শেষ আশাটাও শেষ হয়ে গেল।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

চিটাগং ভাইকিংস : ৬৭/১০ (১২ ওভার), সিলেট সিক্সার্স : ৬৮/০ (১১.১ ওভার)

রংপুর রাইডার্স : ১৪৭/৬ (২০ ওভার), খুলনা টাইটানস : ১২৮/৮ (২০ ওভার)

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর