শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

মিরপুরে বর্ণিল গেইল শো

মেজবাহ্-উল-হক

মিরপুরে বর্ণিল গেইল শো

রংপুর রাইডার্সের পক্ষে ম্যাজিক্যাল ইনিংস খেলেন ব্যাটিং দানব ক্রিস গেইল —রোহেত রাজীব

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারির জায়ান্ট স্ক্রিনের ডান পাশে রংপুর রাইডার্সের ছোট্ট সাদা পতাকায় পানির মতো ঢেউ খেলে যাচ্ছে। আর স্ক্রিনের বামে খুলনা টাইটানসের বিশাল আকারের কমলা রঙের দুই পতাকা নিথর হয়ে পড়ে রয়েছে। দুই দলের পতাকার মুভমেন্টই বুঝিয়ে দিচ্ছিল মাঠের চিত্র।

অবশ্য গতকাল বিকালে মিরপুরে ক্রিস গেইলের ব্যাটে যে ঝড় উঠেছিল তা লিখে বোঝানো কঠিন। ক্যারিবীয় তারকা একাই ১২৬। সেটাও কিনা মাত্র ৫১ বলে। খুলনা টাইটানসের বোলাররা শেষ পর্যন্ত আউট করতেই পারেননি গেইলকে। রংপুর রাইডার্সকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই বীরদর্পে মাঠ ছাড়েন গেইল। মিরপুরের মরা উইকেটে ১৬৮ রানের টার্গেট দিয়েও ৮ উইকেটের ব্যবধানে হারতে হবে এমনটা কখনো কল্পনাও করেনি খুলনা।

গতকাল টাইটানসের ফিল্ডারদের খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি! বার বার বল উড়ে গিয়ে আছড়ে পড়েছে গ্যালারিতে। গেইলের ব্যাট থেকে আসে একে একে ১৪টি ছক্কা। আর একেকটি ছক্কা এতই বিশাল ছিল— ফিল্ডারদের জায়গা থেকেই নড়তে হয়নি। ঠায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাদের আর কোনো কাজ ছিল না।

গেইল গতকাল শুরু করেছিলেন প্রথম ওভার থেকেই। খুলনার বোলার আবু জায়েদের ওভারে লং অফ দিয়ে বল পাঠিয়ে দেন গ্যালারিতে। এই ছক্কা ছিল ১০২ মিটার। শুরুতেই গেইলের আগ্রাসী রূপ দেখে ভড়কে যান খুলনার অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি খুব ভালো করেই জানেন, গেইল একবার উইকেটে সেট হয়ে গেলে কোনো স্কোর বড় মনে হবে না। তাই তো কারও ওপর ভরসা করতে না পেরে তৃতীয় ওভারে নিজেই বল হাতে তুলে নিলেন। কিন্তু টাইটানস দলপতিকেও সমীহ করলেন না গেইল। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ওভারের পঞ্চম বলে হাঁকালেন ১০১ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি ছক্কা! এরপর চলতে থাকে গেইল শো।

বিশাল বিশাল ছক্কা হচ্ছে, রংপুর জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেঞ্চুরির পথে হাঁটছেন গেইলও! তখনো কোথায় যেন একটা অতৃপ্তি ছিল! কেননা গেইলের বড় বড় ছক্কাগুলোও এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় ছক্কার রেকর্ডটি ভাঙতে পারছিল না। চিটাগং ভাইকিংসের জিম্বাবুইয়ান তারকা সিকান্দার রাজা ১১৩ মিটার লম্বা ছক্কা হাঁকিয়ে সবার ওপরে বসে ছিলেন।

কিন্তু নিজের সপ্তম ছক্কা গেইল যেন ‘রাজা’কে প্রজা বানিয়ে দিলেন! খুলনার পাকিস্তানি স্পিনার মোহাম্মদ ইরফানের বল মিড উইকেট দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন পূর্ব পাশের গ্যালারির দ্বিতীয়তলায়। যেটির দৈর্ঘ্য ছিল ১১৪ মিটার। এবারের বিপিএলে সবচেয়ে বড় ছক্কার রেকর্ড গড়ে ফেললেন গেইল।

‘১৩’ নাকি অপয়া সংখ্যা! কিন্তু কাল ১৫তম ওভারে শান্তর প্রথম বলে ১৩তম ছক্কা হাঁকিয়েই টি-২০-তে ৮০০ ছক্কার মাইলফলকে পৌঁছে গেলেন গেইল। পরের বলে আরেক ছক্কা হাঁকিয়ে রংপুরের জয় নিশ্চিত করে দিলেন। ২৮ বল বাকি রেখেই টাইটানসকে হারিয়ে কোয়ালিফায়ারে উঠে গেল রংপুর রাইডার্স।

এই ম্যাচের আগে টি-২০-তে গেইলের সেঞ্চুরির সংখ্যা ছিল ১৮টি। কিন্তু এই ২০১৭-তে কোনো সেঞ্চুরি ছিল না ‘টি-২০ সম্রাটের’। তা ছাড়া রংপুর রাইডার্সের হয়েও খুব সুবিধা করতে পারছিলেন না। যদিও প্রথমদিকে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করে রংপুরকে জিতিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সেঞ্চুরি যার কাছে ডালভাত তার ব্যাটে হাফ সেঞ্চুরি দেখে কি আর মন ভরে? অবশেষে দেখা গেল গেইল শো! প্রথমে ২৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি, তারপর ৪৫ বলে সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত রইলেন। ২০১৭-তে গেইলের প্রথম শতক। বিপিএলে চতুর্থ এবং সব মিলিয়ে ১৯তম সেঞ্চুরি গেইলের।

ক্যারিবীয় তারকার তাণ্ডবের পর অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, ‘আমরা খুবই ভাগ্যবান যে, গেইল তার সেরা ইনিংসটা সঠিক সময়েই খেলেছেন। গেইল দ্রুত আউট হয়ে গেলে হয়তো সমস্যাতেই পড়তাম। কেননা আমরা ব্যাটিংয়ে গেইল-ম্যাককালামের ওপরই অনেকটা নির্ভরশীল। ওরাই দলের একটা ভারসাম্য তৈরি করে দেন।’ পুরো টুর্নামেন্টে অসাধারণ খেলেও ফাইনালের আগে বিদায় নেওয়ায় হতাশ মাহমুদুল্লাহ, ‘গেইল যেদিন খেলেন সেদিন আর করার কিছু থাকে না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল যাতে সেট হওয়ার আগেই গেইলকে আউট করা যায়। কিন্তু আমরা পারিনি। ব্যাটসম্যানরা ভালো করলেও আমাদের বোলাররা ভালো করতে পারেননি।’

গেইলের তাণ্ডবে যারপরনাই খুশি শেরেবাংলার দর্শকরা। এমন একটি ঐতিহাসিক ইনিংসের সাক্ষী হয়ে থাকা কম গৌরবের নয়। তবে গেইলের এই ইনিংসে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছেন বোধ হয় কিউরেটর গামিনি ডি সিলভা। অদ্ভুত উইকেট তৈরি করার দায়ে জনতার আদালতের কাঠগড়ায় উঠেছিলেন তিনি! গেইল কাল ঝড় তুলে যেন গামিনিকে মুক্ত করে দিলেন। সেই সঙ্গে রাঙিয়ে দিলেন বিপিএলকেও।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

খুলনা টাইটান্স : ১৬৭/৬, ২০ ওভার (আরিফুল ২৯*। মালিঙ্গা ২/৪৯)

রংপুর রাইডার্স : ১৭১/২, ১৫.২ ওভার (গেইল ১২৬*, মিথুন ৩০*। জোফরা ২/৩০)

ফল : রংপুর ৮ উইকেটে জয়ী।

ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৯১/৭, ২০ ওভার (এভিন লুইস ৪৭)

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস : ৯৬/১০, ১০ ওভার (তামিম ৩১)

ফল : ঢাকা ৯৫ রানে জয়ী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর