সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

রংপুরের সামনে বাধা বৃষ্টি

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রংপুরের সামনে বাধা বৃষ্টি

ক্রিজে ছিলেন রংপুর রাইডার্সের দুই ব্যাটসম্যান চার্লস ও ম্যাককালাম। ৭ ওভারে ৫৫ রান করার পর বৃষ্টি এলে আম্পায়ার ম্যাচটি বন্ধ রাখেন—রোহেত রাজীব

দুর্ঘটনা ঘটে যায় তৃতীয় ওভারেই। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বোলার মেহেদী হাসানের বল শট ফাইন লেগে পাঠিয়ে দিয়ে দ্রুত রানের জন্য দৌড় দিলেন ক্রিস গেইল। নিরাপদে অপরপ্রান্তে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে একটুখানি অমনোযোগিতার কারণে বলের ওপর গেইলের পা পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পড়েন ঘাসের ওপর। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তখন উত্কণ্ঠা। বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও গ্যালারিতে যে কয়েক হাজার দর্শক এসেছিলেন গেইল-শো দেখতে তারা যেন নির্বাক হয়ে যান। ফিজিওর আপ্রাণ চেষ্টায় উঠে দাঁড়ালেন গেইল। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে জানিয়ে দিলেন, তিনি ঠিক আছেন! খেলতে আর কোনো সমস্যা নেই।

দর্শকের মধ্যে তখন উচ্ছ্বাস। সমস্বরে একটা গর্জনও উঠল। রংপুর রাইডার্সের ড্রেসিংরুমে তখন হয়তো স্বস্তির হাওয়া বইছে। মাশরাফির বুকের ওপর থেকে যেন মস্ত এক পাথর সরে গেল। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গেইলকে কতটা প্রয়োজন তা টাইগার ক্যাপ্টেনের চেয়ে ভালো আর কে বোঝেন!

তারপর খেলা শুরু হলো বটে, কিন্তু গেইলকে আর গেইলের মতো দেখা গেল না। রান নেওয়ার জন্য দৌড়াচ্ছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ব্যাটিংয়ের সময় অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন। আগের ম্যাচেই যে ৫১ বলে ১২৬ রানের ?হার না মানা ইনিংস খেলেছেন কালকের গেইলকে দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না।

পায়ে আঘাত পাওয়ার সময় গেইলের ঝুলিতে ছিল মাত্র দুই রান। এরপর আর মাত্র একটি সিঙ্গেল নিয়েছেন ক্যারিবীয় ঝড়। দুর্ঘটনার পর প্রাণপণে চেষ্টা করেছেন স্বাভাবিক হতে পারেননি।

যে মেহেদী হাসানের বলে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছেন, সেই মেহেদী হাসানকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অফে শোয়েব মালিকের ক্যাচ হয়ে যান গেইল। বল এত উপরে উঠেছিল যে প্রথম মনে হয়েছিল লম্বা এক ছক্কা হবে, কিন্তু বল সীমানা পার হয়নি। ১০ বলে মাত্র ৩ রান করে ড্রেসিং রুমে ফিরে হয় গেইলকে। ক্যারিবীয় তারকা এমন ধীর পায়ে সাজঘরের দিকে যাচ্ছিলেন যেন তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না তিনি আউট হয়েছেন। অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বার বার তাকাচ্ছিলেন পেছনে।

হতাশা ছুঁয়ে গেল ক্যাপ্টেন মাশরাফিকেও। টিভি ক্যামেরায় দেখানো হয়, ড্রেসিং রুমে বসা টাইগার ক্যাপ্টেনের করুণ দৃষ্টি। শুরুতেই এমন ধাক্কা খেতে হবে তা হয়তো কল্পনাও করেনি রংপুর রাইডার্স। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, গেইল আউট হয়ে গেলেও মাশরাফির রানের গতি কিন্তু কমেনি।

গেইলের সতীর্থ জনসন চার্লস বাইশগজে ঝড় তোলেন। চারটি বিশাল ছক্কাও হাঁকান। চারটি চারও আসে তার ব্যাট থেকে। মাত্র ২৬ বল ৪৬ রান করে ফেলেন এই ক্যারিবীয় তারকা ব্যাটসম্যান। গেইলের আউটের পর ম্যাককালাম নেমে একপ্রান্তে সতর্কভাবে ব্যাটিং করছিলেন। আরেকপ্রান্তে তখন রীতিমতো ঝড় তুলে ছিলেন চার্লস।

৭ ওভারেই রংপুর রাইডার্সের স্কোর বোর্ডে জমা হয় ৫৫ রান। শুরুতে গেইলকে আউট করার পরও তামিম ইকবালের কপালে চিন্তার রেখা। কেন না গেইলকে আউট করলেও রানের প্রবাহ থামানো যায়নি। কি করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না ভিক্টোরিয়ান্স দলপতি। অন্যদিকে রংপুর রাইডার্সের ভক্তরা ‘গেইল-ঝড়’ চার্লসের ব্যাটে দেখেও খুশি। হঠাৎ নেমে পড়ে বৃষ্টি। প্রথমে গুঁড়ি গুঁড়ি তারপর তীব্রতা বাড়তে থাকে। শেষ খবর : রাত ৮টায় বৃষ্টি থেমে যায়। মাঠ পরিচর্যা করছিলেন গ্রাউন্ডসম্যানরা।

গতকাল সকাল থেকেই মিরপুরের আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। আবহাওয়ার সুবিধা নিতেই টস জিতে রংপুর রাইডার্সকে প্রথমে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান ভিক্টোরিয়ান্স ক্যাপ্টেন তামিম। কারণ বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে পরে ব্যাটিং করা দলেই বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকেন।

সর্বশেষ খবর