বুধবার, ৩ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
পেশাদার ফুটবল লিগ

তবু বিদেশিরাই এগিয়ে

ক্রীড়া প্রতিবেদক

তবু বিদেশিরাই এগিয়ে

জাহিদ হাসান এমিলি। দেশের ফুটবলের সুপরিচিত নাম। জাতীয় ও ঘরোয়া আসরে অনেক গোল করেছেন। আলফাজের পর তাকেই দেশসেরা স্ট্রাইকার বলা হতো। জাতীয় দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে এমিলিকে দেখা যাচ্ছে না এমিলি রূপে। এবার পেশাদার লিগে ২০তম ম্যাচে গোল পেয়েছেন তিনি। আরামবাগের বিপক্ষে মোহামেডানের দ্বিতীয় গোলটি তার। অবশ্য পারফরম্যান্স পড়তির কারণে অধিকাংশ ম্যাচেই সেরা একাদশের বাইরে থাকেন এমিলি।

এতেই বোঝা যায়, ঘরোয়া আসরে স্থানীয় ফুটবলারদের কতটা দুর্দশা। ২০০৭ সালে পেশাদার লিগ মাঠে গড়ানোর পর সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে একবারই বসেছিলেন দেশের কোনো ফুটবলার। এরপরই জায়গাটি বিদেশিদের দখলে। ঘরোয়া ফুটবলে প্রথম বিদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হন ইরানের বিজয় তাহেরী। ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে তিনি মোহামেডানের পক্ষে ২৪টি গোল করেন। ১৯৯২ সালে উজবেকিস্তানের রহিমও সর্বোচ্চ গোলদাতা হন। অর্থাৎ ৮০ ও ৯০ দশকেও বিদেশিরা নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রাখেন। অবশ্য সেই সময়ে ঢাকার ফুটবলে খ্যাতনামা বিদেশিরাই খেলতেন।

পেশাদার লিগ শুরুর পর প্রতিটি দলেই বিদেশিরা খেলছেন। কিন্তু মানসম্পন্ন খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমই বলা যায়। জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলাররা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতেন নিম্নমানের বিদেশি এনে দেশের ফুটবলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রমাণও মিলেছে তাদের কথায়। কেননা প্রফেশনাল লিগ শুরুর পর ফুটবল যেখানে এগিয়ে যাওয়ার কথা। সেখানে হাহাকার চলছে। নতুন নতুন খেলোয়াড় বের হয়ে না আসায় জাতীয় দল গড়াটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

সব যুক্তি মানা গেলেও দেখা যাচ্ছে নিম্নমানের বিদেশিরাই প্রতিটি দলের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছেন। ঢাকা আবাহনী ৫, শেখ জামাল ৩ ও শেখ রাসেল একবার করে লিগ জিতেছে। এই সাফল্যের পেছনে বড় অবদান আবার বিদেশিদেরই। ঘুরে ফিরে তারাই সর্বোচ্চ গোলদাতা হচ্ছেন।

চলতি লিগে বাফুফে বিদেশির সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে। চার জনের বদলে দুইজন সেরা একাদশে খেলতে পারবেন। বাফুফের যুক্তি ছিল দেশের ফুটবলের স্বার্থের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দেশিরা সুযোগ পেলে নতুন তারকার সন্ধান মিলবে। বাস্তবে তা কি হয়েছে। দুইজন করে বিদেশিরা খেলার পরও স্থানীয়রা সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। যদিও চট্টগ্রাম আবাহনী শিরোপা রেস থেকে ছিটকে গেছে। তবু এই দলের লোকাল খেলোয়াড়দের ক্যারিশমা চোখে পড়েছিল। বাকিরা বিদেশিদেরই ওপর নির্ভরশীল ছিল।

লিগে ২০টি করে ম্যাচ শেষ হয়েছে। ঢাকা আবাহনী কিংবা শেখ জামালের মধ্যে যে কোনো একটি দলই চ্যাম্পিয়ন হবে। ৫ জানুয়ারি দুই দল গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে। আবাহনী জিতলে এক ম্যাচ আগেই চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে। শেখ জামালও জিতলে শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করে ফেলবে। ড্র হলেও দুই দলেরই সম্ভাবনা থাকবে। অর্থাৎ ঢাকা আবাহনী বা শেখ জামাল ছাড়া এবার কেউ চ্যাম্পিয়ন হতে পারছে না।

অচেনা তরুণদের নিয়ে দল গড়ে শেখ জামাল এতদূর আসবে তা ভাবাই যায়নি। তরুণদের প্রশংসাই করতে হয়। কিন্তু শিরোপায় টিকে থাকার পেছনে বিদেশিদের বড় ভূমিকা যদি বলা হয় তা কি বাড়িয়ে বলা হবে। সেরা একাদশে খেলেছেন দুইজন। কিন্তু  মোমোদো, রাফায়েল ও সলোমন কিংসের নৈপুণ্যতা দলটি ম্যাচের পর ম্যাচ জিতেছে। রাফায়েল বা সলোমন কিং যে কোনো একজন সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারেন।

ঢাকা আবাহনী প্রথম পর্বে গুছিয়ে খেলতে না পারলেও সানডে যোগ দেওয়ার পরই দলের চেহারা পাল্টে যায়। একের পর এক ম্যাচ জিতে শিরোপার কাছাকাছি এসে ঠেকেছে জনপ্রিয় দলটি। বিদেশি কমলেও এবারও স্থানীয় ফুটবলাররা সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। নতুন প্রতিভার সন্ধান মিলেছে। কিন্তু পরবর্তীতে এরা দেশের হয়ে কতটা জ্বলে উঠবেন সেটাই দেখার বিষয়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর