শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিরোপা থাকল আবাহনীর ঘরেই

আসিফ ইকবাল


শিরোপা থাকল আবাহনীর ঘরেই

শেখ জামালের বিপক্ষে নাসিরের গোলে এগিয়ে যায় ঢাকা আবাহনী। শেষ পর্যন্ত দেশের জনপ্রিয় এ দলটি পুরো পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠবার শিরোপা নিশ্চিত করেছে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের একসময়কার পরিচিত ছবি পতাকা আর পটকা। আবাহনী কিংবা মোহামেডানের ম্যাচ হলেই সমর্থকরা আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাত পটকা ফুটিয়ে। দলকে উৎসাহ জোগাতে গোটা স্টেডিয়াম ছেয়ে থাকত প্রিয় দলের শত শত পতাকায়। ম্যাচ শেষে দলের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামপাড়া মুখরিত করে রাখত সমর্থকরা। গতকাল ঢাকা আবাহনী ও শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের ম্যাচটি ছিল পেশাদার লিগের অলিখিত ফাইনাল। ম্যাচ শেষে আশি ও নব্বই দশকের দর্শকদের সেই খণ্ডিত চিত্র ফের দেখা গেল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। রেফারির শেষ বাঁশি বাজতেই গুটিকয় পটকার আওয়াজে প্রকম্পিত হলো আবাহনী গ্যালারি। ভিআইপি গ্যালারি থেকে হাজারখানেক ভক্ত প্রিয় আবাহনীর পতাকা নিয়ে মাঠে ঢুকে উচ্ছ্বাস ও উৎসবে মেতে ওঠে। মেতে ওঠার হাজার কারণের একটি, প্রিয় আবাহনীর ফের শিরোপা। পেশাদার লিগের দশম আসরের ষষ্ঠ শিরোপা জিততে আবাহনী ২-০ গোলে হারায় শেখ জামালকে। টানা দ্বিতীয় শিরোপা জিতেছে আবাহনী এক রাউন্ড হাতে রেখেই। আবাহনীর পয়েন্ট ২১ ম্যাচে ১৬ জয় ও ৩ ড্রয়ে ৫১। চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে শেষ ম্যাচে যদি হেরেও যায় শিরোপা অক্ষুণ্ন থাকবে ঢাকা আবাহনীর। ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা শেখ জামাল একই দিনে খেলবে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে।

ম্যাচটি ছিল চাপের। তাই শুরু থেকেই দুই দলের ফুটবলাররা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে থাকেন। প্রথম মিনিটে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে গিয়ে সানডে চিজোবার সঙ্গে আঘাতপ্রাপ্ত হন শেখ জামালের গোলরক্ষক। সেই থেকেই আক্রমণ আবাহনীর। প্রথম ১০ মিনিট একচেটিয়া খেলতেন থাকে আতিকের শিষ্যরা। একাদশ মিনিটে ম্যাচে ফেরে মাহবুব হোসেন রক্সির দল শেখ জামাল। তীব্র শীত উপেক্ষা করেই দুই দল গতিশীল ফুটবল খেলতে চেষ্টা করে। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ম্যাচে ২৩ মিনিটে অসাধারণ এক গোলে এগিয়ে যায় আবাহনী। সত্যি বলতে, ওই গোলেই শিরোপা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় দলটির। কর্নার থেকে বল পান সোহেল রানা। সোহেল বল ধরে ইনসাইড ডজে বক্সের মাথা থেকে ডান পায়ে দারুণ এক ক্রস করেন। শেখ জামালের রক্ষণভাগের দুজনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নাসির উদ্দিন চৌধুরী দারুণ এক হেডে গোল করেন (১-০)। ওই গোলের পরপরই শিরোপা জয়ের আগাম উৎসবে মেতে ওঠে আবাহনীর ফুটবলার ও সমর্থকরা। গোল খেয়ে তখন মরিয়া শেখ জামাল। ৩৯ মিনিটে সুযোগও সৃষ্টি করে দলটি। ডান প্রান্ত থেকে জাভেদ খানের বাড়ানো ক্রসে ব্যাক হিল করেন রাফায়েল ওডোইন। ফাঁকায় দাঁড়ানো সলোমন কিং ঠিকমতো শট নিতে ব্যর্থ হন। ফলে সমতায় ফেরা হয়নি শেখ জামালের। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে নিশ্চিত গোল বাঁচান আবাহনীর গোলরক্ষক শহীদুল আলম। ডি-বক্সের মাথা থেকে জাভেদের নেওয়া বাঁ পায়ের শট শেষ মুহূর্তে ফিস্ট করে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান শহীদুল। ১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আবাহনী। দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই গোলের জন্য খেলা শুরু করে। তবে বলের নিয়ন্ত্রণ অপেক্ষাকৃত বেশি সময় ছিল আবাহনীর পায়ে। তার পরও শেখ জামালের চেষ্টার শেষ ছিল না। কিন্তু ভাগ্য সহায় না থাকায় গোল পায়নি। উপরন্তু ম্যাচের অতিরিক্ত সময় শেখ জামালের শিরোপা জয়ের স্বপ্নের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন সানডে চিজোবা। রেফারি তখন শেষ বাঁশি বাজানোর ক্ষণ গুনছেন। গ্যালারিতে বসে থাকা দর্শকরাও উল্লাস করছে। অপেক্ষায় মাঠে নামার এবং প্রিয় দলের ফুটবলারদের জড়িয়ে উৎসব করার, তখনই সানডে চিজোবা ক্ষিপ্রতার সঙ্গে ম্যাচের দ্বিতীয় গোল করে আবাহনীকে ষষ্ঠ শিরোপা উপহার দেন (২-০)। এবারের শিরোপা আবাহনী উৎসর্গ করেছে তাদের প্রয়াত কোচ অমলেশ সেনের উদ্দেশে।

সর্বশেষ খবর