রবিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
পেশাদার ফুটবল লিগ

আবাহনী দশে ছয়, মোহামেডান শূন্য

ক্রীড়া প্রতিবেদক

আবাহনী দশে ছয়, মোহামেডান শূন্য

পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উল্লসিত ঢাকা আবাহনীর ফুটবলাররা। অন্যদিকে ঢাকা মোহামেডান এবারও শিরোপার ধারেকাছে যেতে পারেনি। প্রথম দিকে নঈম উদ্দিন কোচের দায়িত্ব পালন করলেও পরে ছিল না কোনো কোচ

বাংলাদেশের ফুটবলে ঢাকা আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডানকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল বলা হয়। ঘরোয়া আসরে অধিকাংশ ট্রফি তারা ভাগাভাগি করায় ১৯৭৬ থেকে আবার দুই প্রধানও বলা হচ্ছে। অর্থাৎ ফুটবলে বাংলাদেশের পরাশক্তি ছিল আবাহনী ও মোহামেডানই। ঘরোয়া আসরে এখন যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে কি দুই দলকে এখন দুই প্রধান বলা যায়? পেশাদার লিগের যে চিত্র তাতে এই প্রশ্নটা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। দেশের ফুটবলে পরাশক্তির তালিকায় মোহামেডানের নাম কি রাখা যায়? ২০০৭ সালে দেশে পেশাদার লিগ চালু হয়। দেখতে দেখতে ১০টি আসর পার হয়ে যাচ্ছে। লিগ শিরোপা জেতাটা মোহামেডানের যেখানে অভ্যাসে দাঁড়িয়েছিল সেই ঐতিহ্যবাহী দলের একি করুণ হাল। প্রায় দেড় যুগ ধরে লিগ শিরোপার বাইরে তারা। ২০০২ সালে শেষ বারের মতো মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়। পেশাদার লিগে ট্রফি  জেতা সাদা-কালোদের স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ১০ বারের মধ্যে ঢাকা আবাহনী ছয়বার লিগ জিতেছে। সেখানে মোহামেডানের ঘর শূন্যই থেকে যাচ্ছে। প্রথম টানা তিন আসরে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। আবারও টানা তিন অর্থাৎ দ্বিতীয় বারের মতো পেশাদার লিগে হ্যাটট্রিক ট্রফি জেতার অপেক্ষায় রয়েছে জনপ্রিয় দলটি। দুই প্রধানের এক দল আবাহনী যেখানে বার বার সাফল্যের পতাকা উড়াচ্ছে। সেখানে মোহামেডান ব্যর্থতার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে কেন? প্রথম তিনবারতো রানার্সআপ হয়েছিল এখন নামতে নামতে পাঁচে থাকাটাই ঐতিহ্যবাহী দলের বড় প্রাপ্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার শেখ জামাল ধানমন্ডিকে হারিয়ে এক ম্যাচ আগেই ৬ষ্ঠ শিরোপা নিশ্চিত করেছে ঢাকা আবাহনী। অথচ এক সময়ে মনে হচ্ছিল ঢাকা আবাহনী শিরোপা রেসে টিকে থাকতে পারবে না।

এবারের লিগে শুরু থেকেই শীর্ষে ছিল চট্টগ্রাম আবাহনী। দ্বিতীয় পর্বেও তিন ম্যাচ পর্যন্ত দুই দলের ব্যবধান ছিল পাঁচ পয়েন্ট। শেখ জামালও দ্বিতীয় পর্বে জ্বলে উঠেছিল। কই ঢাকা আবাহনীকে আটকাতে পারল কেউ? ঠিকই প্রমাণ করে ছাড়ল দেশের ফুটবলে তারাই সেরা। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন এর পেছনে ভাগ্যও ফেভার করেছে তাদের। হ্যাঁ, শিরোপা জিততে ভাগ্যও লাগে। কিন্তু শুধু কি ভাগ্যের জোরে বার বার ট্রফি জিতছে ঢাকা আবাহনী? নতুনভাবে আবির্ভূত হওয়ার পর শেখ জামালও তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শেখ রাসেলও একবার চ্যাম্পিয়ন। মোহামেডানের বেহাল দশা কেন?

একটা দলের সাফল্যের পেছনে মূল অবদান খেলোয়াড়রাই। তারা ভালো না খেললে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। এ জন্য আবাহনীর ফুটবলারদের প্রশংসা করতে হয়। কিন্তু এখানে ম্যানেজমেন্টের কোনো ভূমিকা কি নেই। একটা দলকে পরিচালিত করতে দক্ষ ম্যানেজমেন্টের প্রয়োজন পড়ে। ঢাকা আবাহনীর যা অতীতে ছিল এখনো আছে। সংগঠকরা নিবেদিত বলেই ফুটবলে সাফল্যের দিক দিয়ে ঢাকা আবাহনী ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। পঞ্চাশ দশক থেকে মোহামেডান লিগে অংশ নিচ্ছে। পাকিস্তান আমলসহ ১৯ বার মোহামেডানের চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড রয়েছে। সেখানে কিনা ১৯৭২ সালে এসে আবাহনী ১৭ বার লিগ জিতে নিয়েছে।

এখানেই সাংগঠনিক ক্যারিশমার পরিচয় মিলে। দলের সাফল্যের জন্য আন্তরিকভাবে কর্মকর্তারা পরিশ্রম করছেন বলে ঢাকা আবাহনী এগিয়ে চলেছে। মোহামেডানেরও সাংগঠনিক ভীত ছিল মজবুত। মনিরুল হক চৌধুরী, শেখ আকমল, তানভীর হায়দাররা পরিশ্রম করে মোহামেডানকে শুধু দেশ নয় এশিয়ার অন্যতম সেরা দলে পরিণত করেছিলেন। ৯০ দশকে যার প্রমাণ রয়েছে এশিয়ান ক্লাব পর্যায়ে আট নম্বর স্থান দখল করে।

ঢাকা আবাহনীর কথা বাদই দিলাম। শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও চট্টগ্রাম আবাহনী যেভাবে এগুচ্ছে তাতে সামনে মোহামেডানের পরিণতি যে কি হবে তা নিয়ে সমর্থকরা সত্যিই চিন্তিত। লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর মোহামেডানের নতুন কমিটির বক্তব্য ছিল এই দল এমনভাবে সাজানো হবে যা এশিয়ার সেরা সেরা দলের সঙ্গে তুলনা করা যাবে। ক্লাবে বহুতল ভবন, সাভারে আলাদা কমপ্লেক্স। কত কি প্রতিশ্রুতি? অথচ এই মোহামেডান এবার অধিকাংশ ম্যাচ খেলেছে কোচহীন অবস্থায়। কোচ ছাড়া মোহামেডান দল তা কি ভাবা যায়।

ঢাকা আবাহনী এখন সাফল্যের পাহাড়ে উঠে গেছে। শেখ জামাল, শেখ রাসেল চট্টগ্রাম আবাহনীতো নতুন শক্তি রূপে আবির্ভূত হয়েছে। নতুন এসে সাইফ স্পোর্টিংও ঝাঁকুনি দিয়েছে। সামনের মৌসুমে আসছে বসুন্ধরা কিংস। এ অবস্থায় মোহামেডান যদি রূপ বদল না করতে পারে তাহলে কি ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে?

সর্বশেষ খবর