উচ্চাভিলাষী একটি শট দেখেই সৌম্য সরকারকে পছন্দ করেছিলেন চন্ডিকা হাতুরাসিংহে! অচেনা সৌম্যকে দলে নেওয়ার পরিষ্কার কোনো ব্যাখ্যা কখনোই দেননি হাতুরা। পরিচিতজনদের নাকি বলতেন প্রতিপক্ষ বোলারদের গুঁড়িয়ে দিতে তার দেখা বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান সৌম্য। যদিও তখন দলে রয়েছেন তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের মতো পরীক্ষিত ব্যাটসম্যান। তারপরও বাঁ হাতি ওপেনার সৌম্যের প্রতি তার বাড়তি নজর দৃষ্টিকটু হয়ে উঠছিল সবার কাছে। অবশ্য এসব সমালোচনাকে কখনোই পাত্তা দেননি হাতুরা। বরং অফ ফর্মের সৌম্যকে খেলিয়েছেন নিয়মিত। হাতুরা যুগ শেষ। নতুন বছর শুরু হয়েছে নতুন স্বপ্ন নিয়ে। ১৫ জানুয়ারি তিন জাতির টুর্নামেন্ট দিয়ে বছর শুরু বাংলাদেশের। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচের ১৬ সদস্যের স্কোয়াডে সুযোগ হয়নি সৌম্যের। বছরের প্রথম দিন তামিম ও সাব্বির রহমানকে আর্থিক দণ্ড দিয়ে আলোচনার জন্ম দেওয়া বিসিবি ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে সৌম্যকে বাদ দিয়ে। আলোচনা, সমালোচনার জন্ম দিয়ে বছর শুরু। এটা সত্যি, তিন জাতির টুর্নামেন্টটি মাশরাফি বাহিনীর অ্যাসিড টেস্ট। টুর্নামেন্টটি দিয়ে হাতুরাসিংহবিহীন বাংলাদেশকে শুরু করতে হচ্ছে নতুন করে পথ চলা। হাতুরার অনুপস্থিতি টাইগারদের কতটা সামনে এগিয়ে নিবে, কিংবা পিছিয়ে দিবে-সময় বলবে। তিন জাতির টুর্নামেন্টেই সেটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে, কোনো সন্দেহ নেই।
মাশরাফিদের ২০১৭ সাল শুরু হয়েছিল নিউজিল্যান্ড সফর দিয়ে। শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে। হার দিয়ে শুরু, হারে শেষ বছর। তাই বলে একেবারেই মন্দ ছিল না বছরটা। হারের তিক্ত স্বাদ যেমন নিয়েছে, তেমনিই সাফল্যের উদ্ভাসিত আনন্দেও ভেসেছেন মাশরাফি, সাকিবরা। হারিয়েছেন শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে। খেলেছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো মর্যাদার টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল। সব মিলিয়ে ভালো-মন্দের মিশেলেই কেটেছে বছরটি। নতুন বছর তিন জাতির টুর্নামেন্ট ছাড়াও ব্যস্ত সূচিতে ঠাঁসা টাইগারদের স্ক্যাজুয়াল। শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ ছাড়াও খেলবে বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্ট। বছর শুরু হচ্ছে শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়েকে নিয়ে তিন জাতির টুর্নামেন্ট দিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ের বিবেচনায় দুই দল যথেষ্ট শক্তিশালী প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু এটাও সত্যি, ওয়ানডে ক্রিকেটে দল দুটি পরীক্ষিত শক্তি। জিম্বাবুয়ে দুর্বল এবং ক্ষয়িষ্ণু শক্তির। কিন্তু চন্ডিকা হাতুরাসিংহের কোচিংয়ে নিজেদের হারানো গৌরব ফিরে পেতে মরিয়া দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বাংলাদেশকে পরতে হবে কঠিন পরীক্ষায়। দলটির নতুন কোচ হাতুরাসিংহে সাড়ে তিন বছর দায়িত্বে ছিলেন বাংলাদেশের। সেদিক দিয়ে তিনি টাইগারদের ক্রিকেটার শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলোর খুঁটিনাটি জানেন বেশ ভালো করে। এটাই দুই দলের মধ্যে এখন ব্যবধান।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বছর শুরু হচ্ছে তিন জাতির টুর্নামেন্ট দিয়ে। প্রতিপক্ষ দুই দল ক্রিকেট পরাশক্তি না হলেও হাতুরাসিংহ অবসান যুগে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে। তাই বলাই যায়, টুর্নামেন্টটি বাংলাদেশের জন্য অ্যাসিড টেস্ট।