মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ইংল্যান্ডের সামনে আত্মবিশ্বাসী বেলজিয়াম

ইংল্যান্ডের সামনে আত্মবিশ্বাসী বেলজিয়াম

সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের পাঁচ নম্বরে থাকা বেলজিয়াম আগামী বছরের রাশিয়া বিশ্বকাপে একই গ্রুপে খেলবে। গ্রুপ জি’তে আরও আছে আফ্রিকান অঞ্চলে ‘কার্থেজের ঈগল’খ্যাত তিউনিসিয়া এবং প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করা পানামা। এই গ্রুপ থেকে নকআউট পর্বের জন্য ফেবারিট ১৯৬৬’র বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড এবং বেলজিয়াম। তবে তিউনিসিয়া চমকে দিতে পারে ফেবারিটদের। এমনকি পানামাও কঠিন বাধা হয়ে দেখা দিতে পারে। গ্রুপ জি’র সম্ভাবনা নিয়ে লিখেছেন— রাশেদুর রহমান

 

বেলজিয়াম

ইউরোপিয়ান ফুটবলে বেলজিয়ামের প্রতি সবারই একটা শ্রদ্ধার ভাব রয়েছে। কেউ এই দলটাকে উপেক্ষা করতে পারে না। এক সময় ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছিল বেলজিয়াম। ১৯৮৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে বিদায় নিয়েছিল বেলজিয়াম। সেবার ম্যারাডোনার দুরন্ত আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার আগে নকআউট পর্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন আর স্পেনকে হারিয়েছিল। ইউরোপিয়ান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে দুর্দান্ত খেলা বেলজিয়াম দারুণ একটা দল গড়ে তুলেছে। তরুণ গোলরক্ষক কর্টয়েস গোলবার সামলাচ্ছেন দক্ষ হাতে। ডিফেন্সে আছেন থমাস ভারমালিন আর মুয়েনিয়ার। মিডফিল্ডে বর্তমান ফুটবলের বেশ কয়েক জন সেরা তারকা আছে বেলজিয়ামের। চেলসি তারকা ইডেন হ্যাজার্ড, ম্যানসিটি তারকা কেভিন ডি ব্রুইন, টটেনহ্যামের মুসা ডেম্বেলি আর এভারটনের কেভিন মিরায়াস বেলজিয়ামের মিডফিল্ডকে অন্যতম সেরায় পরিণত করেছেন। সবশেষে স্ট্রাইকিংয়ে রোমেলু লুকাকো, ফেল্লিনিরা তো আছেনই। এই দল গ্রুপ পর্ব তো বটেই বিশ্বকাপেরই অন্যতম ফেবারিট দল। জি গ্রুপের প্রতিপক্ষরা আগে থেকে সতর্ক না হলে বিপদেই পড়বে।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ৫

কোচ : রবার্তো মার্টিনেজ

তারকা : ইডেন হ্যাজার্ড

ফরমেশন : ৩-৪-২-১

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১৩তম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : চতুর্থ (১৯৮৬)

 

ইংল্যান্ড

ক্রিকেটের মতো ফুটবলেও অন্যতম দল ইংল্যান্ড। পার্থক্য হলো, ফুটবলে একবার বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। ক্রিকেটে বেশ কয়েকবার ফাইনাল খেললেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব নেই তাদের। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে জিওফ হার্স্টের হ্যাটট্রিকে ৪-২ গোলে পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল ইংল্যান্ড। সেই প্রথম ও শেষ। এরপর সেরা ফল ছিল ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা। সেবার পশ্চিম জার্মানির কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড বর্তমান শতাব্দীতে খুব ভালো দল গড়তে পারেনি। গত বিশ্বকাপে তো গ্রুপ পর্ব খেলেই বিদায় নিয়েছিল তারা। তবে এবার দুরন্ত এক দল নিয়ে রাশিয়া যাত্রা করবে ইংলিশরা। তরুণ আর অভিজ্ঞদের নিয়ে দারুণ একটা দল গড়ে তুলেছেন গেরেথ সাউথগেট। ডিফেন্সে প্রতিপক্ষের জন্য কঠিন বাধা হয়ে আছেন গ্যারি কাহিল, জন স্টোনস, ড্যানি রোজরা। মিডফিল্ডে অ্যাশলি ইয়া, রহিম স্টারলিং, ডিলে আলি, চেম্বারলিনরা দারুণ খেলছেন। আক্রমণভাগে ড্যানি ওয়েলব্যাক আর ড্যানিয়েল স্টরিজরা ছাড়াও আছেন হ্যারি কেইন আর জেমি ভার্ডিরা। তাছাড়া গোলবারের সামনে আছেন জো হার্ট।

 

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ১৫

কোচ : গেরেথ সাউথগেট

তারকা : হ্যারি কেইন

ফরমেশন : ৩-৪-২-১

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১৫তম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : চ্যাম্পিয়ন (১৯৬৬)

 

তিউনিসিয়া

প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে এসে মেক্সিকোকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে বেশ হইচই ফেলে দিয়েছিল তিউনিসিয়া। আফ্রিকান ফুটবলে কার্থেজের ঈগল হিসেবে পরিচিত দলটা এরপর বিশ্বকাপ খেলেছে খুবই কম। গ্রুপ পর্বও পাড়ি দিতে পারেনি কখনো। ২০০৬ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া তিউনিসিয়া পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাবে রাশিয়া। অতীত খুব একটা ভালো নয় তাদের। এমনকি বর্তমানেও খুব ভালো ফুটবল খেলছে বলা যাবে না। আফ্রিকান নেশন্স কাপে ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়নরা পরবর্তীতে আর কোয়ার্টার ফাইনালের বাধাই পাড়ি দিতে পারেনি। রাশিয়া বিশ্বকাপে আন্ডারডগ হিসেবেই খেলতে নামবে তিউনিসিয়া। তবে ১৯৭৮ বিশ্বকাপের মতো কোনো অঘটন ঘটাতেই পারে তারা। জি গ্রুপে পানামার বিপক্ষে তো বটেই, তিউনিসিয়া জয় পেতে পারে এমনকি বেলজিয়াম আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও! দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের ফুটবলার আছেন। তারা খেলছেন ইউরোপের বিভিন্ন লিগে। দলের অন্যতম স্ট্রাইকার ইউসুফ মুসাকনি ছাড়াও ভালো ফুটবল খেলছেন তাহা খেনেসি, বিন ইউসুফরা। তরুণদের নিয়ে গড়া দলটা কেমন করবে বলা কঠিন। অপেক্ষায় থাকতে হবে বিশ্বকাপ পর্যন্ত।

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ২৭

কোচ : নাবিল মালুল

তারকা : ইউসুফ মুসাকনি

ফরমেশন : ৪-২-৩-১

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ৫ম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : গ্রুপ পর্ব

 

পানামা

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে পানাম। রাশিয়ায় অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণ করাটাই মধ্য আমেরিকার এই দেশটির জন্য অনেক বড় ব্যাপার। তাছাড়া গ্রুপে বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ডের মতো দল থাকায় নকআউট পর্ব খেলার আশা তাদের জন্য আকাশ-কুসুম কল্পনাই। কিন্তু একটা ম্যাচ জিতে কিংবা একটা ড্র করে গ্রুপের গতিপথ বদলে দিতে পারে তারা। এর প্রমাণ পানামা দিয়েছে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। কনকাকাফ অঞ্চলে নিজেদের শেষ ম্যাচে কোস্টারিকাকে ২-১ গোলে হারিয়েছে পানামা। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দলকে টপকে এই অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করাই একটা বাড়তি যোগ্যতা। পানামা এই যোগ্যতা দেখিয়েছে। কনকাকাফ গোল্ড কাপে ২০১৩ ও ২০১৫ সালের রানার্সআপ এই দলটা বিশ্বকাপে খুব ভালো করবে, এই আশা কেউ করে না। তবে পচা শামুকে পা কাটার মতো ইংল্যান্ড আর বেলজিয়ামের স্বপ্নভঙ্গ করে দিতে পারে তারা। পানামার অবশ্য এসব নিয়ে ভাবার কথা নয়। বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে তারা  উপভোগ করার মানসিকতা নিয়েই। প্রথম বিশ্বকাপ বলে কথা! নির্ভার হয়ে খেললে পানামাও দারুণ কিছু করতে পারে। ফেবারিটরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে না তাদের নিয়ে।

 

ফিফা র‌্যাঙ্কিং : ৫৫

কোচ : হারম্যান ডেরিও গোমেজ

তারকা : গ্যাব্রিয়েল তোরেস

ফরমেশন : ৪-১-৪-১

বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ : ১ম

বিশ্বকাপে সেরা ফল : নাই

সর্বশেষ খবর