শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

সাফল্যের চাবি ব্যাটসম্যানদের হাতে

মেজবাহ্-উল-হক

সাফল্যের চাবি ব্যাটসম্যানদের হাতে

গ্যারি কারস্টেন ২০০৭ সালে ভারতীয় কোচের দায়িত্ব নেওয়ার সময় বলেছিলেন, যে দলে শচীন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষণ, অনিল কুম্বলের মতো সিনিয়র ক্রিকেটার আছেন সে দলে কোচের কোনো প্রয়োজন নেই। আমি এই দলটাকে কেবলমাত্র পেছন থেকে মটিভেট করার চেষ্টা করব।

বাংলাদেশ দলেও এখন পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার— মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাঁচ পরীক্ষিত ক্রিকেটার। এমন দলে কোচ আছেন কিনা তা বড় বিষয় নয়। সিনিয়র ক্রিকেটাররা তো একেকজন কোচ!

মাশরাফি ছাড়া বাকি চারজনই ব্যাটসম্যান। অবশ্য সুযোগ পেলে লোয়ার অর্ডারে নড়াইল এক্সপ্রেসও সাইক্লোন ইনিংস খেলতে পারেন। সিনিয়র এই ব্যাটসম্যানদের হাত ধরে আসছে একের পর এক সাফল্য। বাংলাদেশ দলের সাফল্যের চাবিকাঠী তো ব্যাটসম্যানদের হাতেই। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠেয় শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে ত্রি-দেশীয় সিরিজেও সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ।

যদি সিনিয়রদের সঙ্গে যদি এনামুল হক বিজয় ও সাব্বির রহমানের মতো তরুণ ক্রিকেটাররা জ্বলে ওঠেন তাহলে তো কথাই নেই।

তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ —চার সিনিয়র ব্যাটসম্যানই রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। ২০১৭ সালে ওয়ানডে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন তারা। ত্রি-দেশীয় সিরিজ দিয়ে নতুন বছর শুরু হচ্ছে।

২০১৭ সালটা তামিমের জন্য ছিল খুই পয়মন্ত। ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ার সেরা বছর। ১০ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের সবচেয়ে বেশি গড় ছিল গত বছরে। ১২ ম্যাচে তার গড় ছিল ৬৪.৬০। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য যা রীতিমতো ঈর্ষণীয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এক বছরে আর কোনো ব্যাটসম্যানের এমন গড় ছিল কিনা! এই বছরে তামিম সেঞ্চুরি করেছেন দুটি, হাফ সেঞ্চুরি ৪টি।

তামিম ইকবাল বছরটা শুরুই করেছিলেন সেঞ্চুরি দিয়ে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ডাম্বুলায় ১২৭ রানের অসাধারণ ইনিংস। ১৪২ বলে ১৫ চার ও এক ছক্কা। সেই ম্যাচে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে বড় জয় পায় বাংলাদেশ। পিছিয়ে পড়েও তামিমের ব্যাটে ভর করে সিরিজে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে গিয়ে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ সমতায় শেষ করে বাংলাদেশ।

তবে এই বছরে তামিমের ওয়ানডে সেরা ইনিংস নিশ্চয়ই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে করা ১২৮ রানের ইনিংসটি। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দ্য ওভাল স্টেডিয়ামে খেলা সেই ইনিংস হয়তো তামিমের ক্যারিয়ারেই অন্যতম সেরা। ড্যাসিং ওপেনার ৩টি ছক্কা ও ১২টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছিলেন। ইংলিশ বোলার মঈন আলীর বলে দুই দুবার বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। একবার মার্ক উডকে ছক্কা হাঁকিয়েছেন। ইংলিশরা তো রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল। তামিমের সাইক্লোন ব্যাটিংয়েই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো তিন শতাধিক রানের স্কোর করে। ২০১৭ সালের পারফরম্যান্সকেও এ বছর ছাপিয়ে যেতে চান তামিম। শুরুটা করতে চান ত্রি-দেশীয় সিরিজ থেকেই।

ওয়ানডে ক্রিকেটেও এই বছরটা দারুণ কাটিয়েছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। ১৪ ম্যাচে গড় ৪৫.৮০। একটি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৪টি হাফ সেঞ্চুরি। তবে এই একটি সেঞ্চুরির কথা সবচেয়ে বেশি মনে থাকবে মুশির। কেন না সেঞ্চুরিটি তিনি করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিম্বার্লিতে। এটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সব ফরমেট মিলিয়ে বাংলাদেশি কোনো ক্রিকেটারের প্রথম সেঞ্চুরি। ত্রি-দেশীয় সিরিজে আরও ভালো করার জন্য কঠোর অনুশীলন করছেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ২০১৭ সালে সাকিব সবচেয়ে বেশি খেলেছেন ওয়ানডে ম্যাচ। ৩৫.৮৩ গড়ে করেছেন ৪৩০ রান। হাফ সেঞ্চুরি ৩টি, তবে সেঞ্চুরি মাত্র একটি। কিন্তু এই একটিই সেঞ্চুরি-ই সাকিবকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের (ওয়েলসের) কার্ডিফে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা ১১৫ বলে ১১৪ রানের ইনিংসটির কথা ক্রিকেটামোদীদের ভোলার কথা নয়! নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। হারলে বিদায়, জিতলে সেমিফাইনাল। সেই ম্যাচেই কিনা কিউই দেওয়া ২৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে মাত্র ৩৩ রানে টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। তামিম, মুশফিক, সাব্বির, সৌম্যর আউটের পর হয়তো আবেগী দর্শকরা খেলা দেখাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সাকিব উইকেটে গিয়েই বদলে দিলেন দৃশ্যপট। নিশ্চিত হারা ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে গড়লেন ২২৪ রানের মহাকাব্যিক জুটি। এই জুটি ম্যাচ জিতে রচনা করলেন ইতিহাস। প্রথমবারের মতো আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ চারে উঠে যায় বাংলাদেশ।

ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে মাহমুদুল্লাহর অবদানও কম নয়। তিনিও অপরাজিত সেঞ্চুরি করেছেন। শেষ পর্যন্ত ১০২ রানে অপরাজিত থেকে দল জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছেড়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। সব মিলে ২০১৭ সালে ওয়ানডেতে দুর্দান্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি। ১৪ ম্যাচে ৫১.৪৩ গড়ে করেছেন ৩৬০ রান। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিও রয়েছে। নতুন বছরে নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত মাহমুদুল্লাহ।

চার তারকা ব্যাটসম্যান গত বছর যেখানে শেষ করেছেন সেখান থেকেই যদি নতুন বছর শুরু করে তাহলে ত্রি-দেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

 

সর্বশেষ খবর