শুক্রবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

লক্ষ্য বাস্তবায়ন নিয়েই সংশয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক

লক্ষ্য বাস্তবায়ন নিয়েই সংশয়

জাফর ইমামের মতো প্রখ্যাত সংগঠক মহাসচিবের দায়িত্বে থাকার পরও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কার্যক্রম স্থবির ছিল। চেষ্টা করেছেন খেলাধুলার উন্নয়নে। কিন্তু সুবিধাবাদী সংগঠকদের কারণে জাফর ইমাম ছিলেন অসহায়। বিওএ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রশংসনীয় কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি। বিভিন্ন গেমসে দল পাঠানো ছাড়া চোখে পড়ার মতো কোনো কার্যক্রম ছিল না। বিদেশে ট্যুর নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। সরকারি অর্থ অপচয় করে কর্মকর্তাদের ভ্রমণের হিড়িক পড়ে যেত। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

১৯৯৮ সাল থেকে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি গঠন হচ্ছে নির্বাচনের মাধ্যমে। যদিও অধিকাংশ সময়ে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারে বসে গেছেন। খেলাধুলার উন্নয়নের কথা বললেই কর্মকর্তারা একটাই কথা বলেন, এত ফান্ড পাব কোথায়? অথচ অর্থ ব্যয় হচ্ছে ঠিকই। ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক সংস্থা হলেও বিওএ কোনো কাজে আসেনি। বর্তমান বিওএর কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। তারপরও নতুনভাবে মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর সৈয়দ শাহেদ রেজা প্রতিশ্রুতি দেন, আমরা এমন কিছু করে দেখাতে চাই, যা থেকে ক্রীড়াঙ্গন উপকৃত হবে। কর্মকর্তারা আর কিছু না পারুক প্রতিশ্রুতির বেলায় চ্যাম্পিয়ন। কাজের বেলায় জিরো। যাক বর্তমান বিওএর কমিটি এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম আনতে পেরেছে। যদিও আগেই কমিটি যুব গেমসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কিন্তু সময় অভাবে মাঠে নামাতে পারেনি। এবার ঠিকই শুরু হয়ে গেছে আলোচিত এই গেমস। প্রথমে উপজেলা পর্যায়ে পরে বিভাগীয় অঞ্চলে মাঠে গড়িয়েছে। যুব গেমসের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে খেলোয়াড় সন্ধান। যারা আগামীতে দেশের হয়ে সুনাম কুড়াতে পারবেন। বাংলাদেশে খেলোয়াড় সংকট বরাবরই। জেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে এই করুণ দশা।

৪৭ বছর পার হয়ে গেলেও অলিম্পিক গেমসে এখনো কোনো পদক জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কমনওয়েলথ এশিয়ান গেমসে সোনাও এসেছে। তাও গর্ব করার মতো নয়। অন্য প্রতিযোগিতায়ও একই হাল। এখন এতটা কঠিন অবস্থা যে সাউথ এশিয়ান গেমসে সোনা জয়টা চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে।

অলিম্পিক ও এশিয়ান গেমসে ক্রীড়াবিদরা শুরুর আগেই শেষ হয়ে যায়। যা নিয়ে তিরস্কারের শেষ নেই। হুট করে সাফল্য আসবে না। তৃণমূল পর্যায় থেকে খেলোয়াড় বের করে খেলোয়াড় তৈরি করতে হবে। দেশ জুড়েই এ আয়োজন চলছে। অ্যাথলেটিকস, সাঁতার, ফুটবল অন্য খেলাতেও সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে। বিভাগীয় পর্যায়ে পর্দা নামার পর মার্চে ঢাকায় যুব গেমসের চূড়ান্ত আসর।

অল্প বয়সে ভালো পারফর্ম করে অনেকেই দৃষ্টি কাড়ছে ক্রীড়ামোদীদের। আশার আলো জ্বলছে। কিন্তু এই পর্যন্ত এসে আবার আশার আলো নিভে যাবে না তো? মহাসচিব শাহেদ রেজা, সহ-সভাপতি বশির আহমেদ, উপ-মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন। তাদেরই প্রচেষ্টায় এই গেমস মাঠে গড়িয়েছে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে যুব গেমসের যাত্রা তা সফল হবে কি? খেলোয়াড়দের পাশাপাশি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকা সংগঠকরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। সবই ভালো লক্ষণ। কিন্তু যারা পারদর্শিতার ছাপ রাখছেন তাদের সার্টিফিকেট ও ট্রফি দেওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে কি? উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে গড়া হবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।

আগামীতে বাংলাদেশ যেন যোগ্য ক্রীড়াবিদ খুঁজে পায় সেই লক্ষ্যে তো যুব গেমসের যাত্রা। কাজটা যত সহজে নামানো গেছে বাস্তবায়ন করাটা বড্ড কঠিন। যোগ্য ক্রীড়াবিদ তৈরি করা চাট্টিখানি কথা নয়। এখানে অনেক পরিকল্পনা নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। ফান্ডের কথা বলা হচ্ছে তা কোনো ফ্যাক্টর নয়। সত্ভাবে এগুতে পারলে অর্থ ঠিকই জোগাড় হয়ে যাবে। গেমস নামিয়ে প্রশংসিত হচ্ছে অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। এখন তা সঠিকভাবে কাজে লাগানোর দায়িত্ব তাদেরই।

সর্বশেষ খবর