শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ওয়ান ডাউনে ভরসা সাকিব

আসিফ ইকবাল

ওয়ান ডাউনে ভরসা সাকিব

আশির দশকে অস্ট্রেলিয়ার হার্ড অ্যান্ড বাউন্সি উইকেটে মানিয়ে নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের। ডেনিস লিলি, জেফ টমসন, গ্যারি গিলমোরদের গতি ও সুইংয়ের সঙ্গে জোর লড়াই করতে হচ্ছিল ক্লাইভ লয়েডের শিষ্যদের। গর্ডন গ্রিনিজ ও ডেসমন্ড হাইন্সের পর ওয়ান ডাউনে সাফল্য পাচ্ছিলেন না রোহান কানহাই, রয় ফেডরিক্স, লরেন্স রয়, ফুয়াদ বাক্কাসরা। স্ট্রোক খেলতে পছন্দ করেন বলে লয়েড নামিয়ে দিলেন ভিভ রিচার্ডসকে। ব্যাটকে শানানো তরবারি বানিয়ে প্রতিপক্ষ বোলারদের কচুকাটা করতে লাগলেন রিচার্ডস। বেনসন অ্যান্ড হেজেস টুর্নামেন্ট শেষে রিচার্ডসকে ওয়ান ডাউনে খেলানোর ব্যাখ্যায় ক্যারিবীয় অধিনায়ক লয়েড বলেছিলেন, ‘দলের সেরা ব্যাটসম্যানকেই খেলানো হয়েছে ওয়ান ডাউনে। সেরা ব্যাটসম্যানকে সব সময়ই সেরা পজিশনটা দেওয়া উচিত।’ দ্বাবিংশ শতাব্দীতে এসে লয়েডের দেখানো পথে হাঁটলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। দলের সেরা ক্রিকেটারকে খেলালেন ওয়ান ডাউনে এবং সাফল্যও পেলেন। আলো ছড়ালেন দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। হাফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। হাফ ছেড়ে বাঁচলেন টিম ম্যানেজমেন্ট। চন্ডিকা হাতুরাসিংহের বিপক্ষে রেকর্ড গড়া ১৬৩ রানের জয়ে সাকিব দেখালেন ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করে রান করলেন ৬৭ এবং উইকেট নিলেন ৩টি। সে সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টকেও আশ্বস্ত করলেন টেনশন মুক্ত থাকতে। হাবিবুল বাশারের পর ওয়ান ডাউন পজিশনটি বরাবরই মিউজিক্যাল চেয়ারের মতো ঘুরছে। ঠিকঠাক মতো বসতে পারছেন না কোনো ব্যাটসম্যান। মোহাম্মদ আশরাফুল থেকে শুরু করে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ইমরুল কায়েস, সাব্বির রহমান. লিটন কুমার দাস, সাব্বির রহমানদের দিয়ে চেষ্টা চালানো হয়েছে। সফল হয়েছেন কখনো। কিন্তু কখনোই আস্থাশীল হয়ে উঠতে পারেননি। তাই হাতুরা পরবর্তী যুগে অধিনায়ক মাশরাফি ও টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন পরিকল্পনা করে ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে পাঠান সাকিবকে। ক্যারিয়ারে ১৮২ ওয়ানডে খেলা সাকিব অধিকাংশ সময়ই খেলেছেন ৫ নম্বর পজিশনে। সেখানে নতুন বলের সুইংয়ের বিপক্ষে তিনে খেলা চ্যালেঞ্জিং। সেটা মেনেই তিন জাতির টুর্নামেন্টে খেললেন এবং সফল হলেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩৭ রানের ইনিংসের পর গতকাল তার ব্যাট থেকে বেরোলো ৬৭ রানের ঝকমকে ইনিংস। ৮২ বলের ৭ চারে সাজানো ইনিংসটি ছিল আস্থাশীল। সব মিলিয়ে চারবার ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং করেছেন সাকিব। প্রথমটি ছিল ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে। কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ ছিলেন সেবার। প্রথম বলেই ফিরেছিলেন সাজঘরে। এরপর গতবছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইস্ট লন্ডনে দ্বিতীয়বারের মতো খেললেন এবং রান করলেন ৬৩। তখনই টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্তে আসে তাকে ওয়ান ডাউনে খেলানোর। চ্যালেঞ্জ লুফে নেন লড়াকু সাকিবও।

সাকিবকে খেলানোটা হাফ ছেড়ে বাঁচার প্রেরণা দেওয়ার মতো, গতকাল টানা দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়ে আস্থার প্রতিদান দেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচের পর গতকালও ম্যাচসেরা হলেন। ৬৭ রানের পাশাপাশি ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। প্রথম ম্যাচে ওয়ান ডাউনে ব্যাটিং শেষে বলেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, ‘পরের ম্যাচে যদি সুযোগ পাই, তাহলে লম্বা ইনিংস খেলার চেষ্টা করব।’ গতকাল হাতুরার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের কথাটি রাখলেন সাকিব আল হাসান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর