বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাটেই জবাব মুমিনুলের

তৃতীয় উইকেট জুটিতে নতুন রেকর্ড

মেজবাহ্-উল-হক, চট্টগ্রাম থেকে

ব্যাটেই জবাব মুমিনুলের

তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুমিনুল ও মুশফিক বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড গড়েন। মুমিনুল ১৭৫ রানে অপরাজিত থাকলেও মুশফিক ফিরে যান ৯২ রানে—এএফপি

সেঞ্চুরি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে  ড্রেসিং রুমের দিকে তেড়ে গেলেন মুমিনুল হক। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত বেশ কয়েকবার ছুড়লেন শূন্যে। তারপর ব্যাটও এমনভাবে বাতাসে ছুড়ছিলেন- যেন কাউকে পেটাচ্ছেন! সব শেষে হেলমেট ও ব্যাট উঁচিয়ে ধরে প্রথাগত উদযাপন। শিষ্যদের নিয়ে ড্রেসিংরুমে বসা চন্ডিকা হাতুরাসিংহে বিরক্তিকর মুখে দেখলেন মুমিনুলের এমন আগ্রাসী উদযাপন।

শ্রীলঙ্কার কোচ তথা বাংলাদেশের সাবেক কোচ হাতুরার সঙ্গে মুমিনুলের দ্বন্দ্ব্ব কারও অজানা নয়! শেষ তিন বছরে এই হাতুরাসিংহে কতই না জ্বালিয়েছেন মুমিনুলকে! তার জন্যই প্রথম ওয়ানডে দল থেকে বাদ পড়েছেন। টেস্ট দল থেকেও বঞ্চিত করেছেন বার বার। দেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হয়েও শততম টেস্টে খেলা হয়নি মুমিনুলের। সব দুঃখ, বেদনা, ক্ষোভ এত দিনে মনের মধ্যে পুষিয়ে রেখেছিলেন ‘প্রিন্স অব কক্সবাজার’। গতকাল সেই হাতুরার দলের বিরুদ্ধেই দুরন্ত এক সেঞ্চুরি করে আগ্রাসী উদযাপনের মধ্য দিয়ে যেন ক্ষোভ ঝারলেন মুমিনুল। দিন শেষে এই তারকা ব্যাটসম্যান ১৭৫ রানে অপরাজিত। বাংলাদেশ ৪ উইকেটে করেছে ৩৭৫ রান। এর মধ্যে ৯২ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম। তামিম ইকবাল ৫২ এবং ৪০ রান করেছেন ইমরুল কায়েস। তবে কালকের দিনটি ছিল মুমিনুল ‘স্পেশাল’ একদিন।

মুমিনুল স্বল্প ভাষী। বেশি কথা বলতে পছন্দ করেন না। কিছুদিন আগে হাতুরাসিংহে যখন তাকে বার বার উপেক্ষা করেছেন তখনো কিছুই বলেননি। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটার হওয়ায় কোড অব কন্ডাক্টের জন্য কিছু বলার উপায়ও ছিল না। কিন্তু কক্সবাজারের এই তারকা ক্রিকেটার সব অপমান জমা করে রেখে দিয়েছিলেন। কাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সুযোগ পেয়েই তা যে সুদে-আসলে বুঝিয়ে দিলেন হাতুরাকে। মুখে কিছুই বলতে হলো না, ব্যাট হাতেই জবাব দিলেন।

১৭৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে মুমিনুল যেন বিসিবিকেও একটা বার্তা দিলেন। নির্বাচকদের কাছে তিনি নাকি কেবলই এক টেস্ট ক্রিকেটার! তাই ওয়ানডে ও টি-২০ দলে জায়গা হয় না। কাল কিন্তু সেঞ্চুরি করলেন মাত্র ৯৬ বলে। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় দ্রুততম টেস্ট সেঞ্চুরি। ২০১০ সালে ইংল্যান্ডের লর্ডসে তামিম ইকবালের ৯৪ বলে করা সেঞ্চুরিটি এখনো দ্রুততম। মুমিনুলকে বলা হয় বাংলাদেশের ব্রাডম্যান! অসাধারণ ধারাবাহিকতা তার। বাইশগজে গেলেই তার ব্যাটে রানের ফোয়ারা! ক্যারিয়ারের প্রথম ১২ টেস্টেই চার সেঞ্চুরি করে নিজেকে অতিমানবীয় কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন! কিন্তু মুমিনুল তো সত্যি সত্যিই অতিমানবীয় চরিত্র নন। কিংবা রোবটও নন, যে তিনি কখনো ব্যর্থ হবেন না! রক্তে মাংসে গড়া মানুষ বলেই ক্যারিয়ারে উত্থানের সঙ্গে পতনকেও সাদরে গ্রহণ করতে হয়। তবে এই ম্যাচের আগে ১৩ ইনিংসে সেঞ্চুরি না পাওয়ায় মুমিনুল যেন হতাশ হয়ে পড়েছিলেন! অবশেষে আবারও দুর্দান্ত এই ইনিংস দিয়ে স্বরূপে ফিরলেন।

মুমিনুলের সঙ্গে হাতুরাসিংহের দ্বন্দ্বটা শুরু থেকেই ছিল। ২০১৪ সালে হাতুরা বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পর পরই শেষ সেঞ্চুরিটা (চতুর্থ) করেছিলেন মুমিনুল। তারপর দীর্ঘ তিন বছর লঙ্কান কোচের রোষানলে পড়ে এই তারকা ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারই হুমকির ?মুখে পড়ে গিয়েছিল। অবশেষে হাতুরা চলে যাওয়ার পর মুমিনুলের বুকের ওপর থেকে যেন এক মস্ত পাথর নেমে যায়। তাই হাতুরা-অধ্যায় শেষের পর প্রথম ম্যাচেই সেঞ্চুরি করলেন মুমিনুল। সেটাও কিনা সেই হাতুরার দলের বিরুদ্ধেই। সে কারণেই প্রিন্স অব কক্সাবাজারের এমন ‘ভয়ঙ্কর-সুন্দর’ উদযাপন! মমিনুলের ক্ষ্যাপাটে সেলিব্রেশনটা পছন্দ হয়েছে তামিমেরও- ম্যাচে সংবাদ সম্মেলনে এসে ইঙ্গিতে সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন ড্যাসিং ওপেনার।

মুশফিকের সঙ্গে  কাল তৃতীয় উইকেটে করেছেন ২৩৬ রান। তৃতীয় উইকেট জুটিতে নতুন রেকর্ড এটি। এর আগের রেকর্ড জুটিতেও ছিলেন মুমিনুল। ঢাকার শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে তামিমের সঙ্গে করেছিলেন ১৫৭ রান। কালকের মুমিনুল-মুশফিক জুটিটি তৃতীয় উইকেটে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সর্বোচ্চ রানের জুটি। বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসে সব মিলে চতুর্থ সর্বোচ্চ রানের জুটি। শীর্ষে সাকিব-মুশফিক ৩৫৯ রানের জুটি। দ্বিতীয় স্থানে তামিম-ইমরুলের ৩১২ এবং তৃতীয়টি আশরাফুল ও মুশফিকের ২৬৭ রানের জুটি।

গতকাল আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন মুমিনুল। দ্রুততম ২ হাজার রান সংগ্রাহক হয়েছেন তিনি। পেছনে ফেলেছেন তামিম ইকবালকে। ২ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে মুমিনুল খেলেছেন ৪৭ ইনিংস। তামিম খেলেছিলেন ৫৩ ইনিংস।

চট্টগ্রাম যে মুমিনুলের জন্য পয়মন্ত ভেন্যু সেটা আরেকবার প্রমাণিত হলো। এই সাগরিকায় প্রথম তিন টেস্ট সেঞ্চুরি করেছিলেন। তার টেস্ট সেরা ১৮১ রানের ইনিংসটিও এখানেই। এবার পঞ্চম সেঞ্চুরিও এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই করলেই। এই মাঠে মুমিনুলের গড় ৯৫.৩৭। গতকাল অপরাজিত ছিলেন ১৭৫ রানে। এখন নিজের এই স্কোরকে কোথায় নিয়ে যায় সেটাই দেখার বিষয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ৩৭৪/৪ (৯০ ওভার) মুমিনুল ১৭৫*

মুশফিক ৯২, তামিম ৫২, ইমরুল ৪০

লাকমাল ২/৪৩, পেডলার ১/৫৪

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর