শুক্রবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যাটিংয়ের অর্জন ম্লান বোলিংয়ে

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটিংয়ের অর্জন ম্লান বোলিংয়ে

১৯৪ রানের টার্গেট। টি-২০ ক্রিকেটে অবশ্যই জেতার মতো। অথচ বোলিং ব্যর্থতায় জয়ের বদলে শ্রীলঙ্কার কাছে শোচনীয়ভাবে হেরে মাঠ ছাড়তে হলো টাইগারদের —রোহেত রাজীব

১৯৩ রান! টি-২০-তে বাংলাদেশের রেকর্ড। তার পরও হেরে গেল টাইগাররা। মুশফিক-সৌম্যদের ঝড়ের পর লঙ্কান ক্রিকেটাররা যেন রীতিমতো সাইক্লোন গতিতে ব্যাটিং করে জয় তুলে নিলেন। ১৯৪ রানের টার্গেটে তারা পৌঁছে গেলেন ২০ বল হাতে রেখেই। ৬ উইকেটের এক জয়। টি-২০-তে আশা জাগিয়েও হারের বৃত্তে আটকে গেল বাংলাদেশ। বোলারদের ব্যর্থতায় টি-২০ সিরিজটাও হাতছাড়া হয়ে গেল। অথচ এবার ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশই ছিল ফেবারিট। ত্রি-দেশীয় ক্রিকেট, টেস্ট ও প্রথম টি-২০ হারের পর প্রশ্ন উঠেছে— কোন পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। টাইগাররা কি খেলতে ভুলে গেছে? ম্যাচ শেষের পর মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা ভালো বোলিং করতে পারিনি। তাই হেরে গেছি। যদিও ব্যাটিংয়ে আমাদের ২০ রানের মতো কম হয়েছে। তবে বোলিং পুরা ইউনিট খারাপ করেছে।’ গতকাল অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ২২ গজে গিয়ে রীতিমতো ঝড় তুলেছিলেন সৌম্য সরকার। খেলেছেন ৩২ বলে ৫১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। টি-২০-তে সৌম্যর প্রথম হাফ সেঞ্চুরি এটি। এই মারকুটে ইনিংসটা সৌম্যর জবাবও বটে। কেননা ফর্মহীনতার কারণে তাকে ত্রি-দেশীয় সিরিজে দলে রাখা হয়নি। এমনকি টেস্ট দলেও ছিলেন না। কিন্তু টি-২০-তে সুযোগ পেয়ে তা দারুণভাবে কাজে লাগালেন।

মুশফিকুর রহিমকে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড বলা যায়! কেউ কেউ বলেন মেরুদণ্ড। কিন্তু এসব উপমা কেবল সীমাবদ্ধ ছিল টেস্ট ও ওয়ানডেতে। টি-২০-তে মুশি বড় অসহায়! ৬১ ম্যাচে তার গড় মাত্র ১৬.৮৪! হাফ সেঞ্চুরি ছিল মাত্র একটি। অথচ অনেক দেশের বোলারের গড়ও এর চেয়ে ঢের বেশি। কিন্তু কাল দেখিয়ে দিলেন মুশি। খেললেন ৬৬ রানের হার না মানা এক ইনিংস। ৪৪ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কায় দেখার মতো একটি ইনিংস। মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে মাত্র ৩৭ বলে। গতকাল স্ট্রাইক রেট ছিল ১৫০। অথচ আগের ৬১ ম্যাচে তার স্ট্রাইক রেট ১১৩। এ যেন এক অন্য মুশফিক। শান্তশিষ্ট ছেলেটি কী খেপাটে মেজাজে ব্যাটিং করলেন! তার উদ্যাপনের দৃশ্যও ছিল খেপাটে। হাফ সেঞ্চুরি পূরণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শূন্যে ব্যাট দিয়ে সজোরে আঘাত করতে চাইলেন। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সেলিব্রেশনের ভঙ্গি পাল্টে ফেললেন। রিয়াদের ব্যাটিংকে বলা যায় ‘ক্যাপ্টেনস নক’! মাত্র ৩১ বলে খেলেছেন ৪৩ রান। তবে একটুর জন্য হাফ সেঞ্চুরি মিস করেছেন। আউট হয়েছেন ১৯তম ওভারে। শেষ পর্যন্ত রিয়াদ থাকলে হয়তো তার হাফ সেঞ্চুরিও হতো, বাংলাদেশের স্কোরটাও আরও বড় হতো।

টি-২০-তে গতকাল একসঙ্গে অভিষেক হয়েছে চার তরুণের। এরা হলেন— আফিফ হোসেন, জাকির হোসেন, আরিফুল ইসলাম ও নাজমুল অপু। তামিম ইকবালের ইনজুরিতে ওপেন করার সুযোগ পেয়েছিলেন জাকির। কিন্তু খুব বেশি সতর্ক হয়ে গিয়েই ফাঁদে পড়েন। ৯ বলে করেছেন মাত্র ১০ রান। তবে অন্য প্রান্তে সৌম্য যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, জাকিরের কিছু করার উপায়ও ছিল না। তবে সৌম্যকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন তিনি। তাদের ওপেনিং জুটিতে আসে ৪৯ রান।

সাকিব আল হাসান না থাকায় ওয়ান ডাউনে নেমেছিলেন মুশফিক। আর চারে আফিফ হোসেন। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি এই তরুণ। রানের খাতা খোলার আগেই তাকে সাজঘরে ফিরতে হয়েছে। আসলে আফিফ যেভাবে আউট হয়েছেন সেখানে তার কীইবা করার ছিল! জীবন মেন্ডিসের গুগলিতে বল গিয়ে আঘাত করে আফিফের পেছনের পায়ে। তারপর বল মাটিতে পড়ার আগেই ব্যাটের উল্টো দিকে লেগে ক্যাচ উঠে যায়।

বিপিএলে ঝড় তোলা আরিফুল সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র এক বছর খেলার। তাই সিঙ্গেলের বেশি নিতে পারেননি। অপুর তো ব্যাট করার প্রশ্নই ওঠে না। তবে বল হাতে মোটেও খারাপ করেননি। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। দলের অন্য বোলারদের বোলিং ফিগারের দিকে তাকালে অপুর ‘বোলিং ফিগার’কে ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখতে ইচ্ছা করবে।

সাইফুদ্দিন ২ ওভারে দিয়েছেন ৩৩ রান। রুবেল ৩.৪ ওভারে দিয়েছেন ৫২ রান, মুস্তাফিজ ৩ ওভারে দিয়েছেন ৩২ রান, আফিফ ২ ওভারে ২৬ ও মাহমুদুল্লাহ ২ ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান। বোলারদের হতাশার দিনে উড়ন্ত জয় তুলে নিল সফরকারী শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডে ও টেস্টের পর এবার টি-২০ সিরিজেও বাংলাদেশের জয়ের আশা শেষ হয়ে গেল।

বাংলাদেশ সফরটা হয়ে থাকল শ্রীলঙ্কার পুনর্জাগরণের সফর। একসঙ্গে তিন কিংবদন্তি কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনে ও তিলকারত্নে দিলশানের বিদায়ে খাদে পড়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা। তারা ধীরে ধীরে প্রস্তুতি নিচ্ছিল তরুণদের কাঁধে দায়িত্ব দিয়ে। এই সময়ে তারা ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিরুদ্ধে সিরিজ হেরেছে। অবশেষে বাংলাদেশ সফর দিয়ে লঙ্কানরা যেন তাদের পুরনো শক্তি ফিরে পেল। কিন্তু এই সিরিজ থেকে কী পেল বাংলাদেশ? ত্রি-দেশীয় সিরিজ ও টেস্ট সিরিজে হারের পর টি-২০ সিরিজও হাতছাড়া হয়ে গেল। লঙ্কানদের গ্রাফ যেখানে ঊর্ধ্বমুখী বাংলাদেশ সেখানে উল্টো দিকে হাঁটতে শুরু করেছে। এখনই টাইগারদের দিক পরিবর্তন করে দিতে না পারলে হয়তো সামনে আরও বড় বিপদই অপেক্ষা করছে।

বাংলাদেশ : ১৯৩/৫, ২০ ওভার (সৌম্য ৫১, মুশফিক ৬৬*, মাহমুদুল্লাহ ৪৩)

শ্রীলঙ্কা : ১৯৪/৪, ১৬.৪ ওভার (মেন্ডিস ৫৩, চন্ডিমল ৪২*, পেরেরা ৩৯* )

সর্বশেষ খবর