সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

মর্যাদার লড়াই বলে যত কথা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মর্যাদার লড়াই বলে যত কথা

টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে বেশ নির্ভার আবাহনী ক্রিকেটাররা। মোহামেডানের বিপক্ষে লড়াইয়ের আগে হালকা অনুশীলন সেরে নিচ্ছেন দলের ক্রিকেটাররা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

শচীন টেন্ডুলকার কিংবা মোহাম্মদ আজহার উদ্দিনদের মতো বড় তারকা নন। ভারতের পক্ষে বেশি ম্যাচও খেলেননি। তারপরও ক্রিকেট ইতিহাসে অমর এক নাম রমন লাম্বা। আবাহনীর পক্ষে খেলতে নেমে ব্যাটিংয়ের সময় গুরুতর আহত হন। শেষ পর্যন্ত মারা যান তিনি। আবাহনী-মোহামেডানের ম্যাচ আসলেই মনে পড়ে যায় লাম্বার সেই স্মৃতি। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া এক নাম রমন লাম্বা। নব্বই দশকের শেষ দিকে তিনি ঢাকা আবাহনীর হয়ে খেলেছেন। খেলেছেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষেও। একজন ক্রিকেটার ঘরোয়া মাঠে দর্শক যে টানতে পারেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ লাম্বা। ঝাঁকড়া চুলের সুঠামদেহী লাম্বা এখন স্মৃতি হয়ে যাওয়া এক ক্রিকেটার। তার ছায়া রয়ে গেছে এখনো প্রিমিয়ার ক্রিকেটে। আবাহনী ও মোহামেডান দ্বৈরথের কথা যখনই উঠে আসে, তখন সামনে চলে আসেন রমন লাম্বা। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এর আগেও বহুবার পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে খেলেছে। দুই প্রিয় দলের খেলা দেখতে স্টেডিয়ামে দর্শকের উপস্থিতি ছিল অগুনতি। লাম্বার উপস্থিতি দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই দেখতে দর্শকের ঢল নামত স্টেডিয়ামে। আজ সেসব শুধুই স্মৃতি। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি— সব ফরম্যাটেই আবাহনী-মোহামেডান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ফি বছর। কিন্তু সেই উত্তেজনা, আবেদন, লড়াকু মেজাজ নেই। নেই সেই আবহও। আজ মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়ালটন প্রিমিয়ার ক্রিকেটে ষষ্ঠ রাউন্ডে মুখোমুখি হচ্ছে দুই জনপ্রিয় দল। আগের মতো দর্শক বা উত্তেজনা না থাকলেও মর্যাদার লড়াই বলে ম্যাচটি ঘিরে ঠিকই আলোচনা হচ্ছে। আবাহনী জিতলে যেমন বড় বাধা টপকে যাবে। তেমনি মোহামেডান জিতলে শিরোপা রেসে ভালোভাবে ফিরে আসবে। আশি ও নব্বই দশকে আবাহনী ও মোহামেডান ম্যাচ মানেই পতাকায় পতাকায় সয়লাব। ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে স্পষ্ট বিভাজন। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। উত্তেজনা নেই। এমনকি ক্রিকেটারদের মাঝেও নেই সেই উন্মাদনা। অথচ দুই দশক আগেও দুই দলের পক্ষে খেলতে মুখিয়ে থাকতেন ক্রিকেটাররা। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আমিনুল ইসলাম বুলবুল, খালেদ মাহমুদ সুজনরা দুই ঐতিহ্যবাহী দলে খেলে সমৃদ্ধ করেছেন ক্যারিয়ার। খেলেছেন ভরা গ্যালারিতে। চলতি মৌসুমে আবাহনীতে খেলছেন টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, নাসির হোসেন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতদের মতো তারকা ক্রিকেটার। মোহামেডানে নাম লিখেছেন সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলামরা। এসব তারকা ক্রিকেটারের উপস্থিতিও দুই দলের ম্যাচ ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে আলাদা কোনো উন্মাদনা ছড়াতে পারেনি। দুই জনপ্রিয় দলের ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেটারদের মাঝে কোনো বাড়তি উন্মাদনা নেই, সেটা স্পষ্ট হয়েছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের মন্তব্যে, ‘আমি যখন প্রিমিয়ার ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন মনে হয়েছিল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ অনেক বেশি উত্তেজনার। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে খেলছি প্রিমিয়ার ক্রিকেট, আমার কাছে মনে হয় দুই দলের খেলা এখন ৮-১০টা ম্যাচের মতো। ম্যাচটিকে ঘিরে বাড়তি কোনো উত্তেজনা নেই। আবেদনও নেই আগের মতো। যদি আমরা আগের ম্যাচগুলোর মতো খেলতে পারি, তাহলে ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়ব আমরা। তবে মর্যাদার লড়াই বলে ম্যাচটির আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।’  

এক সময় উপচে পড়া দর্শক হতো দুই দলের ম্যাচে। এখনো আসেন দর্শক। তবে সেটা হাতে গোনা। ম্যাচ দুটি নিয়ে কোনো আকর্ষণ নেই। না থাকার কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছেন না সৈকত, ‘আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ দেখতে এক সময় দর্শক আসত। এখন তা কমে গেছে। দর্শক আসা কমে যাওয়ার কারণ কী, তা জানা নেই। হয়তো নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সবাই। তারা এখন আর আসতে পারে না। আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হচ্ছে। দুটিই বড় নাম। আমরা দর্শক নিয়ে ভাবছি না। আমাদের সব ফোকাস খেলায়।’ পঞ্চম রাউন্ড শেষে এখন পর্যন্ত অপরাজিত দল আবাহনী। টানা পাঁচ ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের সবার ওপরে আবাহনী। তিন জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে পাঁচ দল— শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জ, মোহামেডান, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও প্রাইম দোলেশ্বর। আজ ষষ্ঠ রাউন্ডের ম্যাচে যদি আবাহনী জিতে যায়, তাহলে সবার ওপরে এককভাবে থাকবে আবাহনী। মোহামেডান জিতলে উঠে আসবে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে।

দুই দলের ময়দানি লড়াইটাকে দর্শকের মাঝে পৌঁছে দিতে বিসিবিও নিচ্ছে নানা পন্থা। কিন্তু মাশরাফি, সাকিবরা কি সেই দর্শক, সেই আবহ, উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে পারবেন?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর