রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

যত প্রত্যাশা তত চাপ খেলোয়াড়দের

বিশ্বকাপ নিয়ে ম্যারাডোনার ভাবনা

ক্রীড়া ডেস্ক

যত প্রত্যাশা তত চাপ খেলোয়াড়দের

প্রত্যাশা যত বেশি থাকে খেলোয়াড়রাও তত চাপে থাকে। কথাগুলো বললেন কিংবদন্তি ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা।

১৯৮৬ সালে তারই নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে হারানো শিরোপা উদ্ধার করে। এরপর ১৯৯০ সালে ফাইনালে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ২০১৪ সালে আর্জেন্টিনাকে ঘিরে প্রত্যাশাটা ছিল বেশি। অনেকে বলেই ফেলেছিলেন যে, দলে লিওনেল মেসির মতো খেলোয়াড় রয়েছে তাদের শিরোপা জেতাটা সময়ের ব্যাপারই বলা যায়।

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনাকে হট ফেবারিট দল ধরা হয়েছিল। মেসি ও নেইমারের কারণে ভক্তদের প্রত্যাশা ছিল বেশি। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে নেইমারবিহীন ব্রাজিল বিধ্বস্ত হয়। নিজ দেশে বিশ্বকাপ না জেতার হতাশায় হলুদ জার্সিধারীরা যখন কাঁদছিল তখন আর্জেন্টিনার সমর্থকদের ভাব ছিল মেসিদের আর ঠেকায় কে? ধরেই নিয়েছিল আর্জেন্টিনা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে। ভক্তরা অপেক্ষায় ছিল কখন মেসির হাতে সোনার ট্রফি উঠবে।

ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে তুলনামূলক ভালোই খেলেছিল। সুযোগের পর সুযোগ এসেছে। কিন্তু জালে আর বল জড়ানো যায়নি। উল্টো প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের ভুলে জার্মানরা সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করে বসে। আর এই গোলই এনে দেয় জার্মানির চতুর্থ শিরোপা। আর্জেন্টিনা যেন তীরে এসে তরী ডুবাল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের স্মৃতিচারণ করে ম্যারাডোনা বলেন, অতিরিক্ত প্রত্যাশার কারণে মাঠে মেসিরা চাপে ছিলেন। সারাক্ষণ মাথায় একটাই চিন্তা কাজ করছিল, জিততে না পারলে কি হবে? আসলে এ ধরনের মানসিক চাপে খেলোয়াড়রা তাদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে না। ফাইনালে শুরু থেকেই আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের চিন্তিত মনে হয়েছে। অন্যদিকে জার্মান ছিল রিলাক্সে। ভক্তদের সে রকম প্রত্যাশা ছিল না বলে তারা মাথা ঠাণ্ডা করে খেলতে পেরেছেন।

১৯৮৬ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপের স্মৃতিচারণ করে ম্যারাডোনা বলেন, ‘সেবার আমরা চ্যাম্পিয়ন হলেও অধিনায়ক হিসেবে ততটা চাপে ছিলাম না। কারণ এটা বাস্তব সত্য যে, সেবার আমাদের ঘিরে সমর্থকদের প্রত্যাশা তেমন ছিল না। ভাবনায় ছিল ব্রাজিল, ইতালি বা জার্মানি চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। রিলাক্সে ছিলাম আমরা। যদি চাপে থাকতাম ইংল্যান্ডের কাছেই হেরে যেতাম। ঠাণ্ডা মাথায় খেলে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছি’।

হ্যাঁ, ১৯৯০ সালে প্রথম টের পাই চাপ কাকে বলে। আমার মনে হয় শতকরা ৭০ ভাগ ফুটবলপ্রেমী ধরে নিয়েছিলেন ম্যারাডোনার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা আবার বিশ্বকাপ জিততে যাচ্ছে। দল হিসেবেও আমরা ছিলাম দারুণ শক্তিশালী। অথচ প্রথম ম্যাচেই ক্যামেরুনের কাছে হেরে যায়। তারপরও নকআউট পর্বে ব্রাজিল ও ইতালিকে হারানোর পর আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ফাইনালের আগের দিন আর্জেন্টিনার এক মন্ত্রী টেলিফোন করে বললেন, ম্যারাডোনা আমরা সবাই অপেক্ষায় আছি কখন তোমার হাতে ট্রফি উঠবে।

দেখুন, আর্জেন্টিনাবাসী কতটা নিশ্চিত ছিল আমাদের ঘিরে। চাপে আমরা ছন্দ হারিয়ে ফেললাম। ফাইনালে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল জার্মানরা। এবার রাশিয়া বিশ্বকাপে আমি দেখছি মেসিকে ঘিরে আর্জেন্টিনাবাসী খুব বেশি প্রত্যাশা করছে। মনে হচ্ছে, ছেলেটা একাই বিশ্বকাপ জিতিয়ে দেবে। তারকাদের ঘিরে অবশ্যই আশা থাকবে। কিন্তু তা যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, ওই খেলোয়াড় মানসিক চাপে পড়ে যায়। আর্জেন্টাইনদের বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।’

সর্বশেষ খবর