রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

রেকর্ড গড়ে জয়ে ফিরল টাইগাররা

ক্রীড়া প্রতিবেদক

রেকর্ড গড়ে জয়ে ফিরল টাইগাররা

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ের পর নায়ক মুশফিকুর রহিমকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস। ত্রিদেশীয় ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২১৫ রানের টার্গেটে ৫ উইকেটে জিতে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ —এএফপি

শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের রহস্য হচ্ছে— যারা টস জিতে তারা ম্যাচ জিতে! যারা আগে ব্যাটিং করে তারা ম্যাচে হারে। প্রথম দুই ম্যাচেই এমনটা হয়েছে। প্রথম ম্যাচে লঙ্কানরা টস জিতে পরে ব্যাটিং করে ভারতের দেওয়া ১৭৫ রানের টার্গেটেও পৌঁছেছিল অনায়াসে। দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতীয় একই কাজ করেছে। বাংলাদেশকে পাত্তাই দেয়নি। সে কারণেই কিনা গতকাল টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নিতে ভুল করেননি বাংলাদেশের অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু লঙ্কানরা টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেও তুলোধুনা করে দিয়েছে টাইগার বোলারদের। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১৪ রান সংগ্রহ করে স্বাগতিকরা। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ ম্যাচ জিতবে তা কেউ ভাবতেও পারেনি। সময়টা খারাপ যাচ্ছিল টাইগারদের। একের পর এক ম্যাচ হেরে আত্মবিশ্বাসটা হারিয়ে ফেলেছিল। কাল টাইগারদের দেখা গেল সত্যিকারের টাইগার রূপে। ২১৪ রান টপকিয়ে জয় পেয়ে গেল কিনা মাত্র ৫ উইকেট হারিয়ে। টি-২০তো বটেই ক্রিকেট ইতিহাসে বাংলাদেশের এ জয়কে সবচেয়ে স্মরণীয় জয়ই বলা যায়। কেননা যে শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশে এসে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ করেছিল। তাদের মাঠে ২১৪ টপকিয়ে জয় পাবে তা কি ভাবা যায়। মুশফিক, তামিম ও লিটনের ব্যাটিং তাণ্ডবে স্মরণীয় একটি দিন করে রাখল বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভারে ৭০ রান করেছে স্বাগতিকরা। উইকেট হারিয়েছিল মাত্র একটি। পাওয়ার প্লেতে ওভার প্রতি রান এসেছে ১১.৬৭ করে। লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের তাণ্ডব সবচেয়ে বেশি পোহাতে হয়েছে পেসার তাসকিন আহমেদকে। এই পেসার পাওয়ার প্লেতে করা দুই ওভারেই দিয়েছেন ৩৩ রান।

তাসকিন ইনিংসের প্রথম ওভারে বল হাতে তুলে নিয়েই দিয়েছেন ১৩ রান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে আরও বাজে বোলিং করেছেন এই গতি তারকা। দিয়েছেন ২০ রান। ওই ওভারে দুই দুটি ছক্কা হজম করতে হয়েছে তাসকিনকে। প্রথম ওভারেও তাসকিনের বলে একটি ছক্কা হয়েছে। গতি তারকার বলে লঙ্কান ব্যাটসম্যান রান নিয়েছেন খুবই অনায়াসে। নিজের প্রথম দুই ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানও ভালো করতে পারেননি। কাটার মাস্টার দুই ওভারেই দিয়েছেন ২১ রান। তবে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে একটি উইকেটও তুলে নিয়েছেন। সে তুলনায় পাওয়ার প্লেতে করা দুই ওভারে কিছুটা ভালোই করেছেন রুবেল হোসেন। উইকেট না পেলেও দিয়েছেন ১৪ রান। বাংলাদেশের পেসাররা যখন বোলিং করছিলেন রানের শ্রীলঙ্কার রানের চাকা দ্রুত ঘুরছিল। তবে স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ এসে গতিটা থামিয়ে দেয় কিছুটা। এই স্পিনার তার প্রথম দুই ওভারে দিয়েছেন মাত্র ৮ রান। তবে আরেক স্পিনার নাজমুল অপু রানের গতি আটকাতে পারেননি। তিনি তার প্রথম দুই ওভারে দিয়েছেন ২০ রান। পাহাড় সমান টার্গেট দেওয়ার পরও ম্যাচ হেরে লঙ্কানদের বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশ জয় পাওয়ার পর কোচ হাতুরাসিংহের চোখেমুখে হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছিল।

গতকাল শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা শুরুতেই ছিলেন ভয়ঙ্কর রকম আক্রমণাত্মক। প্রথম ওভার থেকেই বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হয়েছেন। এমন দিনে বাংলাদেশের বোলাররাও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারেননি। একের পর এক শট বল হাফভলী বল করে যেন ব্যাটসম্যানদের আরও সহায়তা করেছেন! এ কারণেই প্রথম ১০ ওভারে রানের পাহাড় গড়ে লঙ্কানরা। মাত্র এক উইকেট হারিয়ে করে ৯৮ রান।

গতকাল লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ছিলেন ওপেনার কুশল মেন্ডিস। মাত্র ২৬ বলে তিনি হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন। অর্ধশত করতে তিনি বাউন্ডারি দুটি এবং চারটি বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছেন। টি-২০ ক্রিকেটে মেন্ডিসের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি এটি। পাহাড় সমান টার্গেট দেওয়ার পরও ম্যাচ হেরে লঙ্কানদের বিমর্ষ দেখাচ্ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশ জয় পাওয়ার পর কোচ হাতুরাসিংহের চোখেমুখে হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছিল।

আরেক ওপেনার গুনাথিলাকাও শুরু করেছিলেন দারুণভাবে। কিন্তু ১৯ বলে ২৬ রান করার পর মুস্তাফিজের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি সরাসরি বোল্ড হয়ে যান। তবে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন আরেক লঙ্কান ব্যাটসম্যান কুশল পেরেরা। তিনি অর্ধশত করেছেন মাত্র ৩৪ বলে।

গতকাল ১২ ওভারে লঙ্কানরা ১৩৫ রান করার পর বল হাতে তুলে নেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ওভারেই সফলতা। এক ওভারে লঙ্কান দুই ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে পাঠিয়ে দেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা : ২১৪/৬ (২০ ওভার) কুশল পেরেরা ৭৪, মেন্ডিজ ৫৭, মুস্তাফিজ ৩/৪৮

বাংলাদেশ : ২১৫/৫ (১৯.৪ ওভার) মুশফিক ৭২, তামিম ৪৭, লিটন ৪৩।

সর্বশেষ খবর