বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

টসই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে!

মেজবাহ্-উল-হক

টসই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেবে!

নিদাহাস ট্রফিতে ফাইনালে উঠতে হলে ভারতকে আজ হারাতেই হবে। ম্যাচের আগে তামিম ইমরুল ও সাব্বিরের চেহারাই বলে দিচ্ছে কতটা নির্ভার হয়ে তারা আজ লড়বেন —ইন্টারনেট

‘বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, অ্যাশেজ জয় করেছে মুশফিক এই এক ম্যাচ জয়ের মধ্য দিয়ে!’ —শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর টুইটারে এমন এক মন্তব্য করেছেন ভারতীয় এক সমর্থক! ২১৫ রানের টার্গেট টপকে পাওয়া এই জয় টি-২০তে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

টি-২০তে লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের তালিকায় এশিয়ার দলগুলোর মধ্যে শীর্ষে এখন বাংলাদেশ। শুধুমাত্র এ কারণেই যে জয়টি মহাগুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের কাছে তা কিন্তু নয়, এই জয় দিয়েই যে টাইগাররা পরাজয়ের বৃত্ত ভেঙেছে! সাকিব আল হাসানের ইনজুরির পর বাংলাদেশ একের পর এক ম্যাচে হেরেই যাচ্ছিল। কিন্তু ওই ম্যাচে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে ছাড়াই বাংলাদেশ তুলে নিয়েছে অসাধারণ এক জয়।

সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে— বাংলাদেশ দল ছন্দে ফিরেছে। টাইগাররা যে মানসিক বাধায় আটকে পড়েছিল তা কেটে গেছে। এক জয়ে পুরো দল এখন অনেক উজ্জীবিত! নিদাহাস ট্রফিতে আজ বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত। প্রথম ম্যাচে এই ভারতের বিরুদ্ধে পাত্তাই পায়নি মাহমুদুল্লাহ বাহিনী। কিন্তু এটা তো সত্য যে প্রথম ম্যাচের ‘বাংলাদেশ’ আর আজকের ম্যাচের ‘বাংলাদেশ’ এর মধ্যে এখন অনেক তফাৎ। একই ক্রিকেটাররা থাকলেও সময়ের ব্যবধানে, অর্থাৎ ওই এক জয়ের কারণে যে বড় একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে তা খুব ভালো করে জানে ভারতও।

নিদাহাস ট্রফিতে এখন সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে ভারত। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটি জিতে ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে রোহিত শর্মারা। তারপরও নিশ্চিত নয়। দুই ম্যাচে বাংলাদেশের জয় একটি। আজ জিততে পারলে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। সেক্ষেত্রে খানিকটা টেনশনে পড়ে যাবে ভারত!

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই নিদাহাস ট্রফি জমিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচের আগে নিশ্চিত করা বলার উপায় নেই কোন দুই দল ফাইনালে খেলবে। তবে আজ জিতে গেলে ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে ভারতের। হারলেও সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের সামনে। তবে নেটরানে অনেক পিছিয়ে রয়েছে টাইগাররা। তাই আজকের ম্যাচে জয়টা খুবই জরুরি।

আগের ম্যাচটি বাংলাদেশকে উজ্জীবিত করেছে। মুশফিকের ৩৫ বলে ৭২ রানের ইনিংসটি তো বাংলাদেশের টি-২০র বড় বিজ্ঞাপন হয়ে গেছে। লিটন দাসের ১৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংসটিও ভোলার মতো নয়। বাংলাদেশ শক্ত ভীতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল ওই ইনিংসটি। সাকিবের জায়গায় দলে সুযোগ পেয়েছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ম্যাচে হঠাৎ সুযোগ পেয়ে যান ওপেনিংয়ে। পাহাড়সম টার্গেট দেখে টিম ম্যানেজমেন্ট সৌম্যর জায়গায় লিটনকে নামিয়ে দেন। এই সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন দিনাজপুরের এই ক্রিকেটার।

তামিম ইকবালের ৪৭ রানের ইনিংসটিও ছিল অসাধারণ। লিটন দাসের সঙ্গে তার ওপেনিং জুটিটা দারুণ জমে উঠেছিল। ওপেনিং জুটির দুর্দান্ত শুরুর কারণেই ২১৫ রানের পাহাড় টপকানো সম্ভব হয়েছিল। ভারতের বিরুদ্ধে বড় ইনিংস করতে হলে আজও তাদেরকে ব্যাটে ক্যারিশমা দেখাতে হবে।

বাংলাদেশ বেশ কিছুদিন পরাজয়ের বৃত্তে আটকে ছিল ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়। শেষ ম্যাচে ব্যাটসম্যানরাই সেই বৃত্ত ভেঙেছে। কিন্তু বোলাররা দিয়েছেন ব্যর্থতার পরিচয়। স্পিনাররা খানিকটা নজর কাড়তে সমর্থ হলেও পেসাররা একের পর এক শর্ট বল করেছেন। তবে ভারতের বিরুদ্ধে একই ভুল করলে ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে যাবে।

এ কথা সত্য যে শ্রীলঙ্কার উইকেটে পেসারদের জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। তারপরও তিন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, রুবেল হোসেন ও তাসকিনের ওপর ভরসা রাখছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি বলেন, ‘আমি প্রত্যেক বোলারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছি। সবারই নিজের টার্গেট নিয়ে ভাবছে। কিভাবে খেলতে লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব তা নিয়ে তারা ভাবছে। নিজেদের সেরাটা দিতে পারলে টি-২০তে বাংলাদেশের আলাদা ব্র্যান্ড তৈরি হবে।’

টি-২০ ক্রিকেটে ভালো করার রেসিপি পেয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। আগের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তা প্রয়োগ করেও দেখিয়েছেন। মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের ক্রিকেটারদের স্কিল যথেষ্ট রয়েছে। তবে টি-২০ ক্রিকেটে ভালো করতে হলে আরেকটুখানি স্মার্ট হতে হবে এবং হিসাব-নিকাশ করে ঝুঁকি নিতে হবে।’

নিদাহাস ট্রফিতে প্রথম চার ম্যাচেই যে দল টস জিতেছে তারা প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ম্যাচও জিতেছে। প্রথমে ব্যাট করে কোনো দলই জিততে পারেনি। উদ্বোধনী ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কাকে ১৭৫ রানের টার্গেট নিয়েও জিততে পারেনি ভারত। তবে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটি তো ইতিহাসই হয়ে থাকলো। এছাড়া বাকি দুই ম্যাচেও ছিল একই চিত্র—টস জয় তো ম্যাচ জয়! তাই আজও টসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তবে টসে হারলেও মানসিকভাবে ম্যাচের আগে হারার কোনো কারণ নেই। ব্যাটসম্যান এবং বোলাররা দায়িত্বশীল হলে প্রথমে ব্যাট করেও জেতা সম্ভব! তাই টস ভাগ্যের ওপর ভরসা না করে নিজের সামর্থ্যের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখাই কী ভালো নয়!

সর্বশেষ খবর